রোববার সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে মিথ্যার ফুলঝুরি হিসেবে আখ্যায়িত করলেন প্রধানমন্ত্রী। রোববার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আফ্রো-এশিয়া সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে রোববার এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার রাখা বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) প্রেস কনফারেন্স করেছেন, সুলিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন। চমৎকারভাবে মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়ে গেছেন।‘
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশবাসীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পরে যেভাবে দেশকে বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছি এর আগে কি অবস্থা ছিল ? খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডায় ভাঙচুর করা হয়। দুর্নীতির কারণে দেশে বিনিয়োগ বন্ধ ছিলো। বাংলাদেশে কেউ আসতে ভয় পেত। তার আমলে আমাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,‘তার ছেলে যে দুর্নীতিবাজ তা আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের রায়ে ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। তার আমলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির এমন অবস্থা হয় যে ১/১১ এসেছিল। হাওয়া ভবনের দুর্নীতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন,‘হাওয়া ভবনে কমিশন না দিলে ব্যবসা হবে না। তাই দেশে ব্যবসা হয়নি। দুর্নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে। চারদলীয় জোটের আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মানব পাচার হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ তাদের সরকারের আমলে সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে মানব পাচার করেছে। যার খেসারত দিয়েছে দেশের মানুষ।’ খালেদা জিয়া ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশের ভেতর মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। বিজেপি নেতা অমিত শাহ’র টেলিফোন নিয়ে, আমেরিকার ৬জন কংগ্রেস ম্যানের বিবৃতি নিয়ে তার মিথ্যাচার এর প্রমাণ।
এর আগে নিজের লিখিত বক্তব্যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের পাশে থাকার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা নেপালের পাশে থাকবো। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আজও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আমরা আশা করি, আমাদের দেশে যেন এ ধরনের দুর্যোগে জনগণের জানমালের ক্ষতি না হয়। ইন্দোনেশিয়া সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,ইন্দোনেশিয়ার সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেই। সম্মেলন চলাকালীন অনেকের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করি এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হয়। প্রথম দিনের বক্তব্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করি। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, জলবায়ু ইস্যুতে সবার সহযোগিতা কামনা করি।’
উল্লেখ্য, গত ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশিয়ান দ্বিতীয় সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। দেশটির রাজধানী জাকার্তায় অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে ৩৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ১০৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলনের ফাঁকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো,মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামিদাল্লাহ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা এবং কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আবদুল্লাহ জেড আল-মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লংয়ের সঙ্গেও আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি সম্মেলনের একটি প্লেনারি সেশনে মিশরের প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম মেহলাবের সঙ্গে যৌথভাবে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।