শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন সীমা বাড়ছে

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন সীমা বাড়ছে

এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা সংশোধন করে দৈনিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে একজন গ্রাহক দিনে দু’বারে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জমা বা উত্তোলন করতে পারেন। এ সীমা বাড়িয়ে দৈনিক পাঁচবারে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা লেনদেনের নিয়ম করা হচ্ছে। একই সঙ্গে একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কয়টা পর্যন্ত এজেন্টশিপ দেওয়া যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা সংশোধন করে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে সংশোধিত নীতিমালা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কম খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা চালুর লক্ষ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা জারির পরের বছর ব্যাংক এশিয়া প্রথম এ সেবা চালু করে। এ ছাড়া আরও ১২টি ব্যাংক অনুমতি নিলেও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ছাড়া অন্যগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।

সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক প্রতিক্ষেত্রে এক লাখ টাকা করে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচবার নগদ জমা বা উত্তোলন করতে পারবেন। এতে দিনে একজন পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের সুযোগ পাবেন। বিদ্যমান নীতিমালায় একজন গ্রাহক প্রতিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করে দিনে সর্বোচ্চ দু’বার নগদ জমা বা উত্তোলন করতে পারেন। আর বর্তমানে একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে যে কোনো সংখ্যক এজেন্টশিপ নিতে পারেন। তবে সংশোধিত নীতিমালায় একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচটি এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মোট এজেন্টশিপের নির্দিষ্ট একটি হার নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয় বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। এরই মধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ কমিটি বৈঠক করবে। এর পর সব ব্যাংক ও বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত নীতিমালা প্রকাশ করা হবে।

এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনায় এগিয়ে আছে এমন একটি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, সময়ের চাহিদার আলোকে দৈনিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তবে কোনো অবস্থায় একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন একাধিক ব্যাংকের এজেন্টশিপ নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিজস্ব নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলো গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকে। একই সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের এজেন্টশিপ দেওয়া হলে তাতে সেবার মান কমে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। তবে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একই ব্যাংকের একাধিক এজেন্টশিপ দেওয়া যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অফিস, পোস্ট অফিস ও কোম্পানি আইনের আওতায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি, এমআরএর অধীনে অনুমোদন পাওয়া এনজিও, কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধীন প্রতিষ্ঠান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন কুরিয়ার এবং ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র এজেন্টশিপ নিতে পারে। একজন এজেন্ট ক্ষুদ্রঋণ প্রদান ও আমানত গ্রহণ, নির্দিষ্ট হারে অর্থ লেনদেন, সুবিধাভোগীর কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ পেঁৗছে দেওয়া ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাভোগীকে অর্থ প্রদান, অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স জানা ও অ্যাকাউন্ট ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। এ ছাড়া যে কোনো পরিমাণের ঋণ আবেদন, ক্রেডিট ও ডেভিট কার্ডের আবেদন ফরম ও চেক জমা নিতে পারেন এজেন্টরা।

বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের শাখা নেই এমন এলাকায় নিজস্ব বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের এজেন্ট হয়ে সেবা দিতে পারে। কোনো ধরনের চার্জ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া কোনোভাবেই গ্রাহক যেন প্রতারিত না হন, সে জন্য প্রতিনিধি নিয়োগের আগে অবশ্যই তার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, বিশ্বস্ততা ও সততার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার বিধান রয়েছে। প্রথমে শুধু পল্লী এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে পৌর ও শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিং করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ