মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়ব্যাংকের ৯শ' কোটি টাকা পরিশোধ করছে না এমইবি গ্রুপ

ব্যাংকের ৯শ’ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না এমইবি গ্রুপ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত এমইবি গ্রুপ (মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স) বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না। ব্যাংক ঋনের টাকায় এই শিল্পগ্রুপের মালিক পরিবারের সদস্যরা ব্যবসা সম্প্রসারনের পরিবর্তে  ঋনের টাকায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিশ্বের বিভিন্নস্থানে বিলাসী জীবন যাপন করলেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধে আগ্রহী না হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থঋন আদালতে একাধিক মামলা করেছে বিভিন্ন ব্যাংক। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৫০ কোটি টাকা ঋন পরিশোধ না করায় সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এমইবি গ্রুপের ১০০ শতক জমি নিলামে তুলে। কিন্তু নিলামে এই জমির ক্রেতা পাওয়া না যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমিটি নিজেদের নামে নামজারি করে নেয়।

জানা যায়, এমইবি গ্রুপ চট্টগ্রামের ইলিয়াস ব্রাদার্স নামের একটি বনেদি ব্যবসায়ী গ্রুপ। এই গ্রুপটি ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নানা অব্যবস্থাপনার কারনে এই গ্রুপটি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসছিলো। লোকসান ঠেকাতে ব্যবসা সম্প্রসারনে শিল্পগ্রুপটি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা ঋন গ্রহন করলেও যথা নিয়মে ঋন পরিশোধ না করায় এমইবি গ্রুপের মালিকরা বড় ঋন খেলাপীতে পরিণত হয়। গত ২ বছরে এমইবি গ্রুপের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের অর্থঋন আদালতে বিভিন্ন ব্যাংক একাধিক মামলা দায়েরের পাশাপাশি চেক প্রতারণার দায়েও একাধিক মামলা হয়। সর্বশেষ গত জানুয়ারী মাসে ন্যাশনাল ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার ১৫০ কোটি টাকা ঋন পরিশোধ না করায় এমইবি গ্রুপের মালিকানাধীন পটিয়া উপজেলার ১০০ শতক জমি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানান, এমইবি গ্রুপের মালিকানাধীন মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড সুপার অয়েল রিফাইনারির নামে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। গ্রুপটি ক্রমাগত লোকসানের কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে গ্রুপটির কাছে ব্যাংকের সুদে-আসলে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত পাওনা হয় ২১৬ কোটি ২২ লাখ ২৮ হাজার ৬২২ টাকা ৮৪ পয়সা। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও গ্রুপটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এই কারণে ব্যাংকের কাছে জামানত থাকা ১০০ শতক বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ৩৩ (৫) ধারা মোতাবেক সনদপ্রাপ্ত হয়ে এ জমিগুলো নিলামে বিক্রয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করে ন্যাশনাল ব্যাংক। গত ২৫ জানুয়ারিতে নিলাম অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আগ্রহী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপস্থিত না থাকায় ব্যাংক সম্পদটি বিক্রয় করতে পারেনি। ফলে ব্যাংক এ বন্ধকি সম্পদটি নিজ নামে নিবন্ধন করে নেয়। এমইবি গ্রুপের মালিকানা ও জমির মালিক হলেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতা মোহাম্মদ শামসুল আলম, নুরুল আবছার, কামরুন নাহার বেগম, তাহমিনা বেগম, নুরুল আলম এবং মের্সাস এমইবি শিট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এ ব্যাপারে এমইবি গ্রুপের কয়েকজন পরিচালকের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্ঠা করেও তারা কেউ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হন নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমইবি গ্রুপের একজন পরিচালক বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান একসময় ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে নিত্যপণ্য আমদানি করে বিপুল পরিমাণ লোকসান দিতে হয়েছে আমাদের। যে কারণে বিভিন্ন ব্যাংকে অনেক টাকার ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে তাদের দেনাগুলো নিয়মিত করে ফেলতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ