মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
প্রচ্ছদটপমুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগী বিপুলের যে কোনো মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকর

মুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগী বিপুলের যে কোনো মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকর

হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তাঁর সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের প্রাণভিক্ষার আবেদনের ‘রিজেক্ট কপি’(নাকচের চিঠি) কারাগারে পৌঁছেছে। বিধি মোতাবেক দুজনের ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এখন সরকার স্থান ও দিনক্ষণ ঠিক করে যে কোনো মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবে কারা কর্তৃপক্ষকে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মিজানুর রহমান জানান, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুল রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর প্রাণভিক্ষা চেয়ে গত ২৭ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। পরে তা স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। সম্প্রতি ওই আবেদন নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। তাঁদের আবেদনের রিজেক্ট কপি সোমবার কারাগারে পৌঁছেছে। এখন বিধি মোতাবেক তাঁদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার স্থান ও দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে যেকোনো মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে তাদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। জল্লাদ নির্বাচন করে ফাঁসির মঞ্চ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। কারাগার এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে ফাঁসি কার্যকরের আগে স্বজনরা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে।

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত  মুফতি হান্নান ও বিপুল গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপন সিলেট জেলা কারাগারে ফাঁসির সেলে বন্দি রয়েছেন। কারা সূত্র জানায়, এদের মধ্যে প্রথম দুজনের কাশিমপুরে এবং অন্যজনের সিলেটে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর ওই প্রাণভিক্ষার আবেদন করার দিন থেকে ২২ দিনের কম নয় এবং ২৮ দিনের বেশি নয় এমন সময়ের মধ্যে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার বিধান রয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ অর্ধ শতাধিক আহত হন। মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। প্রায় সাত বছর পর গত বছরের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন। আপিলের শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তিন আসামির সর্বোচ্চ রায় বহাল রাখে। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা রিভিউ করেন। পরে ১৯ মার্চ দেওয়া রিভিউ খারিজের রায় গত ২১ মার্চ প্রকাশিত হয়। রিভিউ খারিজের ২১ মার্চ রায়ের কপি রাত পৌনে ১২টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। পরের দিন তা মুফতি হান্নান ও বিপুলকে পড়ে শুনানো হয়। এ ছাড়া ওইদিন সিলেট কারাগার থেকে আসা মৃত্যু পরোয়ানাটিও ওই দিন রাতে তাঁদের পড়ে শুনোনো হয়েছে।

এ ছাড়া রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিচারিক আদালত। ওই মামলায় তাঁর আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। এই হুজি নেতার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। ২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি। গত ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মুফতি হান্নান আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে আহত হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হরকাতুল জিহাদে যোগদান করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ