সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদফিচারউৎকর্ষের জন্য শিক্ষা শ্লোগানের স্বার্থক বাস্তবায়নের জন্য আপনার হাত বাড়িয়ে দিন

উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা শ্লোগানের স্বার্থক বাস্তবায়নের জন্য আপনার হাত বাড়িয়ে দিন

বিশ্বের সকল লায়ন সদস্যদের জন্য প্রতিবছর ৮ই অক্টোবর একটি মহান দিবস কারণ এই দিন “বিশ্ব লায়ন্স সেবা দিবস”। ১৯১৭ সাল থেকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লায়ন্স পরিবারের সদস্যরা প্রাত্যহিক বিভিন্ন সেবা কর্মসূচীর পাশাপাশি এইদিনে বিশেষ সেবা কর্মকান্ড গ্রহণ করে আসছেন।  বিশ্বের অন্যান্য দেশের লায়নদের সাথে আজ বাংলাদেশের লায়নরাও এই দিবসটি বিভিন্ন সেবাকর্ম কান্ডের মাধ্যমে পালন করছেন। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সেবা সংগঠন। এক সময় বলা হত বৃটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য্য অস্তমিত হয় না। বর্তমানে লায়নরা গর্বের সাথে উচ্চারন করেন “লায়ন সাম্রাজ্যে সূর্য্য অস্তমিত হয় না”। তার কারণ পৃথিবীতে লায়নইজম এত বেশী বিস্তার লাভ করেছে যে, প্রতি মুহুর্তে পৃথিবীর  কোথাও না কোথাও সেবা কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। পৃথিবীতে এক গোলার্ধে যখন দিন অপর গোলার্ধে তখন রাত অর্থাৎ দিন রাত প্রতিটি মুহুর্থে পৃথিবীতে লায়ন্স এর মাধ্যমে সেবা কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ২১০টি দেশে ৪৬৬৫৪টি ক্লাব ৮৮৪ জেলার আওতায় প্রায় ১৪ লক্ষ লায়ন্স সদস্যবৃন্দ সেবা কর্মকান্ডে নিয়োজিত আছেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় দিনগুলোতে ও মানব ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে মানুষ যখন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে জীবন সংগ্রামের দিক নির্দেশনা খুঁজে ক্লান্ত সেই ক্রান্তিলগ্নে ১৯১৭ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের মানব হিতৈষী এক বীমা কর্মকর্তা মিঃ মেলভিন জোন্স এর উদ্দ্যেগে এবং নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক এবং অরাজনৈতিক যেই সেবা সংগঠন যাত্রা শুরু করেছিল, তা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবা সংগঠন আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব। বর্তমান এ বিশ্বের ২১০টি দেশে ৪৬৬৫৪ টি ক্লাব ৮৮৪ টি লায়ন্স জেলার আওতাভূক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত মানবকল্যাণমূলক সেবা কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন। বিশ্বের প্রায় ১৪ লক্ষ লায়ন সদস্য- সদস্যা পৃথিবীর কোথাও না কোথাও, কোন না কোন সময়ে মানব কল্যাণে সেবা কর্ম পরিচালনা করে চলেছেন। লায়ন পরিবারের সদস্যরা তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে যে সেবামূলক কাজগুলি সম্পাদন করে থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অন্ধত্ব নিবারণ। বিশ্বখ্যাত হেলেন কেলারের আহ্বানে লায়নরা সারা বিশ্বে ১৯২৫ সাল থেকে এই কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে মানুষের হাজারো সমস্যা। এই সমস্যা কিছুটা নিরসনকল্পে বাংলাদেশের এক মহামানব, বীর চট্টলার সূর্য্যসন্তান বিশাল দরদী মনের অধিকারী যিনি এ দেশে লায়নিজমের প্রবক্তা লায়ন মরহুম এম.আর.সিদ্দিকী, তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে এ অঞ্চলে লায়নবাদের সূচনা করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ মাল্টিপল জেলা ৩১৫ এর আওতাধীন ৬টি জেলায় ৫০৯ ক্লাবের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫৫৯ (প্রায়) লায়ন্স সদস্য সেবা কর্ম পরিচালনা করে চলেছেন।  আজকের এই দিনে বাংলাদেশের লায়নইজমের জনক প্রাক্তন জেলা গর্ভনর লায়ন মরহুম এম,আর, সিদ্দিকীকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি। বাংলাদেশের লায়নইজমের সেই সমস্ত মহৎ প্রাণ লায়ন বৃন্দ য়াঁরা চট্রগ্রাম থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের লায়ন ইজমকে সমৃদ্ধ করেছেন ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করেছেন, সেই সমস্ত মহৎ লায়নবৃন্দ ও সম্মানিত প্রাক্তন জেলা গর্ভনরবৃন্দ যথাক্রমে মরহুম লায়ন এম.এ. খালেদ, মরহুম লায়ন ডাঃ এ. এফ.এম. ইউসুফ, লায়ন ইঞ্জিনিয়ার এম. ইব্রাহীম খাঁন, লায়ন সফিউর রহমান, লায়ন এম.এ. মালেক, লায়ন কাজী আকরাম উদ্দিন আহম্মদ, লায়ন এ. কাইয়ুম চৌধুরী, লায়ন আলহাজ্ব এ. গাফফার দোভাষ, লায়ন এম. সামশুলহক, লায়ন নজমূল হক চৌধুরী, লায়ন নাদের খাঁন, লায়ন রুপম কিশোর বড়–য়া, লায়ন পি, আর, সিনহা, লায়ন আলহাজ রফিক আহম্মেদ, লায়ন ইকরাম হুসেইন, লায়ন আনোয়ার শওকত আবছার, লায়ন ডাঃ শ্রীপ্রকাশ বিশ্বাস, লায়ন মোঃ কবির উদ্দিন ভূইঁয়া, লায়ন এস.এম.ইসহাক লায়ন শাহ ্এম. হাসান, লায়ন মোঃ আসলাম চৌধুরী, লায়ন মোঃ নুরুল ইসলাম লায়ন প্রফেসর এমডি.এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী লায়ন এস.এম.সামশুদ্দিন, সদ্যপ্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন সিরাজুল হক আনসারী কে  জানাই গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞলী। বর্তমান জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসাইন, প্রথম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন শাহআলম বাবুল ও দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মনজুর আলম মনজু কে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

লায়ন সদস্য হওয়ার যোগ্যতা ঃ
আপনি যদি একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তি হন এবং সেবা ধর্মী মনোভাব আপনার মাঝে থাকে তাহলে আপনি সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তবে আপনাকে এই কথা অবশ্যই স্বরণ রাখতে হবে যে সদস্যপদ পেতে হলে আপনাকে সৎ, চরিত্রবান ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকা যাবে না।

সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া ঃ
লায়ন্স সদস্য হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন কোন ব্যক্তি যদি লায়ন্স ক্লাবের সদস্য হওযার আগ্রহ প্রকাশ করেন উনার পরিচিত কোন লায়ন্স ক্লাবের সদস্যের সাথে যোগাযোগ করবেন। আগ্রহী ব্যাক্তিকে স্পন্সর লায়ন সদস্য ক্লাব সভায় আমন্ত্রন জানাবেন। ক্লাবের ঐ সদস্য উনাদের ক্লাবের নিয়মিত সভা / বোর্ড সভায়  আগ্রহী ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে যাবেন এবং সভায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে উদ্দেশ্যটা জানাবেন। সভায় তিনি ঐ ব্যক্তি স্পন্সর হওয়ার প্রতিশ্র“তি দিবেন।  তারপর ক্লাবের বোর্ড সভায় অনুমোদন হলে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ফর্ম পূরণ ও প্রয়োজনীয় ফ্ী দিয়ে সদস্য পদ গ্রহন করবেন।

উদ্দেশ্যাবলী ঃ
পৃথিবীর মানুষে মানুষে সমঝোতার মনোভাব সৃষ্টি ও লালন। সৎরাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সুনাগরিকত্বের  আদর্শের বিকাশ সাধন। জনগণের নাগরিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নৈতিক উন্নতি বিধানে সক্রিয় আগ্রহ প্রদর্শন। লায়ন্স ক্লাবসমূহকে  সুসম্পর্ক, সম্প্রীতি ও সমঝোতার বন্ধনে একত্রিত করা। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের মুক্ত আলোচনার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা। তবে ক্লাব সদস্যগণ দলীয় রাজনীতি ও সম্প্রদায়ভুক্ত ধর্র্মীয় বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়িত হবেন না। সেবাব্রতী লোকদের ব্যক্তিগত আর্থিক লাভের বিবেচনা  ব্যতিরকে সমাজ সেবায় উৎসাহ প্রদান করা এবং ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প, বৃত্তি জীবন, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াকর্ম ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে দক্ষতার উন্নয়ন ও উচ্চ নৈতিক আদর্শের বিকাশ।

লায়ন্সের নীতিমালা ঃ
আমার বৃত্তি জীবনের মর্যাদার প্রতি আমি আস্থাবান হবো এবং সেই লক্ষ্যে নিষ্ঠার সাথে কর্মে লিপ্ত থেকে আমার পেশাগত কাজের উৎকর্ষের জন্য সুনাম অর্জনে সচেষ্ট থাকবো। সাফল্যে লাভ আমার অভীষ্ট লক্ষ্য হবে এবং সকল সৎ পারিশ্রমিক বা মুনাফা আমার ন্যায্য পাওনা বলে আমি দাবী করবো, কিন্তু অন্যায় সুবিধা  গ্রহণ বা নিন্দনীয় বা নৈতিক আচরণের কারণে আমি আত্মসম্মান হানির বিনিময়ে কোন লাভ বা সাফল্য গ্রহণ করবো না। আমি মনে রাখবো নিজের ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য অপরের ব্যবসার পতন ঘটানোর প্রয়োজন নেই। আমি আমার গ্রাহক ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছে বিশ্বস্ত এবং নিজ আচরণে অকপট থাকবো। অন্যের প্রতি আমার মনোভাব বা আচরনের সমীচনতা বা নীতির প্রশ্নে কোন দ্বিধায় উৎপত্তি হলে নিজকে  অভ্রান্ত বিবেচনা না করে সেই দ্বিধার অবসান করবো। আমি মনে রাখবো বন্ধুত্বই বন্ধুত্বের লক্ষ্য, বন্ধুত্ব কার্যসিদ্ধির মাধ্যম নয়। আমি বিশ্বাস রাখবো প্রকৃত বন্ধুত্বের মূল্য একজনের প্রতি আরেক জনের উপকার বা সাহায্য দ্বারা  নিরুপিত হয় না বরং সত্যিকার বন্ধুত্ব কিছুই দাবী করে না  এবং উপকার গ্রহণ করে শুভেচ্ছার নিদর্শনরুপে। একজন নাগরিক হিসাবে আমার জাতি, আমার রাষ্ট্র ও আমার সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমি সর্বদা স্মরণ রাখবো কথায়, কাজে ও আচরনে তাদের প্রতি আনুগত্যে আমি অটল ও অবিচল থাকবো এবং তাদের প্রয়োজনে অকুন্ঠভাবে আমার সময়, শ্রম ও সঙ্গতি নিয়োজিত রাখবো। দুঃস্থকে সহানুভুতি, দুর্বলকে সহায়তা, নিঃস্বকে আমার বিত্ত দান করে আমি মানুষের সাহায্য করবো। সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি সতর্ক ও সংযত থাকবো কিন্তু প্রশংসায় হব উদার ও অকৃপণ; আমি গড়ে তুলবো ভাঙ্গবো না কখনো।
লায়ন সদস্যরা যা করে থাকেন ঃ

লায়ন সদস্যরা সঠিক পরিকল্পনা, পদ্ধতিগত কর্ম সম্পাদন ও সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। এদেশে দুঃস্থ মানুষের রক্ত সরবরাহ লায়নদের রুটিন মাফিক কাজ। চক্ষু পরীক্ষা, আই ক্যাম্প ও সার্জিকেল আই ক্যাম্পের আয়োজন করে এবং মরণোত্তর চক্ষু দান করে লায়নরা অন্ধত্ব নিবারনের বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা কল্পে বৃক্ষরোপন, রোপিত চারা পরিচর্যা ও বৃক্ষ নিধন রোধ কল্পে লায়নদের ভুমিকা আজ জাতীয়ভাবে প্রশংসিত। মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে লায়নরা  বদ্ধপরিকর। দুর্যোগ কালীন সময়ে লায়নরা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং বন্যা কবলিতদের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের ত্রান সামগ্রী যথাসময়ে পৌঁছে দেন।

সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে লায়নরা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ও নৈশ বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকেন। দু:স্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, ঔষধ সরবরাহ, গৃহ হীনদের বাসস্থান নির্মানে সহায়তা ও মেধাবী গরিব ছাত্র ছাত্রীদের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা লায়ন সদস্যদের নিয়মিত কাজ। প্রত্যেক লায়ন্সক্লাব এক বা একাধিক স্থায়ী প্রজেক্ট পরিচালনা করে। স্থায়ী প্রজেক্ট এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, মক্তব, মাদ্রাসা নৈশ বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ, সেলাই প্রশিক্ষন কেন্দ্র , সংগীত বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্যাটেলাইট ক্লিনিক প্রভৃতি পরিচালনা করে থাকেন। অস্থায়ী প্রজেক্ট এর মধ্যে চক্ষু সার্জিক্যাল ক্যাম্প , রক্তদান কর্মসূচি, ব্লাডগ্রুপিং ক্যাম্প , ডেন্টাল ক্যাম্প , হার্ট ক্যাম্প, খতনা ক্যাম্প ও স্বাস্থ্য ক্যাম্প । লায়ন্স ক্লাব যুব বিনিময় কর্মসূচী হিসাবে তাদের প্রজেক্ট লিও ক্লাবকে স্পন্সর করেন। আর্দশগ্রাম তৈরী  ও অধিক খাদ্য ফলাও কমসূচী সফলতার জন্য কৃষকদেরকে যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করেন। এছাড়া  জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবসসমূহ পালনের মাধ্যমে গনসচেতনতার সৃষ্টি করেন।

বিশ্বের মাঝে লায়নইজমের জনক ঃ
১৯১৭ সালের ৭ই জুন আমেরিকার শিকাগো শহরের বীমা কর্মকর্তা স্যার মেলভীন জোন্স এর নেতৃত্বে অরাজনৈতিক ও অসম্প্রদায়িক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনাল এর জন্ম  হয়। ১৯১৭ সালের ৮ই অক্টোবর লায়নবাদের উদ্দেশ্যাবলী, নীতিমালা ঘোষনার মাধ্যমে ২২টি ক্লাবের সমন্বয়ে প্রথম আর্ন্তজাতিক লায়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিকাগো শহরের লাসিলি হোটেলে। সেই সম্মেলনে ৯টি অঙ্গরাজ্যে থেকে ২২টি ক্লাবের ৩৬জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে এই ৮ই অক্টোবর সারা বিশ্বের লায়ন সেবা দিবস হিসাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।  আজ থেকে সুদীর্ঘ ৯৮ বছর পূর্বে লায়নইজম নামে সে সেবার বীজ বপন করা হয়েছিল, কালের পরিক্রমায় সেই বীজ থেকে চারা অঙ্কুরিত হয়ে বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে।  ১৯১৭ সালে ৮ই অক্টোবর প্রথম আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে ডঃ উইলিয়াম -পি উডস্ – প্রেসিডেন্ট এবং  স্যার মেলভীন জোন্স কার্যকরী সচিব নির্বাচিত হন। ১৯২৫সালের লায়ন্স ইন্টারন্যশনাল কনভেনশানে বিশ্বখ্যাত সমাজসেবী হেলেন কেলার যোগদান করেন। তারঁ ডাকে সাড়া দিয়ে লায়ন সদস্যরা সারা বিশ্বের অন্ধত্ব নিবারনে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করেন।

১৯৫০ সালের মধ্যভাগে লায়ন্সক্লাব ইউরোপ, এশিয়া ল্যাট্রিন আমেরিকা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বের ২১০টি দেশের ৪৬৬৫৪ টি ক্লাবের ৮৮৪ জেলায় অন্তরভুক্ত হয়ে প্রায় ১৪লক্ষ লায়ন্স সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানব কল্যাণমূলক সেবাকর্ম পরিচালনা করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সদর দপ্তরটি আমেরিকার ইলয়নয়েস অঙ্গরাজ্যের অক্ব্র“তে অবস্থিত। বর্তমান ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন Dr. Jitsuhiro Yamada  তিনি ডাক দিয়েছেন  DIGNITY, HARMONY & HUMANITY  তিনি জাপান দেশের নাগরিক এবং পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি বিশ্বের প্রখ্যাত নিউরোসার্জন।

বাংলাদেশের লায়নইজম এর জনক ঃ
বাংলাদেশের লায়নইজম এর জনক লায়ন মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী ১৯২৫ সালে ১লা মার্চ চট্রগ্রামের সীতাকন্ডুতে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৪৭সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, কম পাশ করেন। ১৯৪৮সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে শিক্ষাকতা করেন। পরে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে উচ্চত্বর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে ও জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বানিজ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৬২-৬৩ ও ১৯৬৩-৬৪ সালে সেবা বর্ষে ডিষ্ট্রিক ৩০৫ ই পাকিস্তানের লায়ন্স জেলা গর্ভনর নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের লায়নইজম এর শুভ সূচনা করেন। তিনি ১৯৭২-৭৩ ও ১৯৭৩-৭৪ সেবা বর্ষে পর পর ২ বৎসর জেলা গভর্নর নির্বাচিত হন। আজকের এই দিনে বাংলাদেশের দুই বিশাল সৃষ্টির মহানায়ক লায়ন এম,আর,সিদ্দিকিকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তারঁ দুই বিশাল সৃষ্টির  একটি হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং তাঁর অপর বিশাল সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশের লায়নইজম। তিনি সবার মাঝে বাংলাদেশের লায়নইজমের জনক নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন ও চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

লায়ন্সজেলা ঃ
বাংলাদেশে একটি মালটিপল লায়ন্স জেলা ও তারঁ অধীনে ৬টি লায়ন্স জেলা রয়েছে। মালটিপল লায়ন্স জেলা ৩১৫ এর সদর দপ্তর ঢাকা আগরগাঁও এলাকায় অবস্থিত।  ৬টি লায়ন্স জেলা হচ্ছে যথাক্রমে – ৩১৫-এ১, ৩১৫-এ২, ৩১৫- বি১, ৩১৫-বি২, ৩১৫-বি৩ ও ৩১৫- বি৪। ৩১৫- বি- ৪এর সদর দপ্তর হচ্ছে চট্রগ্রাম নাছিরাবাদ, জাকির হোসেন রোডস্থ লায়ন্স ফাউন্ডেশানে অবস্থিত। এই জেলার অধীনে বর্তমানে ৮৫টি লায়ন্স ক্লাব রয়েছে এবং লায়ন্স সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ২০৩৮ জন (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত)। লায়ন্স জেলা ৩১৫-বিঃ বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে  বিগত ১৮ বছর পূর্বে এটি একমাত্র জেলা যা ঢাকার বাইরে তার কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই ৮৫টি ক্লাবের মাধ্যমে ২০৩৮ লায়ন সদস্য নিয়ে দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই জেলার আওতায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, সন্ধীপ, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম। এই জেলায় বিভিন্ন ক্লাবের অনেক স্থায়ী প্রজেক্ট রয়েছে। এই লায়ন্স জেলার উল্লেখ যোগ্য স্থায়ী প্রজেক্ট সমূহ হচ্ছে লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতাল, লায়ন্স ব্লাড ব্যাংক, লায়ন্স জেনারেল হাসপাতাল, পূর্বকোন লায়ন্স ব্লাড ব্যাংক, লায়ন্স মোখলেসুর রহমান ফ্রি প্লাসটিক সার্জারি প্রকল্প, লায়ন্স আনোয়ারা তাহের ফিজিওথেরাপী ক্লিনিক, লায়ন্স সার্ভিস কমপ্লেক্স, অনিরুদ্ধ বড়–য়া অনি চেরিটেবল হাসপাতাল, জিরো ক্লাব ফুট।  লায়ন্স জেলা ৩১৫ বি-৪ কে এ বৎসর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সম্মানিত জেলা গর্ভনর- লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসাইন  -এম.জে.এফ। মাননীয় জেলা গভর্নরকে সহায়তা করছেন দু জন ভাইস জেলা গর্ভনর। প্রথম ভাইস জেলা গর্ভনর লায়ন শাহআলম বাবুল- পি.এম.জে.এফ ও দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মনজুর আলম মনজু -পি,এম. জে,এফ। কেবিনেট সেক্রেটারীর দায়িত্বে লায়ন জাফর উল্লাহ  চৌধুরী ও কেবিনেট ট্রেজারার পদে দায়িত্ব পালন করছেন লায়ন শেখ সামশুদ্দীন আহমদ সিদ্দিকী -পি.এম.জে.এফ। মাননীয় জেলা গভর্নর এবার ডাক দিয়েছেন “উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা” । এই ডাকটি এক সমপোযোগী ও স্বার্থক শ্লোগান যাঁর আদর্শিক ও যৌক্তিক দিক আজ সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আমাদের প্রত্যাশা ঃ
আমরা লায়নরা জীবনের অর্ঘ্য সাজাই আশার কুসুমে, স্বপ্নের বুননিতে গড়ি  অনাগত জীবনের নকশীকাথাঁ । বিগত দিনের জীর্নতার নাগপাশ ছিন্ন করে অনাগত দিনের রক্তিম সূর্য্যরে উষ্ণ আলিঙ্গনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্র্র্রতিকুলতা অক্টোপাসের মত সহস্র বেষ্টনীতে ঘিরে আছে আমাদের সমাজকে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হউক মাদকমুক্ত ও  সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ফুলের মত সুভাসিত জীবন গড়ি। গভীর ধ্বংস স্তুপের মাঝে দাড়িঁয়ে ও আমরা নির্মানের কঠিন শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সকল আধাঁর সরিয়ে আলোকিত ঝর্নাধারায় ধুঁইয়ে দিয়ে শান্তির নীলাকাশ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার গ্রহন করতে হবে লায়নদের। সকল ভালোর প্রতি উদার আহ্বান আর অসুন্দরের প্রতি ক্ষমাহীন সংগ্রাম আমাদের। মনে রাখতে হবে এই বিশ্বে যা কিছু ভালো তা বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার। এই অধিকার আদায়ের নাম হউক লায়নইজম।

আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন স্বপ্নের পাখীরা নীড় খুঁজে পাবে, চিকিৎসাহীন মৃত্যু  করবেনা যখন উপহাস, দুস্থের মুখে হাসি আর অন্ধের চোখে আলো সেদিন থাকবে নিশ্চিত। আত্ম সচেতন ব্যক্তি ও জাতিই পারে বিশ্বের মাঝে সম্মানের  সাথে মাথা উঁচু করে দাড়াঁতে। এই জন্য যে উপকরনের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, মহতী উদ্যোগ ও সুষ্ট পরিকল্পনা। আসুন আমরা মুক্ত আকাশ, মুক্ত পৃথিবী ও সুন্দর আগামীর জন্য দূর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সুশীল সমাজ এবং আগামী দিনের আলোকিত মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যে “উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা”  শ্লোগানের স্বার্থক বাস্তবায়নের জন্য এক যোগে কাজ করে বর্তমান সেবা বর্ষকে স্বার্থক করে তুলি এবং সমাজের অবহেলিত কম ভাগ্যবান জনগোষ্ঠির জন্য কাজ করে “ওদের মুখে হাঁসি ফোটাই”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ