বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
প্রচ্ছদআরো খবর......গ্রামীণ ব্যাংক অত্যন্ত দক্ষভাবে পরিচালিত, সরকার এটি ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে- ড....

গ্রামীণ ব্যাংক অত্যন্ত দক্ষভাবে পরিচালিত, সরকার এটি ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে- ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক অত্যন্ত দক্ষভাবে পরিচালিত। এ ব্যাংকটি সরকার ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। যে কোনো মূল্যে ব্যাংকটিকে রক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের নারীরা অনেক বেশি সংগ্রামী। তারা যে করেই হোক ব্যাংকটি সংরক্ষণ করবে। আমারও সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে ব্যাংকটি যেন সরকার ধ্বংস করতে না পারে।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (এমচেম) মাসিক মধ্যাহ্ন ভোজসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে ড. ইউনূসের সঙ্গে সহংতি জানাতে আসলে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি বেঁচে থাকতে গ্রামীন ব্যাংকের গায়ে একটি আঁচড়ও লাগতে দেব না। দেশের মানুষ আমার সঙ্গে আছে। এরপরও সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।

বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত আড়াই বছর ধরে সরকার ব্যাংকটি নিয়ে এমন সব সুপারিশ দিচ্ছে যা সম্পূর্ণ মন্দ (আগলি)। ব্যাংকটি নিজস্ব টাকায় গঠিত এবং অত্যন্ত দক্ষভাবে পরিচালিত হলেও সরকার ব্যাংকটিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো করে চালাতে চাচ্ছে। কতটা ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা! (হাউ ডেয়ার টু সে দ্যাট)। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, দক্ষ একটি ব্যাংককে সরকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটি কেমন ধরনের সরকার! গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৪ লাখ গ্রাহক রয়েছে উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, গ্রাহকদের সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ভোটার। তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না হোক অন্তত দেশের প্রয়োজনেই এ ব্যাংকটি ধ্বংস করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।

এমচেমের প্রেসিডেন্ট আফতাব-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, গণ ফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাঈদুজ্জামান, মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জন ডব্লিউ লুইস, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদাস প্রমুখ ।

সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যত গড়তে সামাজিক ব্যবসার অবদান। সামাজিক ব্যবসা প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মুনাফা করে টাকা উপার্জনের জন্য সামাজিক ব্যবসার ধারণা নয়, মানুষের সমস্যা সমাধান করাই এর মূল উদ্দেশ্য। দরিদ্র মানুষকে খাদ্য দেয়া বা বেকার জনগণকে টাকা দেয়া স্থায়ী কোনো সমধান নয়। স্থায়ী সমাধান হলো তাদেরকে কর্মক্ষম ও কাজের সুযোগ করে দেয়া। এক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা অত্যন্ত কার্যকরী। অন্যথায় দরিদ্ররা কর্মবিমুখ হয়ে পড়বে এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না। তবে রাজনীতিবিদরা স্থায়ী সমাধানের চেয়ে তাৎক্ষণিক সমাধান করতেই উদগ্রীব। তারা টাকা নিয়ে সহজে এসব সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না।

ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন ডব্লিউ লুইস বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্ভাবিত সামাজিক ব্যবসার ধারণা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আর এ ধরনের উদ্যোগ অনেক দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতেও বেশ অবদান রেখেছে।

বাংলাদেশের পোশাক খাত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান নয়। বরং ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোই পারে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি প্রদান ও সুন্দর কর্মপরিবেশ তৈরি করা নিশ্চিত করতে। কারখানার কর্মপরিবেশ সুন্দর করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা অবদান রাখতে পারে। তবে সর্বোপরি পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। যেন তারা পোশাক কেনা বন্ধ না করে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার। গত ২৬ জুন সংসদে প্রদত্ত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ২ জুলাই ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলেও এখন পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী তার কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেননি। এদিন দেশব্যাপী কালো ব্যাজ ধারণ করে গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ