মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হত্যার দায়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দুই কাপড় ব্যবসায়ী ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একই রায়ে আদালত তাদের আরেক ভাইসহ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন। ২৪ মে চট্টগ্রাম বিভাগীয় জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিশেষ জজ সৈয়দা হোসনে আরা এ রায় দিয়েছেন। দণ্ডিত দুই ভাই হল রেজাউল করিম লিটন এবং মফিজুল ইসলাম ফারুক। এদের মধ্যে লিটন পলাতক আছেন। খালাস পাওয়া দুজন হচ্ছে লিটন ও ফারুকের ভাই আজাদুল আলম আজাদ এবং ওই দোকানের আরেক কর্মচারি আবুল কালাম।
জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গির আলম বলেন, দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। বাকি দুজনের বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় তারা খালাস পেয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমানের ছেলে হাফেজ দিদারুল আলম ওই উপেজলার কেরাণীহাটে ভাই ভাই ক্লথ স্টোরের কর্মচারি ছিলেন। ভাই ভাই ক্লথ স্টোরের মালিক ছিলেন রেজাউল করিম লিটন, আজাদুল আলম আজাদ এবং মফিজুল ইসলাম ফারুক।
২০০৫ সালের ১ নভেম্বর রমজান মাসে আকস্মিকভাবে দোকানের ভেতর হাফেজ দিদারের মৃত্যু হয়। দোকান মালিকরা তার পিতাকে জানায়, সেহেরি খাওয়ার পর বমি করতে করতে দিদার মারা গেছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান তাদের কথা বিশ্বাস না করে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাফেজ দিদারের মাথায়, বুকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
পিপি জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘দোকান মালিকদের বড় ভাই জাফরের মেয়ের সঙ্গে হাফেজ দিদারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই প্রেমের ঘটনা ধামাচাপা দিতে দিদারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে তারা। এরপর দিদারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তারপর সেহেরি খেয়ে বমি করার নাটক সাজায় খুনিরা।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০৯ সালের ২ জুন পুলিশ চারজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ গঠন ও ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর মঙ্গলবার আদালত এ রায় দেন।