শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়জবেদ আলীকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না

জবেদ আলীকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না

উচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও ১৩ বছর ধরে জেল খাটা সাতক্ষীরার জবেদ আলীকে কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

এছাড়াও অবৈধভাবে ১৩ বছর ধরে জবেদ আলীকে জেল খাটানো বিবাদী নিষ্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা ও অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, কারা উপ-মহাপরিদর্শক, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার, তৎকালীন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ তাপস কুমার দে ও সাতক্ষীরার জেল সুপারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, উচ্চ আদালতের খালাসের রায়ের পরেও একজন ব্যক্তিতে মুক্তি না দিয়ে নথি আটকে রাখা সংবিধানের লংঘন। চলতি বছরের ৩ মার্চ জবেদ আলীকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে হাইকোর্টে রিট মামলাটি করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মৃত আমজেল বিশ্বাসের ছেলে জবেদ আলী বিশ্বাস। স্ত্রী ফরিদা খাতুন মারা যাওয়ার পর তার দুই মেয়ে লিলি (৮) ও রেক্সোনা (৫) জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রামে মামা আবুল কাসেমের বাড়িতে থাকতো। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জবেদ আলী শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ওইদিন লিলি মারা যায়। এ ঘটনায় শ্যালক আবুল কাসেম বিষ খাইয়ে লিলিকে হত্যার অভিযোগ এনে জবেদ আলীর বিরুদ্ধে তালা থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ওই মামলায় জবেদ আলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

মামলায় ২০০১ সালের ১ মার্চ জবেদ আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জবেদ আলী হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। ওই বছরের ১১ মে জবেদ আলীকে সাতক্ষীরা কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরে ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট জবেদ আলীকে নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস দেন। ওই বছরের ২৬ মার্চ হাইকোর্ট থেকে খালাসের আদেশ সাতক্ষীরা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২ এ পৌঁছায়।  সাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে না পাঠিয়ে তা আদালতের রের্কডরুমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন।

জবেদ আলী বিশ্বাস বিভিন্ন সময় এ খালাসের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ ও বিচারিক আদালতকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেননি। সম্প্রতি জবেদ আলী সাতক্ষীরার অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলি (পিপি) জিল্লুর রহমানকে একটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান ও আরেক অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক সাতক্ষীরার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জবেদ আলীর মুক্তির জন্য আবেদন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। আদালতের নির্দেশে ২৯ ফেব্রুয়ারি জবেদ আলীকে যশোর থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এরপর ২ মার্চ আদালত তাকে মুক্তির আদেশ দিলে মুক্তি পান জবেদ আলী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ