শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েচট্টগ্রাম বিভাগপ্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের পাড়ি দিতে হয় নাফ

প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের পাড়ি দিতে হয় নাফ

কক্সবাজারের টেকনাফের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপে যেতে হয় নৌকায়। বাঁধ ভেঙে খাল হয়েছে এখানে। স্থানীয় বাসিন্দারা খালটির নাম দিয়েছেন বড়দেরা খাল। খাল পেরিয়ে শাহপরীতে পৌঁছাতে সময় লাগল ২০ মিনিটের মতো। দ্বীপের তীরেই দেখা মিলল শতাধিক রোহিঙ্গার। নৌকার জন্য অপেক্ষা করছে তারা। বুধবার শাহপরীর দ্বীপে এসব দৃশ্য দেখা যায়। যে প্রান্তে নৌকার জন্য অপেক্ষা করছেন রোহিঙ্গারা, ঠিক তার অপর প্রান্তে জেটি ঘাট, যা নাফ নদের তীরে। ওই নাফ নদের ওপারেই মিয়ানমার। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের পাড়ি দিতে হয় নাফ নদ।

জেটিঘাটে গিয়ে ভিড় দেখা যায়। নাফ নদের তীরেই বসেছে গরুর হাট। বেশিরভাগ গরু মাঝারি আকৃতির। হাটে ক্রেতাও আছে, বিক্রেতাও আছে। জেটিতে দাঁড়িয়ে নাফ নদ দেখা হলো। নদের ঠিক ওপারে, অর্থাৎ দক্ষিণ পাশে মিয়ানমার। দেখা যাচ্ছে পাহাড়। আর দেখা যাচ্ছে ধোঁয়া। একাধিক স্থান থেকে ধোঁয়া উড়ছে। জেটিতে দাঁড়ানো একাধিক স্থানীয় ও রোহিঙ্গা নাগরিক জানালেন, এগুলো ঘর পুড়িয়ে দেওয়া আগুনের ধোঁয়া। মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিনভর এসব গ্রামে আগুন দিচ্ছে বলে জানালেন তাঁরা।

মুহাম্মদ আয়াজ উদ্দিন স্থানীয় বাসিন্দা। শাহপরীর দ্বীপে দোকান আছে তাঁর। তিনি জানান, নদের ওপারে, অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি চর আছে। চরটি মিয়ানমারে। এর নাম নাখনদিয়া। আয়াজ বলেন, যেসব রোহিঙ্গা নদী পার হয়ে আসতে পেরেছে, তাদের কাছে আমরা জানতে পেরেছি প্রায় দুই লাখের মতো রোহিঙ্গা ওই চরে অবস্থান করছে। সেখানে তারা নৌকার জন্য অপেক্ষা করছে। যারা টাকা দিতে পারে, তারাই নৌকায় উঠতে পারে। আয়াজ আরো জানান, দুদিন ধরে সেখান থেকে দিনের বেলায় কম নৌকা আসছে। কেন, তা তিনি জানেন না। তবে গভীর রাতে নৌকা আসছে রোহিঙ্গা নিয়ে।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ ধরনের একটি নৌকা ডুবে যায়। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আটটি লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব লাশ জেটির কাছে স্রোতে ভাসছিল। দুপুরের দিকে জেটিতে বসেছিলেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) ফজলুল হক। তিনি জানালেন, কিছুক্ষণ আগে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নদের তীরে গেলে দেখা গেল, এক নারী মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। নারীর শরীরে বোরকা আছে। কানের দুলও চোখে পড়ল। ফজলুল হক কাছের একটি মসজিদের লোকজনকে ডাক দিলেন। লাশ বহন করার জন্য খাটিয়া নিয়ে আসা হলো। স্থানীয় বাসিন্দারা সাবধানে ওই নারীর লাশ খাটিয়ায় তুলে নেন। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় অন্যদিকে।

ফজলুল হক বলেন, গতকাল রাতেই নৌকাটি ডুবে যায় বলে আমাদের ধারণা। যারা সাঁতার পেরেছে, তারা জীবন নিয়ে ডাঙায় উঠতে পেরেছে। অন্যরা নিখোঁজ ছিল। ভোর থেকে লাশ উদ্ধার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত (দুপুর ১২টা) তিন শিশুসহ আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ফজলুল হকের তত্ত্বাবধানেই এসব লাশের দাফন সম্পন্ন হয় স্থানীয় কবরস্থানে। তিনি জানান, গত ২৪ আগস্ট থেকে তিনি এসব পরিস্থিতি দেখছেন আর লাশ দাফনের কাজ করাচ্ছেন। এ এলাকায় নৌকা প্রায়ই ডুবে যায়। আর লাশ ভেসে আসে জেটির কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি। আমার তো ঘরে বসে থাকলে হয় না। রাতে ঘুমাতে পারছি না। প্রতি রাতে ভাবি, জানি না আগামীকাল কী দেখতে হবে।

নৌকা ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় এক বাসিন্দা মোহাম্মদ কাশেম বলেন, ‘শক্ত-সামর্থ্য নৌকায় রোহিঙ্গারা আসছে না। ওদের আনা নৌকাগুলো দুর্বল। আর এসব নৌকায় নেওয়া হয় মাত্রাতিরিক্ত মানুষ। এসব নৌকা মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া গরুসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু এত মানুষ পারাপারের জন্য এসব নৌকা না। প্রচণ্ড বাতাস আর স্রোতে এসব নৌকা উল্টে যায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ