শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনবর্ষীয়ান রাজনীতিক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বর্ষীয়ান রাজনীতিক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্ষীয়ান রাজনীতিক, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে আজ শনিবার মরহুমের গ্রামের বাড়ি আনোয়ারার হাইলধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ফাতেহা, মিলাদ, আলোচনা সভা ও মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর এবারই বড় পরিসরে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে আনোয়ারা–কর্ণফুলীতে শুরু হয়েছে মৃত্যুবার্ষিকীর নানা আনুষ্ঠানিকতা। আজ সকালে হাইলধর বশীরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া আয়োজন করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মেজবান। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান স্মরণসভা ও মেজবানের প্রস্তুতি দেখতে গতকাল বিকালে হাইলধরে মরহুমের গ্রামের বাড়ি ঘুরে এসেছেন।

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, স্মরণসভা ও মেজবানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। শনিবার সকালে হাইলধরে কোরআনখানি, ফাতেহা ও মিলাদের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু রাজনীতিক, শিল্পোদ্যোক্তা, সংগঠকসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।

১৯৪৫ সালে আনোয়ারার হাইলধর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তার পিতার নাম নুরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি ছিলেন আইনজীবী এবং জমিদার। তাঁর মাতার নাম খোরশেদা বেগম। বোয়ালখালী উপজেলার শিল্পপতি মরহুম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দ্বিতীয় কন্যা নুর নাহার জামানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। আখতারুজ্জামান ১৯৫৮ সালে পটিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ওই বছরই ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে পড়ার সময় তিনি বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হন। পরে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে পড়াশোনা করেন। ওখান থেকে এসোসিয়েট ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ব্যবসা শুরু করেন।

১৯৫৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন বাবু। ১৯৬৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন। ৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তাঁর পাথরঘাটার জুপিটার হাউজ থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর ওখান থেকে সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে যান এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। প্রথম লন্ডনে যান। সেখান থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে আমেরিকায় যান।

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) হিসেবে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। তিনি ৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম স্বাক্ষরকারী। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

স্বাধীনতার পর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে দলের পুনরুজ্জীবন ও পুনর্গঠনে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেন।

কেবল রাজনীতিতে নয়, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু একজন সফল ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যান আম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ভ্যানগার্ড স্টিল মিল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্ট ক্রয় করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম দু দশকে জামান শিল্পগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন করেন। তিনি বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল ক্রয় করে সেটিকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকিং সেক্টর প্রতিষ্ঠায় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রাইভেট ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি দুই দফায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৮৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি মর্যাদাপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ব্যক্তি জীবনে ৩ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বর্তমানে সংসদ সদস্য ও ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। মেজ ছেলে আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ইউসিবিএলের ইসি চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ