রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রাম-১২ আসনে আবারও জিততে চায় আ'লীগ, উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

চট্টগ্রাম-১২ আসনে আবারও জিততে চায় আ’লীগ, উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

candidate patiyaচট্টগ্রাম-১২ আসনে (পটিয়া) আগামী নির্বাচনেও নৌকার জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে জোরালো প্রস্তুতি স্থানীয় আওয়ামী লীগে। মরিয়া বিএনপিও- টানা দুই নির্বাচনে হাতছাড়া এই আসনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে উদগ্রীব নেতা-কর্মীরা। ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী আগামীবারও দলের সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎরপতা চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা বেগম। বর্তমান এমপির আমলে দলের স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দলের বিষয়টি সামনে এনে মনোনয়ন লাভের পরিকল্পনা রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। মনোনয়ন ঘিরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি অস্বস্তিতে রয়েছে বিএনপি। দু’বার নির্বাচিত সাবেক এমপি গাজী মুহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল মনোনয়নকেন্দ্রিক শৃগ্ধখলাভঙ্গের কারণে
সাময়িকভাবে বহিস্কৃতও হয়েছেন। তবুও তিনি আগামী নির্বাচনে আবারও ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান। তাকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি এনামুল হক এনাম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া ।

বড় দুই দলের পাশাপাশি আগাম নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে অন্যান্য দলেও। ৯৫ দশমিক ৫১ বর্গমাইল আয়তনের পটিয়ায় আগামীবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে চান দলের শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম। জাতীয় পার্টিতে তিনি ছাড়াও মনোয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন পটিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামসুল আলম মাস্টার। তিনি এমপি পদে এর আগে দু’বার নির্বাচনও করেছেন। এ ছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উপদেষ্টা ড. বেলাল নুর আজিজী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ আলমও আছেন মনোনয়ন আলোচনায়।

চট্টগ্রাম শহর লাগোয়া উপজেলা পটিয়ায় গড়ে উঠছে একের পর এক শিল্পকারখানা। উপজেলায় ৫০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা থাকলেও ৫১০ কিলোমিটার রাস্তা এখনও কাঁচা। একটি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১২০টি মৌজা ও ১২৪টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ উপজেলার শিক্ষার হার মাত্র ৫৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। উপজেলায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও তিন লাখ ৪৪ হাজার ৭৮৩ জনসংখ্যার তুলনায় সেটি অপ্রতুল বলে মনে করেন স্থানীয় অধিবাসীরা। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলছেন, তারা নির্বাচিত হলে পাল্টে যাবে পটিয়ার এ চিত্র।

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী জানান, তার দুই মেয়াদে এখন পর্যন্ত পটিয়ায় এক হাজার কোটি টাকার উম্নয়ন কাজ হয়েছে। আরও ৩০০ কোটি টাকার উম্নয়ন কাজ চলছে। পটিয়া আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই বলে তিনি দাবি করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগও তার নেতৃত্বে আস্থাশীল বলে জানান তিনি। তবে তার ধারণা, নির্বাচন ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সব প্রতিবন্ধকতা পেরোনোর প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, নেত্রী আমার ওপর আবার আস্থা রাখলে উপহার দেবো হ্যাটট্রিক বিজয়।

সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির সম্প্রতি দুর্গাপূজায় প্রায় ৬০টি মন্ডপে অর্থ অনুদান ও বস্ত্র বিতরণ করেন। বন্যাদুর্গত ও অঘ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝেও খাদ্য ও অর্থ অনুদান দিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার অভিযোগ, ‘পটিয়ায় উম্নয়ন হচ্ছে সত্য, তবে দলের নেতা-কর্মীরা নিপীড়িত-নির্যাতিত। তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। নেতা-কর্মীদের শক্তিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। এর ফলে পরিবর্তনের একটি ধারা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামীবার দলের মনোনয়ন পেলে অবশ্যই উম্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারব।

সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী বদিউল আলমের দাবি, জনগণ তাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, পটিয়ায় বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে এবার নতুন কিছু ভাববেন দলীয় সভানেত্রী। নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমি মাথা পেতে নেব। মনোনয়নপ্রত্যাশী চেমন আরা বেগম বলেন, ‘বিগত সময়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি পদে থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে। দলের মহিলা সংগঠনের সভাপতি ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে একজন কর্মী হিসেবে সংগঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এখানে বিজয়ী হয় ধানের শীষ। যোগ্য প্রার্থী পেলে আসনটি আবারও জিতে নেওয়া যাবে- এমন ধারণা থেকে বিএনপির একটি পক্ষ সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েলকে আগামীবার ভোটের মাঠে দেখতে চাইছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জুয়েল বলেন, পটিয়ায় উম্নয়ন যা হয়েছে বিএনপির আমলেই। মনোনয়ন পেলে পটিয়ার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে আবার নির্বাচিত করবে- এমন বিশ্বাস আছে আমার।’ তবে বিএনপির আরেকটি বড় অংশের অভিযোগ, এমপি নির্বাচিত হয়ে আগেরবার গাজী জুয়েল এলাকার চেয়ে দেশের বাইরে সময় কাটিয়েছেন। সম্প্রতি দলীয় বিশৃগ্ধখলা ভঙ্গের দায়ে তাকে সাময়িকভাবে দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে। বহিস্কৃত কোনো নেতাকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হলে ভোটের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করেন তারা। মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত। এবার আর প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করবে না বিএনপি। অতীতে এমন ভুল করেছে বলে পটিয়ার নিশ্চিত আসনটি হাতছাড়া হয়েছে আমাদের।’ গত আট বছর মামলা-জেল সামলে এবং গুলিবিদ্ধ হয়েও নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এসব ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এনামুল হক এনাম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। ব্যবসায়ীদের সমর্থন তার জন্য বিশেষ সুবিধা হিসেবে কাজ করবে।

এদিকে দলের সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচিতে নেমে মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়াও। অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনিও। ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছি। দুর্দিনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলাম। দল থেকে মনোনয়ন পেলে বিজয় উপহার দেবো আমি। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক নেতা গাজী মুহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও সক্রিয় ছিলাম। তাই বয়সে নবীন হলেও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী সম্ভাব্য এই প্রার্থী।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামসুল আলম মাস্টার বলেন, ‘১৯৯৬ সালে নির্বাচন করে ৪৫ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। এখন জনসমর্থন আরও বেড়েছে। তাই মনোনয়ন চাইব। পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে দু’জনের নাম পাঠানো হয়েছে। একজন সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আরেকজন আমি।’ অন্যদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উপদেষ্টা ড. বেলাল নুর আজিজী বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব।’ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘পটিয়া বিপ্লবীদের চারণভূমি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পটিয়ার রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আগামী নির্বাচনেও অংশ নেব।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ