সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদফিচারযুব সমাজ নিয়ে আমাদের স্বনীল পদযাত্রা - লায়ন ডাঃ এম. জাকিরুল...

যুব সমাজ নিয়ে আমাদের স্বনীল পদযাত্রা – লায়ন ডাঃ এম. জাকিরুল ইসলাম

২৩শে আগষ্ট, ২০১৫ইং “বিয়াল্লিশতম বাংলাদেশ লিও দিবস”। আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ২৩শে আগষ্ট লিওইজমের শুভ সূচনা হয়। ঢাকা ধানমন্ডি লায়ন্স ক্লাবের অভিভাবকত্বে “কমলাপুর লিও ক্লাব” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে  লিও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এই আন্দোলনের জনক এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম বাংলা সবাক চলচিত্র “মুখ ও মুখোশ” এর সফল র্নিমাতা ও প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন আব্দুল জব্বার খাঁন। তিনি লিওদের মাঝে বাংলাদেশের লিওইজমের জনক নামে খ্যাত। অনেক রক্ত ও ত্যাগ তিতীক্ষার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি সবুজ শ্যামলীমা বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে গৌরব জনক স্থান অর্জন করে। যুদ্ধবিধস্থ সদ্য স্বাধীন দেশে যুবকদের মাঝে বিরাজ করছিল অস্থিরতা ও চরম হতাশা। জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও সেবার জগতে তাদের অনুপ্রানিত করতে মনস্থ করলেন মরহুম লায়ন আব্দুল জব্বার খাঁন। মূলত তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক যুব সেবা সংগঠন “লিও কèাব” আত্মপ্রকাশ করে। আজকের এই দিনে আমরা সেই মহান লায়ন যাঁর মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজ সেবার আঙ্গীনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারছে তাঁকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করছি এবং সেই সাথে বাংলাদেশের লায়নইজমের জনক মরহুম লায়ন এম,আর, সিদ্দিকীকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। লিও শব্দের অর্থ নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ। লিও শব্দের আভিধানিক অর্থ সিংহ শাবক হলেও সাংগঠনিক ক্ষেত্রে এর পরিচয় ভিন্নরুপ। লিও মনোগ্রামে দেখা যায় দুইটি সিংহ দুই দিকে তাকিয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে একটির মাধ্যমে লিওরা তাকিয়ে থাকবে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে যেখানে তারা প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অন্যের দিকে। অন্যটির মাধ্যমে লিওরা স্ব-স্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।

অভিনন্দন জানাই “উৎকর্ষের জন্য শিক্ষা” শ্লোগানের প্রনেতা সম্মানিত জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসাইন – এম.জে.এফ, ১ম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন শাহআলম বাবুল -পি.এম.জে.এফ, ২য় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ মনজুর আলম মনজু – পি.এম.জে.এফ,  কেবিনেট সেক্রেটারী লায়ন জাফর উল্লাহ চৌধুরী, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন  শেখ শামশুদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী -পি.এম.জে.এফ ও সুপ্রিয় লিও জেলা সভাপতি- লিও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান  ও তার পরিষদবর্গ কে।

লিও হওয়ার যোগ্যতা ঃ

আপনি যদি একজন সমাজ সচেতন তরুণ কিংবা তরুনী হন এবং বয়স যদি ১২ বৎসর থেকে ৩০ বৎসরের মধ্যে থাকে অবশ্যই আপনি লিও সদস্য হবার যোগ্যতা রাখেন। আন্তজার্তিক ভাবে লিও সদস্য দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে আলফা বা নিয়মিত সদস্য, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বৎসর। ওমেগা বা সিনিয়র সদস্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বৎসর। আপনাকে এই কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, লিও সদস্য পদ পেতে হলে আপনাকে সৎ চরিত্রবান ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং সমাজ রাষ্ট্রবিরোধী কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকা যাবে না।

লিও সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া ঃ

লিও  হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন কোন তরুন বা তরুণী লিও সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে উনাকে পরিচিত কোন লিও ক্লাবের সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। ঐ সদস্য উনাদের ক্লাবের নিয়মিত সভায় আগ্রহী তরুণ/ তরুনীকে নিয়ে যাবেন এবং সভায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে উদ্দেশ্যটা জানাবেন। সভায় তিনি ঐ তরুণ/তরুণীর স্পন্সর হওয়ার প্রতিশ্র“তি দিবেন। তারপর ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করবেন।

লিও ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য ঃ

১৯৫৭ সালে গঠিত এভিংটন হাইস্কুল লিও ক্লাবের অভিভাবক গ্লেন সাইড লায়ন্স ক্লাব চারটি মহৎ  উদ্দেশ্য সাধন করার দায়িত্ব দেন। দায়িত্বগুলো হল ঃ-     স্কুলের প্রশাসন ও অনুষদের সহযোগিতায় ছাত্রদের নেতৃত্বদান, পান্ডিত্য অর্জন, পৃথক দায়িত্ব, সততা ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা অর্জনে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য স্কুলের সেবা করা।     সমাজের অভাব গ্রস্থদের প্রতি সাড়া দিয়ে সমাজের সেবা করা।     গনতন্ত্রের আদর্শ এবং সরকার ও নাগরিকদের উন্নয়নে দেশের জন্য সেবা করা।     লিও সদস্যদের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সমঝোতার বন্ধনে আবদ্ধ করা।

আমাদের দেশের লিও সদস্যরা যা করে থাকেন ঃ

লিওরা সঠিক পরিকল্পনা, পদ্ধতিগত কর্ম সম্পাদন ও সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। এদেশে দুঃস্থ মানুষের রক্ত সরবরাহ লিওদের রুটিন মাফিক কাজ। লায়ন্স ক্লাবের সাথে যৌথভাবে চক্ষু পরীক্ষা, আই ক্যাম্প ও সার্জিকেল আই ক্যাম্পের আয়োজন করে এবং মরণোত্তর চক্ষু দান করে লিওরা অন্ধত্ব নিবারনের বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা কল্পে বৃক্ষরোপন, রোপিত চারা পরিচর্যা ও বৃক্ষ নিধন রোধ কল্পে লিওদের ভুমিকা আজ জাতীয়ভাবে প্রশংসিত। মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে লিওরা বদ্ধপরিকর। দুর্যোগ কালীন সময়ে লিওরা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং বন্যা কবলিতদের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের ত্রান সামগ্রী যথাসময়ে পৌঁছে দেয়। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে লিওরা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে থাকে। দু:স্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ঔষধ সরবরাহ, গৃহ হীনদের বাসস্থান নির্মানে সহায়তা ও মেধাবী গরিব ছাত্র ছাত্রীদের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা লিও সদস্যদের নিয়মিত কাজ।

লিও সংগঠনের নীতিমালা ঃ

আমি আমার বৃত্তি জীবনের মর্যাদার প্রতি আস্থাবান হবো এবং সেই লক্ষ্যে নিষ্ঠার সাথে কর্মলিপ্ত থেকে  আমরা পেশাগত কাজে উৎকর্ষের জন্য সুনাম অর্জনে সচেষ্ট থাকŸো। আমি মনে রাখবো বন্ধুত্বই বন্ধুত্বের লক্ষ্য, বন্ধুত্ব কখনো কার্যসিদ্ধির মাধ্যম নয়। আমি বিশ্বাস রাখবো প্রকৃত বন্ধুত্বের মূল্য একজনের প্রতি আর একজনের উপকার বা সাহায্যর দ্বারা নিরুপিত হয় না। বরং সত্যিকার বন্ধুত্ব কিছুই দাবী করেনা এবং উপকার গ্রহণ করে শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরুপ। একজন নাগরিক হিসাবে আমরা জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমি সর্বদা স্মরণ রাখবো। কথায়, কাজে ও আচরণে তাদের প্রতি আনুগত্যে আমি  অটল ও অবিচল থাকবো। দুঃস্থকে সহানুভূতি, দুর্বলকে সহায়তা ও নিঃস্বকে দান করে আমি তৃপ্ত হবো। সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি সতর্ক ও সংযত থাকবো কিন্তু প্রশংসাই হবো উদার ও অকৃপন, আমি গড়ে তুলবো কখনোও ভাঙ্গবো না।

প্রারম্ভিক পর্যায়ে লিও ক্লাব ঃ

আজ থেকে প্রায় ৫৮ বৎসর পূর্বে ১৯৫৭ সালে ৫ই ডিসেম্বর আমেরিকার পেনসেভিনিয়া  অঙ্গরাজ্যে মাল্টিপল জেলা ১৪ এর অর্ন্তগত সাব ডিস্ট্রিক্ট ১৪ কে এর অধীনে গঠিত হয় বিশ্বের সর্বপ্রথম লিও ক্লাব এভিংটন হাইস্কুল লিও ক্লাব যার অভিভাবকত্বে ছিল গ্লে­ন সাইড লায়ন্স ক্লাব। তখন থেকে এভিংটন হাইস্কুলে বেসবল টিমের সদস্যদের নিয়ে বিশ্বের প্রথম লিও ক্লাব গঠনের কাজ শুরু হয়। বেশ কয়েক বৎসর পর ১৯৬৩ সালে পেন-সেলভেনিয়াতে বিশ্বের দ্বিতীয় লিও ক্লাব “দি টামাকো লিও ক্লাব” গঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে অক্টোবর মাসে লিও ক্লাবকে লায়ন্স ক্লাবের অফিসিয়াল প্রজেক্ট হিসাবে  অনুমোদন দান করেন। প্রথম দিকে লিও ক্লাবের সদস্য সংখ্যা খুবই সীমিত থাকলেও অফিসিয়াল প্রজেক্ট হিসাবে অনুমোদনের পর লিও ক্লাবের সংখ্যা আশাতীত বৃদ্ধি পায়। ফলশ্র“তিতে প্রথম বৎসরের ১৮ টি দেশে ২০০টি লিও ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উপমহাদেশে ভারতের বোম্বেতে ১৯৭০ সালে লিওইজমের আগমণ ঘটে। আমাদের দেশে ১৯৭৩ সালে লিওইজম আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক লিও ক্লাব এবং চার হাজারেরও বেশি লিও সদস্য সেবা কর্মকান্ডে প্রতিনিয়ত অংশ গ্রহণ করছেন। বর্তমানে সারা বিশ্বের একশ একচল্লিশটি দেশে পাচঁ হাজার সাতশত অধিক ক্লাবের মাধ্যমে প্রায় ১৪৪৪০ জনের অধিক লিও সদস্য সেবাকার্য্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন।

লিও জেলা ঃ

লিও জেলার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন লিও আনোয়ারুল হক। ১৯৭৪ সালের ১৭ই নভেম্বর ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব প্রাঙ্গনে লিও ক্লাব সমুহের প্রয়োজনে লিও জেলা ৩১৫ গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালের প্রতিষ্ঠার ১২ বৎসর পর ১৯৮৭ সালে লিও জেলা বিভক্ত হয়ে দুটি জেলায় পরিণত হয়। জেলা ৩১৫ এ ও জেলা ৩১৫ বি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১টি মালটিপল লিও জেলা ৩১৫ এবং তাঁর অধীনে ৬ টি লিও জেলা আছে। এগুলো হচ্ছে ৩১৫-এ১, ৩১৫-এ ২, ৩১৫- বি ১, ৩১৫-বি ২, ৩১৫-বি ৩, ৩১৫- বি ৪।

লিও জেলা ৩১৫-বি ৪ ঃ লিও জেলা ৩১৫ বি-৪ এর সদর দপ্তর চট্টগ্রামস্থ নাছিরাবাদ এলাকাস্থ, জাকির হোসেন রোডস্থ লায়ন্স ফাউন্ডেশানে অবস্থিত। এই লিও জেলার অধীনে ২৯ টি সক্রিয় লিও ক্লাব রয়েছে। নবগঠিত (১৯৯৭- ৯৮ সেবাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত) লিও জেলা ৩১৫-বি ৪ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে নেতৃত্ব দেন প্রাক্তন লিও ও বর্তমানে  ২য় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মঞ্জুর আলম মঞ্জু এবং প্রতিষ্ঠাতা জেলা সচিব হিসাবে প্রাক্তন লিও, বর্তমানে রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেড কোয়ার্টার লায়ন ডাঃ এম জাকিরুল ইসলাম নবগঠিত লিও জেলার নেতৃত্ব দেন। এরপর জেলা সভাপতি হিসাবে যথাক্রমে লিও সাইফুল ইসলাম, লিও সুরঞ্জিৎ সাহা, লিও হুমায়ন কবীর  লিও নেওয়াজ এ,খাঁন রিমন, লিও মেসবাহ্ উদ্দীন, লিও নাজমুল কবীর খোকন লিও বদিউর রহমান, লিও ইউসুফ আলী, লিও শাহাজাদা গাজী মোঃ গজনবী, লিও মামুনুর রশিদ মামুন. লিও কামরুল ইসলাম পারভেজ, লিও হেলাল উদ্দিন, লিও আবু নাছের রনি, লিও রেজাউল আবেদিন, লিও গাজী মোঃ শহীদুল্লাহ ও লিও মোঃ আবুল খায়ের  ও লিও মোঃ  আনিসুল হক চৌধুরী নেতৃত্ব দেন। বর্তমান সেবা বর্ষে লিও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান লিও জেলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।  বর্তমানে লিও জেলার ৩১৫ বি -৪  এর অধীনে  ২৯টি ক্লাবের মাধ্যমে ছয় শতাধিক লিও সদস্য/ সদস্যা সেবা কর্মকান্ডে নিজেদের সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন। এই সেবাবর্ষে লিও জেলাকে সুচাররুপে পরিচালিত করছেন সম্মানিত লিও ক্লাবস্ চেয়ারম্যান লাযন কহিনুর কামাল ও যুববিনিময় চেয়ারম্যান লায়ন ডঃ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।

বাংলাদেশের লিও ইজমের জনক ঃ

আজ বাংলাদেশে বিয়াল্লিশতম  লিও দিবসের স›িধক্ষণে সেই মহান হ্নদয়ের মানুষটির কথাই বার বার মনে পড়ছে। কবে কখন কোন মুহুর্তে শ্রাবণের বৃষ্টিঝড়া সুন্দরতম এক সকালে দিনের সূর্য উদিত হওয়ার আগেই এই মহৎ জীবন হারিয়ে গিয়েছিলো, তাঁর বিয়োগ বিধূর শোক গাঁথা আমরা স্মরণে রাখিনা বা রাখার ইচ্ছে নেই। আমাদের জীবন এখন বড়ই যান্ত্রিক। মহান পুরুষদের স্মরণ করার সময় আমাদের নেই। চলমান জীবনের গ্লানি তাপ ও হতাশা ভুলে গিয়ে মনে মনে চলে যাই তাঁর স্মৃতিময় সোনায় মোড়ানো দিন গুলোতে। মরহুম আবদুল জব্বার খাঁন ছিলেন একজন খাঁটি বাঙ্গালী, তাইতো প্রচুর শ্রম ও নিষ্টার মাধ্যমে তিনি প্রথম বাংলা সবাক চলচিত্র “মুখ ও মুখোশ” নির্মান করে উর্দু ছবির জগতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। যাঁর পদাঙ্ক  অনুসরন না করলে বাংলাদেশের লিওইজমের ইতিহাস রচনা করা যায়না, সমাজ সেবার কথা বলতেই যিনি অসামান্য প্রতিভা নিয়ে মনের দিগন্তে উঁকি দেন সেই মানুষটির মৃত্যু হয় বটে কিন্তু মৃত্যু তাঁকে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলতে পারেনা। যেমন পারে সমাজের অন্যান্যদের। কী থাকে মানুষের জীবনে! অগনন আনন্দ আর থরেথরে  সাজানো সাফল্য, এরপরও মৃত্যু আসে কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় হয় মানুষের মানবিক মূল্য বোধগুলো। আমাদের মাঝে চিরহরিৎ হয়ে থাকবেন আমাদের প্রিয় সেই সম্পূর্ণ মানুষটি, যার মানবিক মূল্যবোধ ছিল সবার কাছে গ্রহনীয়।  বাংলাদেশের লিও দিবসের প্রতিটি প্রহর আমাদের কানে কানে গুন গুন করে বলছে,  তিনি তো তোমাদের পথ চলার দিশা দিয়ে গেছেন, তোমরা বিনিময়ে তাঁকে কি দিয়েছো ? জবাবে লজ্জিত মস্তকে আমরা নিরুত্তর। অকৃতজ্ঞ জাতি হিসাবে বিশ্বে আমাদের পরিচিতি ক্রমেই বাড়ছে। আমরা লিওরা কিংবা লায়ন সদস্যরা এই মহতী পুরুষকে কি শ্রদ্ধা দেখাতে পারি না ?  আমরা কি তার নামে কোন হাসপাতাল, কলেজ কিংবা বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারি না ? নিশ্চয়ই পারি, তবে প্রয়োজন উদ্যোগ ও সদিচ্ছা। যদি করতে পারি তবে সেটা হবে আমাদের লিওইজমের জন্য গৌরবজনক। আমরা আমাদের বদনাম গুছিয়ে ফেলতে চাই। আসুন আমরা যুব সমাজের নয়নমনি বাংলাদেশের লিওইজমের জনক লায়ন মরহুম আবদুল জব্বার খাঁনকে চিরম্মরণীয় করে তোলার জন্য শপথ গ্রহন করি।

আমাদের প্রত্যাশা ঃ

আমরা লিওরা জীবনের অর্ঘ্য সাজাই আশার কুসুমে, স্বপ্নের বুননিতে গড়ি অনাগত জীবনের নকশীকাথাঁ। বিগত দিনের জীর্নতার নাগপাশ ছিন্ন করে অনাগত দিনের রক্তিম সূর্য্যরে উষ্ণ আলিঙ্গনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্র্র্র্রতিকূলতা অক্টোপাসের মত সহস্র বেষ্টনীতে ঘিরে আছে আমাদের যুব সমাজকে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হউক মাদকমুক্ত ও  সন্ত্রাসমুক্ত যুব সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ফুলের মত সুভাসিত জীবন গড়ি। গভীর ধ্বংস স্তুপের মাঝে দাড়িঁয়ে ও আমরা নির্মানের কঠিন শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সকল আধাঁর সরিয়ে আলোকিত ঝর্নাধারার ধুঁইয়ে দিয়ে শান্তির নীলাকাশ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার গ্রহন করতে হবে লিওদের। সকল ভালোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান আর অসুন্দরের প্রতি ক্ষমাহীন সংগ্রাম আমাদের। মনে রাখতে হবে এই বিশ্বে যা কিছু ভালো তা বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার। এই অধিকার আদায়ের নাম হউক লিওইজম। আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন স্বপ্নের পাখীরা নীড় খুঁজে পাবে, চিকিৎসাহীন মৃত্যু করবেনা যখন উপহাস, দুস্থের মুখে হাসি আর অন্ধের চোখে আলো সেদিন থাকবে নিশ্চিত। আত্ম সচেতন ব্যক্তি ও জাতিই পারে বিশ্বের মাঝে সন্মানের  সাথে মাথা উঁচু করে দাড়াঁতে। এই জন্য যে উপকরনের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত, অভিজ্ঞতা, মহতী উদ্যোগ ও সুষ্ট পরিকল্পনা। আমাদের একান্ত বিশ্বাস বাংলাদেশের সোনার ছেলে মেয়ে বলে খ্যাত প্রিয় লিও ভাই বোনেরা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের মানচিত্রে স্থায়ীরুপ দিতে সক্ষম হবেন। আমাদের লিও ভাই- বোনেরা সুশিক্ষা গ্রহণ, সৎচরিত্র গঠন ও আত্ম মানবতার সেবায় অংশ গ্রহন করে আগামী দিনের আলোকিত মানুষ হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন। আসুন, আমরা পরম সম্মানিত জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ মোস্তাক হোসাইন -এম.জে.এফ এর যুগপোযোগী ডাক “উৎকর্ষের  জন্য শিক্ষা” স্বার্থক বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করি এবং সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করে সুপ্রিয় লিও জেলা সভাপতি লিও মোহাম্মদ  ওবায়দুর রহমান এর নেতৃত্বে “ওদের মুখে হাসি ফোঁটাই”।

লায়ন ডাঃ এম.জাকিরুল ইসলাম রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেড কোয়ার্টার লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল লায়ন্স জেলা – ৩১৫ বি-৪, বাংলাদেশ।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ