রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদটপতারকাদের ঈদ

তারকাদের ঈদ

বিনোদন ডেস্ক (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

পবিত্র ঈদুল ফিতর নিয়ে নিজেদের ভাবনা, অনুভূতি বিবার্তাকে জানিয়েছেন তারকারা। এর মধ্যে রাখি, নিশা, নাফিজা, মেহজাবিন, কুসুম শিকদারের অনুভূতি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

 রাখি: গত বছরের মার্চ মাসে আমার বাবা মতিউল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন। বাবা মারা যাবার পর আমার জীবন থেকে ঈদের আনন্দ একেবারেই চলে গেছে।

 

গত বছর কিভাবে আমরা ঈদ করেছি তা এই মুহূর্তে আর মনে পড়ে না। কারণ সারাটি দিনই আমার আম্মুর মন খারাপ ছিলো। বড় ভাইয়া, আপু দেশের বাইরে থাকায় ঈদটা একসাথে পালন করতে পারিনি। তাই প্রতিটি মুহূর্তে বাবাকে ভীষণ মিস করেছি আমি, আমরা সবাই। তবে এবার আমরা একসাথে ঈদ করতে পারবো। আর এই ভেবেই আমার ভীষণ ভালো লাগছে। সব ভাই-বোন আর মা মিলে যদি ঈদের সময়টুকু পার করতে পারি তাহলে অন্তত আমার মা বাবাকে হারানোর কষ্টটা কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারবেন।

 সবার দোয়ায় একজন লাক্স তারকা এবং অভিনেত্রী হিসেবে মিডিয়াতে অল্পকিছুদিনের মধ্যেই নিজের একটি ভালো অবস্থান তৈরি করে নেবার চেষ্টা করেছি। এই জন্য এদেশের সকল দর্শকের কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। একের পর এক নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও পড়াশোনার ব্যাপারে আমি সবসময়ই একটু বেশিই সিরিয়াস ছিলাম। যে কারণে পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকেই আমি নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনে কাজ করতাম।

 ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো নিজেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার। বিশেষ করে বাবা চাইতেন তার সব সন্তানই যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই এবার পা বাড়িয়েছি আমি। গত ২৪ জুলাই বুধবার রাত এগারোটায় সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্সের বিমানে চড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে এসেছি আমি।

এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে আমি বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করেছি। নাটকগুলো হচ্ছে জাহিদ হাসানের ইমোশনাল আব্দুল মতিন’ , শামস্ করিমের মীর জাফর মীর’, মাহফুজ আহমেদের আঁধারের অবসান’, সৈয়দ জামিমের একটা গোপন কথা ছিলো বলবার’, চয়নিকা চৌধুরীর তুমি আমার সহ তৌকীর আহমেদের একটি নাটক।

নিশা: আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী হলেও আমার ছোটবেলাটা কেটেছে ঢাকার উত্তরাতে আব্বু আম্মুর সাথে। তবে ঈদ এলেই আমরা চলে যেতাম নোয়াখালীর মাইজদীতে গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই পরিবারের সবার সাথেই আমি ঈদ করতাম।

 আমার ছোটবেলার বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে। কারণ বলা চলে ঈদের প্রায় সারাটিদিনই আমি তাদের সাথে কাটিয়েছি। তাদের সাথে ঘুরে বেড়িয়ে ঈদি নিয়েছি নানাজনের কাছ থেকে।  আসলে ছোটবেলার ঈদের সময়টাই ছিলো এক অন্যরকম আনন্দের।

 বড়বেলায় এসে আজ সব কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে। এখন নিজেই আমি আমার ছোট ভাই-বোনদের ঈদি দেই। ওরা ঈদি পেয়ে খুব খুশিও হয়। যেন এটাই আমার এই সময়ের ভালোলাগা। ছোটবেলায় আমার পা বয়সানুযায়ী একটু বড় ছিলো বলে আমার আম্মু আমার পায়ের জুতা পেতেন না মার্কেটে। ঈদে জুতা পরবো না, এমনটা হতেই পারে না। তাই যখন জুতা মিলাতে পারতেন না, তখন আমার খুব মন খারাপ হতো। আমার মন খারাপ যেন না হয় এজন্য আব্বু আম্মু আমাকে এক ঈদে দুটো জামা কিনে দিতেন। তাই নিয়ে আমি খুব খুশি থাকতাম।

 এবারের ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে আমি আমার আব্বু আম্মুকে জামা কাপড় কিনে দিয়েছি। ঈদ উপলক্ষ্যে কয়েকটি নাটকেও আমি কাজ করেছি। যেসব পরিচালকদের কাজ করেছি তারা হলেন আশিকুর রহমান আশিক, আরিফ খান, তৌকীর আহমেদ ও গোলাম মুক্তাদীর সান। প্রতিটি নাটকই গল্পনির্ভর। দর্শকের ভালো লাগবে নাটকগুলো। আমি আমার চরিত্রে আগের চেয়েও ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছি।

 

মেহজাবিন: চট্টগ্রামের বহদ্দরহাটের মেয়ে আমি। জন্মের আট/নয়মাস পরই আমি বাবার চাকরির সুবাদে চলে যাই দুবাইতে। তাই ছোটবেলার ঈদ বলতে দেশের বাইরেই বুঝি আমি। দেশের বাইরের ঈদ খুব বেশি মজার নয়। আম্মুসহ আমরা সবাই সবসময় ঈদের আগে দেশে ফেরার কথা বলতাম আব্বুকে। কিন্তু আব্বু ছুটি পেতেন না বিধায় দেশে আসা হতো না।

২০১০ কিংবা ২০১১ সালের ঈদের কথা আমার খুব মনে পড়ে। কারণ তখন আব্বু পরিবারসহ দেশেই চলে এসেছেন। আমরা তখন চট্টগ্রামে থাকি। ওখানেই মজার সময় কেটেছে আমার। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঈদের সময় কেটেছে আমার। এখন তো আমি নিয়মিত ঢাকাতেই থাকি বিগত প্রায় তিন বছর যাবত। এখন ঢাকাতেই ঈদ হয়। আব্বু এখনো দেশের বাইরে থাকলেও ঈদের আগেই আব্বু চলে আসেন। সবাই মিলে ঈদ করি আমরা।

আমরা তিন বোন, দুই ভাই। আমিই সবার বড়। তাই পরিবারের প্রতি আমার দায়িত্বও অনেক বেশি। এখন আমি নিজেই রোজগার করছি, সংসারে খরচ দিচ্ছি আমার মতো করে। এটা আমার অনেক ভালোলাগার বিষয়। অল্প বয়সেই আমি সংসারের হাল ধরতে পেরেছি। অথচ আমার বন্ধু বান্ধব কেউই এখন চাকরি করছেনা। সবাই আমাকে মনে মনে একটু হিংসে করলেও বিষয়টি আমি খুব এনজয় করি।

আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী সৌমিন আফরিন। ঢাকার নিকেতনে থাকে সে। ঈদের দিন তার সাথেই বেশি সময় কাটে আমার। গাড়ি নিয়ে আমরা দুজন ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াই। আগে ঈদি পেতাম নিয়মিত, কিন্তু এখন পাই না। আমার ছোট ভাই বোনদের আমি ঈদি দেই। আবার আমিও কয়েকজনের কাছ থেকে ঈদি আদায় করার চেষ্টা করি। ঈদি পাওয়াটা যেমন আনন্দের দেওয়াটাও অন্যরকম ভালোলাগা।

 এবারের ঈদ উপলক্ষে আমি প্রায় দশটি টিভি চ্যানেলে নাচের অনুষ্ঠান যেমন করেছি। ঠিক তেমনি বেশ কয়েকটি ভালো ভালো নাটকেও অভিনয় করেছি। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে আমার রেদওয়ান রনি পরিচালিত ছয় পর্বের ধারাবাহিক নাটক বাঘবন্দীনাটকে অভিনয় করে। এই নাটকে আমি আমার প্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের সাথে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। তার বিপরীতে প্রেমিকা চরিত্রে অভিনয় করাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। এছাড়া ইরানী বিশ্বাসের পরিচালনায় দুটি নাটকে অভিনয় করেছি। একটিতে আমার বিপরীতে আগুন ভাই অন্যটিতে আছেন নাঈম।

এছাড়া শাহীন কবির টুটুলের নাম ঠিক না হওয়া আরেকটি ঈদের ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করেছি। এছাড়া জয়ন্ত রোজারিও পরিচালিত কট বিহাইন্ডনাটকে অভিনয় করেছি। এই নাটকে আমার বিপরীতে আছেন শতাব্দী ওয়াদুদ। সব মিলিয়ে এবারের ঈদটি আমার অন্যরকম যাবে বলেই আমি আশা করছি। কারণ এবারও আমরা বাবার সাথেই দেশে ঈদ করবো।

 

নাফিজা: লাক্সতারকা খ্যাতি অর্জন করার পর থেকেই যেন জীবনের হিসেবে নিকেশ বদলে যেতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে ঈদ আর পালন করতে পারিনি। কোথায় যেন আমি ঈদ এলে আটকে যাই। এটা কেন হয়, কিভাবে হয় আমি বুঝতেও পারি না।

আমার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। ওখানেই এসএসসি পর্যন্ত সময় কেটেছে আমার। এরপর এইচএসসি সম্পন্ন করি আমি সিটি কলেজ থেকে। তারপর আইইউবিতে সিএসইতে পড়াশুনা করি আমি। তাই ছোটবেলার ঈদ বলতে আমি বুঝি নরসিংদীর স্মৃতিচারণ করা।

 আমরা সনাতন পরিবারের মানুষ এখনো। আমার দাদি এখনো বেঁচে আছেন বলে আমার বাবা নাসির উদ্দিন একটা কথাই শুধু বলেন, ‘ তোমার দাদী যতোদিন বেঁচে থাকবেন ততোদিন সবাইকেই নরসিংদী গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে হবে। আমরা সবাই বাবার এই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি। ঈদ এলে আমরা সবাই বাড়িতে চলে যাই। আমার ছোটবেলার ঈদ ছিলো যেমন মজার এই বড়বেলার ঈদ যেন আরো মজার।

আমার একমাত্র ছোট ভাই তানভীর। ছোটবেলায় আমি যেমন সবার কাছ থেকে ইদি পেতাম প্রচুর, সেই লিষ্টে আমার নাম এখন নাই বলা চলে। এখন ঈদি বেশি পায় তানভীর। তাই ঈদের সময় তাকে আমার খুব হিংসে হয়। তবে এটা সত্যি ঈদি দিতেও আমার বেশ ভালোলাগে। তবে আমার ভাষায় ঈদি হচ্ছে বড়দের দোয়া-স্নেহ-মায়া-মমতা। তারা এই ঈদির মাধ্যমেই স্পেশাল দোয়া করেন। আমি সবসময়ই বড়দের দোয়াই চেয়ে আসছি, ঈদি নয়।

 

এবারের ঈদ উপলক্ষেও আমি সবার কাছে দোয়া চাই যেন ভালোভাবে ঈদের সময়টুকু পার করতে পারি। এবারের ঈদ উপলক্ষে আমি খুব বেশি নাটকে যে অভিনয় করেছি তা নয়। তারপরও যাদের কাজ করেছি তারা হলেন মাহমুদুর রহমান বান্না, হাসান জাহাঙ্গীর, ফাহমিদা ইরফানসহ আরো কয়েকজন পরিচালকের নাটক।

 কুসুম শিকদার: আমার গ্রামের বাড়ি যশোর। তবে বাবার চাকরির সুবাদে যশোর আমাদের খুব কমই ঈদ করতে হয়েছে। যে কারণে গ্রামের বাড়ির বাইরেও আমাদেরকে ঈদের সময়টুকু পার করতে হয়েছে।

 

ছোটবেলা থেকেই আমি গান গাইতে পারতাম। আমি ১৭/১৮ বছর গান শিখেছিও। যে কারণে আমরা যেখানেই যেতাম গান গাইতে পারার কারণে আমাকে সবাই খুব পছন্দ করতেন, আদরও করতেন। যে কারণে ঈদ এলে স্বাভাবিকভাবেই আমি ঈদি পেতাম অনেক বেশি। তাই প্রতিবছরই ঈদের সময়টুকুর জন্য আমি খুবই অপেক্ষা করতাম।

 

আমার আব্বু -আম্মুও আমাকে অনেক বেশি বেশি ঈদি দিতেন। তা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আনন্দ আড্ডায় মেতে থাকতাম। এখন আমি বড় হয়েছি, সংসার হয়েছে আমার। শ্বশুরবাড়ির ভাবনা নিয়েই সময় কাটে আমার। কখন কী করবো না করবো এই ভাবতে ভাবতেই আমার সময় কেটে যায়। এতো এতো চাপের মাঝেও আমি ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অভিনয় করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি একসময় আমি গান করতাম। কিন্তু এখন আমাকে বেঁচে থাকতে হবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।

 

এছাড়া আমার পক্ষে দর্শকের মাঝে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এবারের ঈদ উপলক্ষে হাতেগোনা কয়েকটি কাজ করেছি মাত্র। একটি নাটক করেছি দীন মোহাম্মদ মন্টুর পরিচালনায়। এতে আমার বিপরীতে আছেন আনিসুর রহমান মিলন। এছাড়া আরো দুতিনজন পরিচালকের নাটকে অভিনয় করেছি। প্রতিটি কাজই দর্শকের ভালো লাগবে।

 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ