শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনহাসপাতালে কাতরাচ্ছে কিশোর বাবুল

হাসপাতালে কাতরাচ্ছে কিশোর বাবুল

 চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছেনা মা, আমাকে বাসায় নিয়ে যাও। আমি হরতালের সময় আর কোনদিন বাসা থেকে বের হবনা। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে কথাগুলো বলছিল নগরীর মিয়াখান নগর এলাকার ইউসেপ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বাবুল। পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিংয়েরও কাজ শেখে সে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে জামায়াতশিবিরের হরতাল চলাকালে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন মিয়াখান নগর এলাকায় শিবির ক্যাডারদের ছোঁড়া হাতবোমায় গুরুতর আহত হয় বাবুল। আহত বাবুলকে ভর্তি করানো হয় চমেক হাসপাতালে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, বাবুলের বাম হাতে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে প্রচুর রক্ত দিতে হবে। স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে আছে কিনা তা জানার জন্য অস্ত্রোপচার করতে হবে।

মাত্র ১১ বছর বয়সের বাবুল নগরীর কোরবানীগঞ্জ এলাকার একটি গ্যারেজে বাবার বদলি হিসাবে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজও করে আসছিল গত কয়েকদিন ধরে। বাবুলের বাবা আব্দুল কুদ্দুস গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভাত খাওয়ার জন্য গ্যারেজ থেকে বের হয় বাবুল। তার আগে মা হোসনে আরা বেগমকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেয়, সে ভাত খেতে আসছে। গ্যারেজ থেকে বের হয়ে সে পায়ে হেঁটে তক্তারপুলের বাসায় ফিরছিল। সময় তখন প্রায় ১টা। মিয়াখান নগর ব্রিজ পার হওয়ার পর বিকট শব্দ। শব্দের সাথে সাথে তার বাম হাতের উপর কি যেন একটা এসে পড়ল। এর পর পরই সে রাস্তায় পড়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে রাস্তার একপাশে এনে মাথায় পানি দেয়। কিছুক্ষন পর তার জ্ঞান ফিরে। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তখন। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। বেলা আড়াইটায় তাকে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। দুপুর বেলা তার আর ভাত খাওয়া হয়নি। ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। ততক্ষণে ভাত নিয়ে ছেলের অপেক্ষায় থাকা মায়ের কাছে খবর পৌঁছে। ছুটে যান হাসপাতালে। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে তখন কাতরাচ্ছিল বাবুল।

চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের মেঝেতে শুয়ে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবুল। তার বিছানার কাছে বসে আছেন তার মা হোসনে আরা বেগম।

কথা হয় বাবুলের সাথে। সে জানায়, হরতাল ডাকলে আর কোনদিন বাসা থেকে বের হবনা। এই প্রথম বোমা মারা দেখেছি। কথাগুলো বলতে অনেকটা কষ্ট হচ্ছিল বাবুলের। রক্তক্ষরনে শরীর অনেকটা দুর্বল। চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছিল। ততক্ষণে বাবুলের মা হোসনে আরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর বলতে থাকেন, আমার ছেলে দুপুরে ভাত খায়নি। কখন সে বাসায় ফিরে ভাত খাবে।

হোসনে আরা জানান, বাবুলের বাবা কোরবাণীগঞ্জ এলাকায় তৈয়ব সওদাগরের গ্যারেজে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করে। বাবার শরীর অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন ধরে ছেলেকে তিনি পাঠান গ্যারেজ পাহারা দিতে। বাসা আর গ্যারেজের ব্যবধান বেশি নয়, পায়ে,হেঁটে যাওয়া যায়। বাসা মিয়াখান নগরের তক্তারপুলে। চিকিৎসক মো.সাহাবউদ্দিন জানান, সুস্থ হতে সময় লাগবে।

বাকলিয়া থানার ওসি মো. মহসিনের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়। তিনি বলেন, হরতালকারীদের ছোঁড়া বোমায় বাবুল আহত হয়েছে। এই ঘটনায় একটি মামলা হবে। জড়িত থাকা কয়েকজনের নাম আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ