শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়বিআরটি বিল পাস, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে

বিআরটি বিল পাস, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে

স্বল্পব্যয়ে ও উন্নত সড়ক নির্ভর গণপরিবহন সেবা দিতে ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বিল-২০১৬’ পাস হয়েছে। বিলে বিআরটি পরিচালনাকালে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে। বিআরটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সকল যাত্রীর বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমা না করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। ০৭ ডিসেম্বর রাতে দশম জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনের চতুর্থ কার্যদিবসে বিআরটি বিলটি পাসের জন্য উপস্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিন ২৯টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন মন্ত্রী। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করার আগে মন্ত্রী বলেন, আজ অনেকগুলো সংশোধনী গ্রহণ করা হচ্ছে, যা নজির হয়ে থাকবে। এরপর ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বিলটি পাসের জন্য কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক ভোটে পাস হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনকালে বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য মো. ফখরুল ইমাম। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। পাস হওয়া বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমতির পর আইনটি কার্যকর হবে।

পাস হওয়া বিলের বিধান অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার মধ্যে এই বিআরটি স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে। বিআরটি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তবে শতভাগ সরকারি কোম্পানিকে লাইসেন্স ফি দিতে হবে না। সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিআরটি স্থাপন, স্থাপনা ও পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া বিআরটি নির্মাণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলেই একই পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনটিতে বিআরটি-এর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল আইন ও পায়রা বন্দর আইনের মতো বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। বিআরটি নির্মাণ বা পরিচালনা হতে পারে এমন কোনো স্থানে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তপক্ষ সাত কর্মদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, বিআরটির ভাড়া নির্ধারণের জন্য নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। কমিটি বিআরটি পরিচালনা ব্যয় ও জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণের সুপারিশ করবে। বিআরটির প্রতিটি কোচে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকবে। বিআরটি পরিচালনাকালে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে। বিআরটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সব যাত্রীর বিমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমা না করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, বিআরটি নির্মাণ ও পরিচালনায় বাধা দিলে এক বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি অনুমতি ছাড়া বিআরটির সংরক্ষিত স্থানে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো ব্যক্তি যদি বিআরটি বাস ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটায়, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। বিআরটি-এর টিকিট বা পাস জাল করলে এবং অননুমোদিতভাবে টিকিট বা পাস বিক্রি করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া কারিগরি মান অনুসরণ না করলে লাইসেন্সধারীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। শুরু থেকেই বিআরটিকে মোবাইল কোর্টের এখতিয়ারে নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে ওই বিলে।

উল্লেখ্য, বিআরটি পরিচালনা করতে ২০১২ সালে গঠিত হয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। গত ২৬ জুন বিআরটি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরআগে গত ৭ মার্চ মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বিল-২০১৬’ নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল বিল-২০১৬ নামে জাতীয় সংসদে আরো একটি বিল পাস হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর আপত্তি ও সংশোধনী প্রস্তাব আনা হলেও তা গৃহীত হয়নি।

পাস হওয়া বিলে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল নামে একটি কাউন্সিল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিবকে সভাপতি করে এ কাউন্সিল হবে ২১ সদস্যবিশিষ্ট। বিলে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, কাউন্সিলের তহবিল, বাজেট, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা, প্রতিবেদন, নার্সিং শিক্ষার যোগ্যতার ডিপ্লোমা বা স্নাতক ডিগ্রির স্বীকৃতি, মিডওয়াইফারির শিক্ষার স্বীকৃতি, নিবন্ধনযোগ্য সহযোগী পেশার শিক্ষা যোগ্যতার স্বীকৃতি, স্বীকৃতি প্রত্যাহার, নিবন্ধন বাতিল ও রেজিস্ট্রার থেকে নাম প্রত্যাহারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া বিলে নিবন্ধন ব্যতীত নার্সিং বা মিডওয়াইফারি অথবা সহযোগীর পেশা গ্রহণ নিষিদ্ধ, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে শিক্ষা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ