রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে শেষ শিবিরের হরতাল

চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে শেষ শিবিরের হরতাল

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্রশিবিরের হরতাল ঢিলেঢাল‍াভাবে শেষ হয়েছে।  সহিংস ঘটনায় শিবিরের আতংক ছড়ানোর চেষ্টা থাকলেও তা উপেক্ষা করে রাস্তায় ‍ছিল প্রচুর যানবাহন। নগরীতে খোলা ছিল অধিকাংশ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারী-বেসরকারী অফিস খোলা থাকায় হরতালের মধ্যেও অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল মানুষের জীবনযাত্রা।

হরতালে সহিংসতার পরিকল্পনা এবং হরতাল চলাকালে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ ও ৠাব নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এক জামায়াত নেতাসহ মোট ৬ জনকে আটক করেছে।

এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। নগরীতে প্রায় এক হাজার ৮’শ অতিরিক্ত পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন ছিল। এছাড়া ৬০জন বিজিবি সদস্যও মোতায়েন ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান  বলেন, ‘নগরীতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন ছিল। সব থানাগুলোকে সতর্ক অবস্থায় থেকে হরতালে সহিংসতা মোকাবেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।’

বুধবার ভোর ৬টায় হরতাল শুরুর পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় একটি টেম্পুতে আগুন দেয় পিকেটাররা। সেখান থেকে পুলিশ গিয়ে পিকেটারদের ধাওয়া দিলে আরেক গ্রুপ নগরীর বাকলিয়া থানার চামড়ার গুদাম এলাকায় এসে টহল পুলিশকে লক্ষ্য করে ৪-৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে বাকলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রবিউল আহত হন।

নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ  বলেন, ‘চামড়ার ‍গুদাম এলাকায় পিকেটাররা একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ গিয়ে ধাওয়া দিলে তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।’

বাকলিয়া থানার ওসি একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘শিবির কর্মীদের ছোঁড়া ককটেলে এএসআই রবিউল সামান্য আঘাত পেয়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এক শিবির কর্মীকে আটক করেছি।’

এদিকে হরতাল চলাকালে নগরীর ষোলশহর দু’নম্বর গেট এলাকায় শিবির কর্মীরা একটি হিউম্যান হলারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ওই এলাকায় কয়েকটি ককটেলেরও বিস্ফোরণ ঘটে বলে খবর পাওয়া গেছে। নগরীর জেল রোডেও শিবির কর্মীরা একটি টেম্পুতে আগুন দেয় বলে খবর পাওয়া গেছে।

কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন  জানান, চেরাগি পাহাড় এবং আন্দরকিল্লা এলাকায় পিকেটিংয়ের চেষ্টাকালে দু’জন শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

চান্দগাঁও থানার ওসি বাবুল চন্দ্র বণিক  জানান, হরতালে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে বুধবার ভোর রাতে চারটি ককটেল এবং ৩টি চকলেটবাজিসহ এক শিবির কর্মীকে মোহরা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া হরতাল চলাকালে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পিকেটিংয়ের সময় চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ‘এ’ ব্লকের সামনে থেকে এক শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

ৠাব সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার গভীর রাত আড়াইটার দিকে হালিশহর এলাকা থেকে উত্তর-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের জামায়াতের সভাপতি ফখরী জাহান সিরাজ ওরফে সবুজকে (৫০) আটক করা হয়। হরতালে নেপথ্যে থেকে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেয়ার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়।

নগরীর বাইরে সীতাকুন্ড উপজেলা সদরে হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে শিবির কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিনব্যাপী হরতালের সমর্থনে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বুধবার সকালে উপজেলা সদরে মিছিল বের করে। তবে পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিবির কর্মীরা পালিয়ে যাবার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘শিবির কর্মীরা মিছিল করে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর তারা পালিয়ে গেছে। এসময় তারা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।’

তবে জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় হরতালের সমর্থনে কোন মিছিল, সমাবেশ পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার একেএম এমরান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে রাস্তায় আছি। কোন পিকেটিং দেখিনি। নিরুত্তাপভাবে হরতাল চলছে।’

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দিনভর প্রচুর পরিমাণে বাস, টেম্পু, হিউম্যান হলার চলাচল করতে দেখা গেছে। রিক্সা চলাচল ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। নগরীর সঙ্গে চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ উপজেলাগুলোর যোগাযোগেও হরতাল কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারেনি। সকালে কিছু কিছু দূরপাল্লার যানবাহনও চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক ছিল। তুলনামূলকভাবে কম হলেও পণ্যবোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যানও বন্দর থেকে বের হয়ে গন্তব্যে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ