শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিননেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে সাধারণ ভোটারদের কাছে ঘেঁষতে পারছেন না আজম নাছির

নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে সাধারণ ভোটারদের কাছে ঘেঁষতে পারছেন না আজম নাছির

নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে সাধারণ ভোটারদের কাছে ঘেঁষতে পারছেন না আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। প্রচারণায় গিয়ে হাসিমুখে আ জ ম নাছির হাত বাড়াচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সেই হাসিমুখ দেখতে পাচ্ছেন না ভোটররা, সেই হাতও পৌঁছতে পারছেনা ভোটারদের কাছে। রোববার বেলা ১২টার দিকে নগরীর বক্সিরহাট ওয়ার্ডে প্রচারণায় যান আ জ ম নাছির উদ্দিন। এর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে বক্সিরহাটের প্রবেশপথ জেল রোডের আনসার ক্লাবের সামনে ভিড় জমায় শত শত নেতাকর্মী।

নাছির আমানত শাহ’র মাজারের সামনে আসার পর আনসার ক্লাবের সামনে থেকে সেদিকে দৌঁড়াতে শুরু করেন কর্মীরা। পেছনে ছুটেন গণমাধ্যম কর্মীরা। হট্টগোল, চিৎকার-চেঁচামেচিতে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। এর মধ্যেই একটি হার্ডওয়্যার সামগ্রীর মার্কেটে ঢুকে যান নাছির।  সঙ্গে সঙ্গে বক্সিরহাট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়জুল্লাহ বাহাদুর তার কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে ওই মার্কেটে ঢুকে যান। সেটা দেখে একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাজী নূরুল হকও তার সমর্থকদের নিয়ে মার্কেটের সামনে আসেন। মানুষের ভিড়, হইচই শুরু হওয়ার পর নাছির দ্রুত মার্কেট থেকে বেরিয়ে যান।

রাস্তায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আ জ ম নাছিরকে ঘিরে বেস্টনী তৈরি করেন শ’খানেক নেতাকর্মী। পুরো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে। ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়িসহ সৃষ্টি হয় হাঙ্গামা পরিস্থিতির। চলতে থাকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি শ্লোগানও। বেস্টনীর ভেতর দিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে বেশ কয়েকবার কর্মীদের সরে যাবারও নির্দেশ দেন আ জ ম নাছির। কয়েকজনকে নিজেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কর্মীদের বেস্টনী থেকে নিজেকে আর মুক্ত করতে পারেননি আ জ ম নাছির। জেল রোডে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে শত শত ভোটার আ জ ম নাছিরকে একনজর দেখতে কিংবা হাত মেলানোর আশায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের কাছেই ঘেষতে পারেননি প্রার্থী।

আ জ ম নাছির প্রচারণায় আসবেন শুনে হাজী জাকির হোসেন নামে এক বৃদ্ধও এসে দাঁড়িয়েছিলেন একটি ‍মার্কেটের সামনে। ধাক্কা সামলাতে না পেরে তিনি একটি দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাজী জাকির বলেন, ‘কী প্রচারণা করল, প্রার্থীর মুখটাও তো দেখতে পাইলাম না।’

ধাক্কাধাক্কি করে কোনমতে বক্সিরহাট বাজারের প্রবেশমুখে আসেন আ জ ম নাছিরসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল ‍মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাউন্সিলর প্রার্থী চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক তিমির বরণ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতা। গলিতে প্রচারণা চালানোর জন্য বানানো সুসজ্জিত মিনি ট্রাকে প্রার্থীকে তুলতে গিয়ে শুরু হয় আরেক বিপত্তি। আগে থেকেই সেই ট্রাকে হুড়মুড় করে উঠতে শুরু করেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

নোমান আল মাহমুদ হ্যান্ডমাইকে বারবার ঘোষণা দেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের ভাইয়েরা ট্রাকে উঠবেন না। ট্রাকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং এলাকার মুরব্বী-গণ্যমান্য লোকজনকে উঠতে দেন।’ কিন্তু তার নির্দেশকে পাত্তাই দেননি অনুসারীরা। আ জ ম নাছিরকেও উঠতে হয় ভিড় ঠেলে। খোরশেদ আলম সুজনকে তোলার সময় ট্রাক চলতে শুরু করলে তিনি ঝুলে থাকেন। চলন্ত ট্রাকে তাকে মাড়িয়েই উঠে যান কয়েকজন। সুজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় নিয়ে আনুমানিক দশ-বিশ গজ যাবার পর ট্রাক থামানো হয়। পড়ে যান সুজন। তারপরও আবারও তাকে ট্রাকে তোলা হয়। ক্লান্ত সুজন ট্রাকে উঠে একটি চেয়ারে বসে পড়েন। পরে আ জ ম নাছিরকে নিয়ে ট্রাক চলে যায় বক্সিরহাট ওয়ার্ডের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের ভেতরে। সেখানে তিনি হাত নেড়ে ও মাঝে মাঝে হ্যান্ডমাইকে কথা বলে ভোট চান।

এসময় আ জ ম নাছির বলেন, ‘আমি আ জ ম নাছির উদ্দিন। এবার মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি। আমার মার্কা হাতি। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাওয়ার জন্য আপনাদের এলাকায় এসেছি। আমাকে ভোট দিয়ে আপনাদের সেবার করার সুযোগ দেবেন।’ কর্মীদের ভিড়-হাঙ্গামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। একইভাবে ক্ষুব্ধ আ জ ম নাছিরের জন্য প্রচারণায় যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা এবং গণ্যমান্য লোকজনও। প্রচারণায় যুক্ত কয়েকজন বলেন, এক গ্রুপ আছে যারা নাছির ভাই যেখানেই যাচ্ছেন তাকে ঘিরে ধরছেন। তারা বৃত্ত তৈরি করে নাছির ভাইকে আবদ্ধ করে ফেলছেন। মনে হচ্ছে, তারা প্রচারের চাইতেও চেহারা দেখানোর প্রতিযোগিতায় বেশি লিপ্ত।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের প্রার্থী যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এতে কিছুটা ভিড় হয়ত হচ্ছে।’

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ