রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ সিলেটে গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বিশেষ দল আজ বৃহস্পতিবার রাতে জালালাবাদের একটি বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি–গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান এ কথা জানান।
মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সিলেটের জালালাবাদের একটি বাড়িতে শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ লুকিয়ে ছিলেন। রাত ৯টায় পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দল তাঁদের গ্রেপ্তার করে। শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে নেওয়া হয়। শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। এ সময় তাঁদের সঙ্গে শাহরিয়ার নামের এক বন্ধু ছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। হোটেলে যাওয়ার পর সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে তাঁরা আরও দুই তরুণীকে দেখেন। সেখানে তাঁরা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। পরিবেশ ভালো না লাগায় শাহরিয়ারসহ দুই তরুণী চলে আসতে চেয়েছিলেন। তখন আসামিরা শাহরিয়ারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং শাহরিয়ারকে মারধর করেন। এরপর দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে একটি কক্ষে নিয়ে যান। ধর্ষণ করার সময় শাফাত গাড়িচালককে ভিডিও চিত্র ধারণ করতে বলেন। আর নাঈম আশরাফ মারধর করেন। তাঁরা এ ঘটনা জানিয়ে দেবেন বলে জানান। এরপর আসামি শাফাত তাঁর দেহরক্ষীকে ওই দুই তরুণীর বাসায় পাঠান তথ্য সংগ্রহের জন্য। তাঁরা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ওই দুই শিক্ষার্থী থানায় মামলা করেন।
আসামিরা ভিডিও চিত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তাঁদের কথামতো না চললে কিংবা ২৮ মার্চের ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে থানা-পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। আসামি ও আসামির পরিবার ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার ৪০ দিন পর ভুক্তভোগী ওই দুই ছাত্রী গত ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার এক আসামি শাফাত আহমেদ, যাঁর বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। অন্য আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তাঁর দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন তাঁর খাসকামরায় বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ওই দুই শিক্ষার্থীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রী ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।