শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হতে চলেছে সত্যি

চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হতে চলেছে সত্যি

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হবে, চট্টগ্রাম হবে সাংহাই, আনোয়ারায় হবে চীনা ইকোনমিক জোন- এগুলো এখন আর কোন স্বপ্ন নয়।  দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর স্বপ্ন হতে চলেছে সত্যি।  পূরণ হতে চলেছে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। শুক্রবার বিকেলে গণভবণ থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ ও ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোনের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং।  এছাড়া বাঁশখালীতে বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পগ্রুপ এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্থায়নের বিষয়ে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন শি জিন পিং।

এর মধ্যদিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।  চট্টগ্রামকে ঘিরে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।  ফলে বদলে যাবে পুরো চট্টগ্রামের চেহারা। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে নির্বাচনী জনসভায় চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ চট্টগ্রামে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে করা হয় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডিজ) কাজ।  কর্ণফুলীর মোহনায় টানেল নির্মাণে নগর পরিকল্পনাবিদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা একমত হলে স্বপ্ন ও বাস্তবের দূরত্ব কমে আসে।

প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জিটুজি ভিত্তিতে নদীর তলদেশে এই ‘টানেল’ নির্মাণের কাজ পেয়েছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। এর মধ্যে চীন সরকার দেবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। নদীর তলদেশে টানেলের দৈর্ঘ্য হবে তিন কিলোমিটারের বেশি।  কর্ণফুলী নদীর ভাটির দিকে নেভাল একাডেমির কাছে হবে টানেলের প্রবেশপথ।  টানেলের বহির্গমনপথ হবে আনোয়ারায় কাফকো সার কারখানার পাশে। ভিত্তি স্থাপনের পর অর্থায়ন প্রক্রিয়া ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ডিসেম্বরে শুরু হবে মূল কাজ। ২০২০ সাল নাগাদ টানেলটির ব্যবহার শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, স্বপ্নের টানেল বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সাংহাই। বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ চীনের বাণিজ্যিক রাজধানীর প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে বন্দরনগরী। একটি টানেলে এক করা হবে দুই তীরের দুই অংশকে। টানেল নির্মাণে নদীর তলদেশে প্রায় একশ ফুট গভীরে বসানো হবে ৩৫ দশমিক ৪৩ ফুট প্রশস্ত দুটি টিউব। যা নদীর বর্তমান তলদেশ থেকে আরো অন্তত ৯০ ফুট গভীরে থাকবে। দুটি টিউবে গাড়ি চলাচলের জন্য দুটি করে লেন থাকবে। প্রতিটি লেনের প্রস্থ হবে ৩ দশমিক ৬৬ মিটার। দুটি টিউবের মধ্যে কমপক্ষে ৩৬ ফুট দূরত্ব থাকবে।

এদিকে স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের পাশাপাশি চীনা ইকোনমিক জোন প্রকল্প নিয়েও মানুষের মাঝে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।  জি টু জি (বাংলাদেশ ও চায়না সরকার) পদ্ধতিতে আনোয়ারা উপজেলায় ৭৭৪ একর জমিতে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এতে ৩৭১ শিল্প-কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে ৫৩ হাজারের বেশি মানুষের।

এই অর্থনৈতিক জোনের কাজ ২০১৭ থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালে।  এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক, রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিযোগাযোগ, কৃষিনির্ভর শিল্পকারখানা, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রোনিকস, টেলিভিশন/মনিটর,চিকিৎসা/অপারেশনের যন্ত্র, প্লাস্টিক, আইটি ও আইটি সম্পর্কিত কারখানা গড়ে উঠবে।  এই অর্থনৈতিক জোনে বাংলাদেশ সরকারের ৩০ শতাংশ আর চীনা বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে।

এছাড়া বাঁশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদুৎ প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে চীন। এস আলম গ্রুপ ও চীনের বিদ্যুৎ প্রকল্প নিমার্ণের সরকারি প্রতিষ্ঠান সেনডং ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কন্সট্রাকশান করপোরেশানের (সেপকো) এ যৌথ প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।  ৪ বছর পর এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

এছাড়া সীতাকুণ্ড থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করা হয়। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি প্রফেসর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পর নদীর অপর পাড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা এবং মিরসরাই থেকে উপকূল ঘেঁষে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে এই এলাকার অর্থনৈতিক প্রসার ঘটবে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে।  ‍বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠার পথে চট্টগ্রাম আরও এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ