শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়৫৪ ধারা সংশোধনে সরকারের আপিল খারিজ

৫৪ ধারা সংশোধনে সরকারের আপিল খারিজ

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ২৪ মে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেন, ডিসমিস। তবে কিছু মডিফিকেশন থাকবে। কিছু গাইডলাইন দিয়ে দিবো। ফলে বিনা পরোয়ানা ও রিমান্ডের ধারা সংশোধনে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে ছাড়া বুঝা যাবে না হাইকোর্টের রায়ের কোন অংশ থাকবে কি থাকবে না।

১৯৯৮ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করে। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে ছয়মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে বলা হয়। এর বিরুদ্ধে আপিলে যান রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দু’টি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এ জন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।

২০০৪ সালে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি। দীর্ঘদিন পরে চলতি বছরের ১৭ মে আপিল শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন। মঙ্গলবার সরকারের আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না, কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে, গ্রেফতারের তিনঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে, বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতের নিকটাত্মীয়কে একঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে, গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে, ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ড. কামাল হোসেন,ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পরে ড. কামাল হোসেন বলেন, আপিল ডিসমিস হয়ে গেছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রায় পেলে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করবো কি আছে কি নাই। তাই এখন কিছু বলা যাবে না। অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, আমরা সন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ