শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদটপদেশব্যাপী গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে

দেশব্যাপী গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গুম, অপহরণ, অবৈধভাবে আটক, বিচারবহির্ভূত হত্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, আদিম অমানবিকতা বর্তমানে সারা দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। নিজের বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘দুঃশাসনের বিষাক্ত ছোবলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা, লেখক, কবি-সাহিত্যিক, মানবাধিকার কর্মী, শ্রমিক নেতা, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, অদৃশ্য হয়ে গেছে অন্ধকারের অতলে অথবা গোপন স্থানে বছরের পর বছর আটকিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কিছুদিন পর কারো কারো লাশ মিলেছে খালে-বিলে-নালা-ডোবায় কিংবা রাস্তার ধারে। আর অন্যদের ভাগ্যে কী জুটেছে, সেটি এখনও অজানা।

কবি ও লেখক ফরহাদ মজহারের বিষয়ে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘সম্প্রতি রাষ্ট্রের রক্ততৃষ্ণা মেটাতে শিকার হচ্ছিলেন দেশের বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। এ ঘটনায় এখন গোটা জাতি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। এই ট্রমা শুধু ফরহাদ মজহারকেই আক্রান্ত করেনি, সারা দেশবাসীকেই করেছে। ফরহাদ মজহার অপহরণকে নিছক সন্ত্রাসীদের অপহরণ বলে চালানোর অপচেষ্টা করে সরকার ও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেসব অসংগতিপূর্ণ কথাবার্তা বলেছে, তা নাটকের যবনিকার অন্তরালে প্রকৃত ঘটনা ক্রমাগতভাবে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর কথাবার্তা দেশবাসীকে চরমভাবে ব্যথিত করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। উদাহরণ হিসেবে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে থাকা ব্যাগের রং কখনো কালো, কখনো সাদা বলে উল্লেখের কথা বলেন তিনি।

সেইসাথে এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ‘আমরা ফরহাদ মজহারের কোনো দোষ খুঁজে পাইনি।’ এটিই সত্য কথা। আজও প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে খবর বেরিয়েছে, ফরহাদ মজহারকে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে মারধর করা হয়েছে।

‘ফরহাদ মজহারের মতো একজন ব্যক্তির যদি এই দশা হয়, তাহলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা কত অসহায়?’ এমন প্রশ্নও রাখেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী একের পর এক এ ধরনের গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ভোটারবিহীন সরকারের আক্রোশের শিকার কে হন কিংবা কার ভাগ্যে কখন কী ঘটে, সে বিষয়ে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন জীবনযাপন করছে দেশের মানুষ। কারণ সরকারের সমালোচনা করলেই নিখোঁজ বা গুমের শিকার হতে হচ্ছে যে কাউকে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, সংস্থাটি জানিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের শত শত মানুষকে অবৈধভাবে আটক করেছে এবং গোপন স্থানে আটকে রেখেছে। যাদের অধিকাংশই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী।

রিজভী বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার নিখোঁজের জন্য বাংলাদেশে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে বেশ কিছুদিন পর ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং অন্যরা এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। এই প্রাণবিনাশী অপতৎপরতার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে। এই সমস্ত রক্তহিম করা গুম, খুন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকা, নিরাপদে জীবন-যাপন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে ওই আন্তর্জাতিক তদন্ত ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান বন্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন বন্যায় ভাসছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টি ও উজানের পানির ঢলে প্লাবিত। এলাকার মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। প্রধানমন্ত্রী যদিও গতকাল বলেছেন, বানভাসিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। বাস্তবে বানভাসি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। কোনো কোনো এলাকায় খাদ্য, পানি বা চাল না দিয়ে খাওয়ার অনুপযোগী সামান্য কিছু গম দিচ্ছে, যে গম প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শুকোতে কিংবা গম ভেঙে খেতেও পারছে না। এটি কি বানভাসি অসহায় মানুষকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে? আসলে লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রীয় খাদ্যভাণ্ডারগুলো এখন যে শূন্য, সেটি প্রমাণিত হচ্ছে।

দেশে ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি আবার দরজায় নাড়া দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। এ সময় তিনি বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে অসহায় ক্ষুধাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ