শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়কৌশলে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক

কৌশলে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক

মো. রেজাউল করিম। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগদান করেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকে। প্রশিক্ষণ শেষে তার পদায়ন করা হয় পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলায়। দুই মাস পর রেজাউলকে বদলি করা হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। এরও আড়াই মাস পর সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আবার বদলি করা হয় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। রেজাউল করিম বানিয়াচং না গিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। শুধু রেজাউল করিমই নন, এমন সহস্রাধিক কর্মকর্তাকে দুই থেকে আড়াই মাস পর পর দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বদলি করা হচ্ছে। এতে অনেক কর্মকর্তাই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

এভাবে দুই-আড়াই মাস পর পর বদলি করা হলে অনেকেই বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়লে ব্যাংকের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ তুলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে না বলেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন এ কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের ০৩ জুন বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। প্রকল্পটির বাজার ধরতে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ করা হয়েছে কয়েক হাজার কর্মকর্তাকে। তবে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েও গ্রাহকের মাঝে সাড়া ফেলতে পারেনি এ কার্যক্রম।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কোনোভাবেই জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম। প্রকল্পটিতে গ্রাহকের অনেক অর্থও রয়েছে। এজন্য বন্ধও করতে পারছে না। আবার নিয়োগ করা সকল কর্মকর্তাদের রাখতেও চাচ্ছে না। এ কারণে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত না করে চাকরি ছাড়ার নতুন এই কৌশল নিয়েছেন ব্যাংকের ডিএমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন।

তিন মাসে আগে ঢাকার নর্দা ফার্স্টট্র্যাকে যোগদান করেছিলেন আব্দুর কাদের। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই তাকে বদলি করা হয়েছে বরগুনার আমতলী উপজেলায়। একইভাবে বরিশালের আগৈলঝাড়া থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বদলি করা হয়েছে রাশেদুল ইসলামকে।

এর আগে গত বছর ব্যাংকটি ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের এক হাজার কর্মীর পদাবনতি করেছে। একই সঙ্গে কমানো হয়েছে ক্যাশ অফিসার গ্রেড-২ ও ৩ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার, জুনিয়র ক্যাশ অফিসার ও ট্রেইনি ক্যাশ অফিসারদের মূল বেতন ও ইনক্রিমেন্ট। পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে নির্দিষ্ট পদ পর্যন্ত কর্মীদেরও। উচ্চপদস্থ অফিসার-এক্সিকিউটিভদের ক্যাশ অফিসার গ্রেড-১ এর সমতুল্য চিফ ক্যাশ অফিসার করা হয়েছে।

নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে চিফ ক্যাশ অফিসারের বেতন। একইভাবে ক্যাশ অফিসার গ্রেড-২ ও ৩ এর বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৩০ হাজার ২শ’ টাকা ও ২৬ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা। অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসারদের বেতন ২২ হাজার ৩শ’ টাকা, জুনিয়র ক্যাশ অফিসারদের বেতন ১৯ হাজার ৮শ’ ২৫ টাকা ও ট্রেইনি ক্যাশ অফিসারদের বেতন ১৭ হাজার ৪শ’ ৫০ টাকা করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের ০১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গর্ভনর ড. আতিউর রহমান ব্যাংকার্স সভায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়া লো-পারফরমেন্সের অজুহাতে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের যখন তখন চাকরিচ্যুত না করতে এমডিদের কঠোর হুশিয়ারি দেন। ওই নির্দেশনার পর বেসরকারি ব্যাংকগুলো কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত না করে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার এ কৌশল নিয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ