রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বুধবার থেকেই মাঠে নামছে এক হাজার নয় জন অতিরিক্ত পুলিশ।
এবার রমজানে ছিনতাই এবং যানজটকে মূল সমস্যা হিসেবে ধরে ১৮ দফা কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে পুলিশ। আর সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে নগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘ছিনতাই, চাঁদাবাজি, যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি, যানজট, যাত্রী হয়রানি, মার্কেট-শপিংমলে পকেটমারদের উৎপাত, বাসাবাড়িতে চুরি, ডাকাতিসহ ১৮ দফা সমস্যা চিহ্নিত করে আমরা নিরাপত্তার কৌশল সাজিয়েছি। নগরীর কমপক্ষে ৮০টি পয়েন্টে অতিরিক্ত প্রায় এক হাজার পুলিশ কাল (বুধবার) থেকেই দায়িত্ব পালন শুরু করবে এবং পুরো রমজানেই তারা থাকবে।’
নগর পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘নগরীতে তিন ভাগে ভাগ হয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্যে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দু’শিফটে ভাগ হয়ে স্থায়ী ডিউটিতে থাকবে পুলিশের টিম। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে টহল পুলিশ এবং হোন্ডা মোটর সাইকেলে মোবাইল টিমও দায়িত্বরত থাকবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টকেও তিন ভাগে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তার জন্য স্পর্শকাতর পয়েন্ট আছে কমপক্ষে ৩০টি। বাকি আরও কমপক্ষে ৫০টি পয়েন্ট আছে যেগুলো শুধু গুরুত্বপূর্ণ এবং মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব টিমে দায়িত্ব পালনের জন্য ১০৫টি টিম গঠন করা হয়েছে।
স্পর্শকাতর পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, জনবহুল মোড় বা পয়েন্ট এবং নগরীর প্রবেশপথকে। এসব পয়েন্টে পুরো রমজান জুড়ে স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
নগরীর যেসব পয়েন্টে স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েন থাকবে সেগুলোর মধ্যে কোতয়ালী থানায় আছে ৬টি, বাকলিয়া থানায় ২টি, চকবাজার থানায় ২টি, সদরঘাট থানায় ২টি, পাঁচলাইশ থানায় ২টি, খুলশী থানায় ৬টি, বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ২টি, চান্দগাঁও থানায় ৩টি, ডবলমুরিং থানায় ২টি, এবং হালিশহর থানায় ১টি।
নগরীর আরও কমপক্ষে ৫৬টি পয়েন্ট ঘিরে থাকবে ৫৬টি ফুট পেট্রল টিম। এর মধ্যে কোতয়ালী থানায় থাকবে ১২টি টিম, বাকলিয়া থানায় ২টি, চকবাজার থানায় ৫টি, পাঁচলাইশ থানায় ৯টি, চান্দগাঁও থানায় ২টি, ডবলমুরিং থানায় ৫টি, হালিশহর থানায় ৪টি, পাহাড়তলী থানায় ৩টি, আকবর শাহ থানায় ৩টি, বন্দর থানায় ৪টি, ইপিজেড থানায় ৫টি এবং পতেঙ্গা থানায় ২টি ফুট পেট্রল টিম থাকবে।
ফুট পেট্রল টিমের পাশাপাশি ৪৯টি পয়েন্ট ঘিরে থাকবে হোন্ডা মোটর সাইকেলে ৪৯টি মোবাইল টিমও। এর মধ্যে কোতয়ালী থানায় থাকবে ৪টি টিম, বাকলিয়া থানায় ২টি, চকবাজার থানায় ৩টি, সদরঘাট থানায় ২টি, পাঁচলাইশ থানায় ৪টি, খুলশী থানায় ৩টি, বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ২টি, চান্দগাঁও থানায় ৬টি, ডবলমুরিং থানায় ২টি, হালিশহর থানায় ৪টি, পাহাড়তলী থানায় ৩টি, আকবর শাহ থানায় ৩টি, বন্দর থানায় ২টি, ইপিজেড থানায় ৪টি, পতেঙ্গা থানায় ২টি এবং কর্ণফুলী থানায় ৩টি টিম থাকবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরীর ৮০টি টিমে দায়িত্ব পালনের জন্য গঠন করা ১০৫টি টিমে অতিরিক্ত এক হাজার নয় জন পুলিশ সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
এদের মধ্যে সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার থাকবেন ৭ জন, পরিদর্শক ৩৪ জন, উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শক থাকবেন ১০০ জন, কনস্টেবল ৪২ জন, স্পেশাল আর্মড ফোর্স ১৮৫ জন, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেণ্ট বিভাগের ১৮৮ জন, নগর গোয়েন্দা বিভাগের ৩০ জন, থানা ও ফাঁড়ির ১২২ জন, বন্দর পুলিশ লাইন থেকে ৩৩ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
একইসঙ্গে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে থাকবেন ৮ জন উপ-পরিদর্শক, স্পেশাল আর্মড ফোর্সের ৬০ সদস্য, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক’শ সদস্য, ৪০ জন মহিলা পুলিশ এবং এপিবিএন’র ৬০ সদস্যসহ মোট ২৬৮ জন সদস্য।
সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এতে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন সিএমপি’র সহকারী কমিশনার (সরবরাহ) পলাশ কান্তি নাথ, সহকারী কমিশনার (ইন সার্ভিস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার) কাজী মো.আব্দুর রহিম এবং সহকারী কমিশনার (পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট) দীপক জ্যোতি খীসা।
কন্ট্রোল রুমে স্ট্যান্ড বাই ডিউটিতে থাকবেন দু’জন আর্মড উপ-পরিদর্শক (এস আই) এবং ২০ জন করে মোট ৪০ জনের দু’প্লাটুন পুলিশ সদস্য।
সূত্র জানায়, ইফতার, এশার নামাজ এবং তারাবির নামাজের সময়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নগরীতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রত্যেক মার্কেটের সামনে পুলিশের স্থায়ী ক্যাম্প থাকবে। সেখানে পুরুষ পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি নারী পুলিশও থাকবে। মার্কেটের সামনে কমিউনিটি পুলিশ রাখা, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা এবং সিসিটিভির ব্যবস্থা করার জন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। সব থানাগুলোকেও পুরো রমজান জুড়ে সতর্ক অবস্থায় রাখা হবে।’