বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয় রুগ্ন ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ায় আমি খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে...

রুগ্ন ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ায় আমি খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রুগ্ন ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ায় আমি খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। আজ এ প্রতিষ্ঠানটি ‘গর্ব ও কর্মোদ্দীপনার প্রতীক’ হিসেবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রোববার দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডে নৌবাহিনীর জন্য দু’টি বড় যুদ্ধ জাহাজ লার্জ পেট্রোল ক্রাফট (এলপিসি) নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে (কিল লেয়িং) তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৯ সালে যে উদ্দেশ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছিলাম, তা আজ চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে। ৫টি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পর আজ অত্যাধুনিক লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করানো হলো। আমরা বিশ্ব বাজারে জাহাজ নির্মাণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা কাজে লাগানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে শুরু করেছি। এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে খুলনা শিপইয়ার্ডের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা শিপইয়ার্ড তার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের ব্যবস্থা নিয়েছে,’ বলেন তিনি। মংলার জয়মনির গোলে শিপইয়ার্ডের স্থাবর সম্পত্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরও সম্প্রসারণ করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড শ্রমবাজার বাঁচিয়ে রাখতে যে ভূমিকা রেখেছে, তা এ অঞ্চলের অন্যান্য রুগ্ন শিল্প কারখানাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। বর্তমানে এ শিপইয়ার্ড মাঝারি ও সমুদ্রগামী বড় জাহাজসহ নৌবাহিনীর জন্য ছোট বড় নৌযান তৈরি এবং মেরামত অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতে এখান থেকে জাহাজ তৈরি করে বিদেশে রফতানি করা হবে,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানির পাশাপাশি দেশেও তৈরি হচ্ছে যুদ্ধজাহাজ। এক সময় এ শিপইয়ার্ড দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিপইয়ার্ডে পরিণত হবে। বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। কিন্তু আমরা আর মধ্যম আয়ে থাকতে চাইনা। উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই নদী ও সমুদ্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। যে কারণে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমান সরকারও নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। খুলনার বন্ধ কল-কারখানা সচলের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এক সময়ে অব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের ‍বহু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করেছে। ভবিষ্যতে খুলনাকে আবারও একটি কর্মচঞ্চল ও শিল্প নগর হিসেবে দেখা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ভবিষ্যতে সরকারি কারখানা বেসরকারি খাতে ছাড়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুগ্ন শিল্প কারখানাকে প্লট আকারে তৈরি করে শিল্পে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছে দেওয়া হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে।

পদ্মাসেতুকে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের প্রবেশদ্বার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। ইতোমধ্যে সেতুর ২৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণ হলে এটি এ অঞ্চলের উন্নয়নের প্রবেশদ্বার হবে। মংলা বন্দর দিয়েও পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়বে। নদী বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, নদী বন্দর নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে। এজন্য দেশে দু’টি নৌ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা, মিজানুর রহমান মিজান, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এম খুরশীদ মালিকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে হেলিকপ্টারে করে খুলনার খালিশপুরস্থ বানৌজা তিতুমীর থেকে খুলনা শিপইয়ার্ডে এসে পৌছান প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ১১টায় মংলার দ্বিগরাজে নির্মিত বানৌজা খানজাহান আলী, বানৌজা সন্দ্বীপ ও বানৌজা হাতিয়া নামে তিনটি জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠানে নবনির্মিত এলসিটি -১০৩ ও এলসিটি ১০৫ জাহাজ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ