শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউফেসবুকে বইছে প্রতিবাদের ঝড়

ফেসবুকে বইছে প্রতিবাদের ঝড়

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

ভোটটাইতো আসল, দিমুনে…’। সুতরাং, সাপও মরলো, লাঠিও ভাংল না।’ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ফেসবুকে এভাবেই লিখেছেন বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহীম।

শুধু তিনিই নন, এ রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক যেন পরিণত হয়েছে প্রশস্ত এক দেয়ালে, তাতে প্রতিবাদ, ঘৃণা ও হতাশা প্রকাশ করে যেন চলছে অবিরাম দেয়াল লিখন।

অনেকেই শেয়ার করছেন গোলাম আযমের রায় ও অপরাধের বিবরণ সংক্রান্ত খবরগুলো। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার খবরের সঙ্গে নিজেদের মন্তব্য জুড়ে মনের ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে।

আচার্য মিলন বাংলানিউজের শেয়ার করা গোলাম আযমের রায়ের নিউজে কমেন্ট করেছেন, ৯০ বছর হোক আর আজীবন হোক, কোনো কারাদণ্ড মানি না। এ রায় মানি না। কোনোমতেই মানি না। বন্ধুরা, শাহবাগে চলে এসো…এক্ষুণি….

মো. জাকারিয়া হোসাইন লিখেছেন, যে মা ধর্ষিত হয়েছে, যে মায়ের ছেলে খুন হয়েছে; ৪২ বছর পর সে অপরাধ প্রমাণিত হল! আর সেই খুনির শাস্তি হিসেবে সেই ধর্ষিতা, ছেলেহারা মাকে বলা হল, ‘বাকি জীবন আপনি এই খুনিকে সসম্মানে নিজের টাকায় লালন পালন করবেন’।

‘এইড্যা কিসু হইলো’ মন্তব্য করেছেন শাহিদুল ইসলাম শাহেদ।

চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক সালেহ বিপ্লব লিখেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে জামাইবান্ধব শ্বশুর-শাশুড়িও এরকম জামাই আদর করতে পারবেন না।

জান্নাতুল নাঈম প্রীতি নামের এক তরুণ লেখিকা লিখেছেন, দুঃখিত বাংলাদেশ, দুঃখিত লাখো মা-বোন-শহীদ ভাইয়েরা, তোমাদের ওপর করা অন্যায়ের কোনো ন্যায্য বিচার এনে দিতে পারলাম না…।

রতন রায় সঞ্জীব নামের এক টিভি সাংবাদিক লিখেছেন, আমরা দুর্ভাগা জনগণ, আমাদের গুটি বানিয়ে আর কতোদিন খেলবে তোমরা?

শিমুল সালাউদ্দিন লিখেছেন, আদালত সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করেছেন অপরাধীর বয়স! আহা সহানুভূতি, রাজাকার শিরোমণির জন্যও সহানুভূতি?

সাহস মুস্তাফিজ লিখেছেন, ভণ্ডামি, ভণ্ডামি, ভণ্ডামি।

রহমান মুস্তাফিজ লিখেছেন, শাহবাগ যাচ্ছি… গুমোট অবস্থায় কেন যেন মনে হচ্ছে আবার গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন জোরদার করতে হবে। (রায়ের পর গো. আযম যদি কসাই কাদেরের মতো ভিক্টরি টিহ্ন দেখায়, অবাক হবো না।)

মাহফুজ রহমান লিখেছেন, গু আজমকে কি লিভিং ফসিল করে রাখা হবে? মানে ৯০ বছর কোটা পূরণ করতে হবে না?

আরেকজন রায়ের প্রতিবাদে ফেসবুকে নিজের এতোদিনের স্ট্যাটাস ও প্রিয় সব ছবি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন। কেউ কেউ আবার শাহবাগে গণজাগরণ চত্বরে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান বন্ধুদের।

অনেকেই এই রায়কে ছয় বা চার মাসের কারাদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেন, বলেন, সরকার পরিবর্তন হলে গোলাম আযমের সাজাও শেষ হয়ে যাবে।

এভাবেই চলছে মন্তব্যের ঝড়। কেউ কেউ কিছুক্ষণ পরপর নতুন মন্তব্য যোগ করছেন, যেন কোনো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা।

তবে বিরোধীমতও রয়েছে। অনেকেই সুস্পষ্টভাবে কিছু না লিখে অন্যের স্ট্যাটাসে কৌশলে প্রতিবাদ করছেন, গোলাম আযমের প্রতি অন্যায় হয়েছে বলে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

ফেসবুকারদের অনেকেই এই রায়কে সাজানো বলছেন, সরকারকে দোষারোপ করছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা শুধুই রাজনীতি।

উল্লেখ্য, সোমবার মানবতাবিরোধী অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বয়স বিবেচনায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ফাঁসি না দিয়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তাতে এভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনা ৫ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টির অভিযোগের সবকটিই প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে এ রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। তবে বয়স বিবেচনা করে গোলাম আযমকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ না দেয়ে ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেছেন, গোলাম আযম মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য। তিনি সবকিছুর জন্য দায়ী। তিনি শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করেছিলেন। তাদের তিনি অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারতেন। কিন্তু সজ্ঞানে তিনি তা করেননি। তার বয়স ৯১ বছর। শুধুমাত্র এই বিবেচনা করেই এ রায় দেওয়া হলো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ