নগরীতে শীঘ্রই ব্যাটারি রিকশা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ। রোববার বেলা ১২টায় নগরীর ওয়াসার মোড়ে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন তিনি। ব্যাটারি রিকশা চালুর দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক-মালিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক-মালিক শ্রমিক লীগ।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার গরীব মেহনতি মানুষের সরকার। এ সরকারের আমলে দিনমজুর ও শ্রমিকরা তাদের কাঙ্খিত সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে। গত এক মাস পূর্বে চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি সরকারের কোন নির্দেশ বা আইন না। আদালতের নির্দেশে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ আছে। আমাদের দেশে আদালত ব্যবস্থা স্বাধীন। কিন্তু সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই ব্যাটারি রিকশা চালুর ব্যবস্থা হবে। আশাকরি আদালত শ্রমিক জনতার প্রাণের আকুতি শুনে অবিলম্বে ব্যাটারি রিকশা চালুর অনুমতি দিবেন।’
ব্যটারি রিকশায় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আদালতের অনুমতির পর ব্যাটারি রিকশা চালু হলে রিকশায় প্রযুক্তিগত কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সরু চাকার পরিবর্তে মোটা সাইজের চাকা ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাটারি রিকশা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে এ যানবাহনের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব পাল্টে যাবে। বর্তমানে ব্যাটারি রিকশা বন্ধ থাকায় জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই অবিলম্বে ব্যাটারি রিকশা চালু করে শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর আহ্বান জানান তিনি।
বেগম খালেদা জিয়াকে শ্রমিক জনতার শত্রু উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত তিনমাস বিএনপি চেয়ারপার্সন আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করেছে। চালক ভাইদের পেটে লাথি মেরেছে। বিএনপির সাবেক মেয়র ব্যাটারি রিকশা চালকদের উন্নয়নে কিছু করেননি। তিনি নিজের আখের পরিপূর্ণ করছেন। তাই শ্রমিক জনতাকে সাবধান থাকতে হবে। শ্রমিক জনতার প্রাণের বন্ধু আওয়ামী লীগের পাশে থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা চালকরা চুরি করে না। তারা পরিশ্রম করে সামান্য অর্থ উপার্জন করে সংসার চালায়। কিন্তু হঠাৎ করে ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করার ফলে হাজার হাজার রিকশা চালক, মিস্ত্রী, মালিক,তাদের লক্ষাধিক পরিবার পরিজন আজ অনাহারে দিনাতিপাত করছে। বার বার আবেদনের পরও প্রশাসন ব্যাটারি রিকশা চালুর ব্যাপারে কোন আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না। এভাবে যদি দীর্ঘদিন ব্যাটারি রিকশা বন্ধ থাকে তবে পেটের দায়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হয়ে যদি শ্রমিক মেহনতি মানুষ মারার আইন করে তবে সে আইন জনগণ মানবে না। অবিলম্বে নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চালু না করলে শ্রমিক মালিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করবে। কারণ পেটে ভাত না থাকলে, পরিবারের সদস্যরা বেঁচে না থাকলে শ্রমিক জনতা ঘরে বসে থাকবে না।’ তাই নগরীর প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশার চালক-মালিকদের পরিবারগুলোকে বাঁচার সুযোগ দিতে ও জনস্বার্থে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালু করতে অনুমতি দেওয়ার জন্য তিনি আদালতের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা সফর আলী, সংগঠনের সভাপতি স্বপন বিশ্বাস, কানু কান্তি হাজারী, সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ধর, মো.সানাউল্লাহ, মো.আলাউদ্দিন, মো.ইমন, মো.জাহেদ, মো.ইলিয়াছ প্রমুখ।
গত বছরের ৩ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রামে ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের রায় দেয় উচ্চ আদালত। এরপর ৩১ অগাস্ট থেকে বন্দরনগরীতে ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে নগর পুলিশ। ওইসময় অভিযানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে রিকশা মালিক-চালকরা। পরবর্তীতে গতবছরের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলমের বাস ভবন ঘেরাও করে মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয় তারা। এরপর তারা উচ্চ আদালতে রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করলে আদালত ছয়মাসের জন্য রায় স্থগিত করে।