বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী কমডোর গোলাম রব্বানী হত্যা মামলার নথি ও হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছেছে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আইয়ুব খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ মামলার নথি বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌঁছালেও সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। দুয়েক দিনের মধ্যে নথি খোলা হবে। এরপর বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মামলার রায় ঘোষণার পর গত ৫ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
এ হত্যা মামলায় দুই আসামিকে ‘কম সাজা’ দেওয়া হলেও বিচারিক আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেনি বলে হাই কোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়। ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল মাইক্রোবাসে করে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোনের (কেইপিজেড) তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর গোলাম রব্বানী। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিন পর তার মৃত্যু হয়।
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের এডিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রব্বানী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নৌ-পরিবহন বিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেল হত্যা মামলায় তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য দেন।
ওই হত্যা মামলার রায়ে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ হাশেম ও আব্দুল মালেক সোহেল নামের তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু বাকি দুই আসামি কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে দেওয়া হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড। আপিল শুনানির পর হাই কোর্ট আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
এছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া তিন আসামির মধ্যে মো. হাশেম ও সোহেল হাই কোর্টে খালাস পান; মো. সেলিমের যাবজ্জীবন বহাল থাকে। এ মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি মানসুর আলম ও সাইফুল ওরফে বিলাই সাইফুলকে নিম্ন আদালতের রায়ে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সাইফুল বিচার চলাকালে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। বাদীপক্ষ সাইফুলের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করলেও মানসুর আলমের বিরুদ্ধে করেনি। সাইফুলের বিষয়ে বিচারিক আদালতকে নতুন করে রায় দিতে বলেছে হাই কোর্ট।
আট সপ্তাহের মধ্যে সাইফুলকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশনা দিয়ে হাই কোর্ট বলেছে, তার জামিন বিবেচনার পূর্ণ স্বাধীনতা বিচারিক আদালতের আছে। হাই কোর্টের আদেশ অনুসারে আবু নাসের, হুমায়ুন কবির ও সেলিমকে আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে দণ্ড ভোগ করতে হবে।
হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, “আমাদের এই মত যে, গোলাম রব্বানী হত্যায় ফৌজদারি ষড়যন্ত্র সংগঠনে দণ্ডবিধির ১২০বি/৩০২ অনুসারে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক সঠিক ও আইনসঙ্গতভাবে আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তথাপি বিচারক তাদেরকে লঘু সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল (এরর) করেছেন। “ওই অপরাধে দণ্ডবিধির ১২০বি অনুসারে সর্বোচ্চ সাজা বা যাবজ্জীবনের বিধান থাকলেও বিচারক তাদেরকে পাঁচ বছরের অপর্যাপ্ত সাজা দিয়েছেন। সামান্য সাজা প্রদানের বিষয়ে রায়ে বিস্তারিত কিছুই আলোচনা করা হয়নি। হাই কোর্ট বলেছে, “মামলার প্রমাণাদি, প্রকৃত অবস্থা, পারিপাশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এই মত যে, বিচারিক আদালতের সাজা বদলানো উচিত এবং বাড়ানো উচিত।