বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
প্রচ্ছদটপ১৩ ব্যাংকে মূলধন-প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা : অর্থমন্ত্রী

১৩ ব্যাংকে মূলধন-প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা : অর্থমন্ত্রী

ষ্টাফরিপোর্টার (বিডিসময়২৪ডটকম)

দেশে তিন ধরনের ব্যাংকে মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি চলছে। বর্তমানে ১৩টি ব্যাংকে এ ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ সব ব্যাংকের মধ্যে চারটিতে মূলধন এবং তিনটিতে প্রভিশন ঘাটতি নেই। অপর দিকে ৪৭টি ব্যাংকে ঋণখেলাপির সংখ্যা হচ্ছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার।

আজ মঙ্গলবার বিকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হলে টেবিলে উপস্থাপন করা প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদকে এ সব তথ্য জানান।

এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান—গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ হলো নয় হাজার ৬৪৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংক বাদে অপর তিনটি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি হচ্ছে সাত হাজার ৪৯৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতির দৌড়ে সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকের যথাক্রমে পাঁচ হাজার ২৪৪ কোটি ৯৪ লাখ এবং চার হাজার ৬০৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

অর্থমন্ত্রী জানান—বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ডিবিবিএল) মূলধন ঘাটতি পাঁচ হাজার ৭৬৭ কোটি ৩৬ লাখ। প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ এক হাজার ৭১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে ডিবিবিএলের মূলধন এবং বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি নেই। অপর দিকে, বেসরকারি পাঁচটি ব্যাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি এক হাজার ৪৯৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স, আল-আরাফাহ ইসলামী, প্রাইম ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৬০ কোটি ২২ লাখ টাকা। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। এ ছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

অপু উকিলের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান—গত মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাবে ৪৭টি ব্যাংকে ঋণখেলাপির সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ৭৫৮। এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে ২৩ হাজার ৩৪৭। বেসরকারি ৩০টি ব্যাংকে ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭৬ হাজার ৩৩১। বৈদেশিক নয়টি ব্যাংকের ঋণখেলাপি ১০ হাজার ২৫২ এবং বিশেষায়িত চারটি ব্যাংকে ১৮ হাজার ৮২৮। বর্তমানে ২৬ হাজার ৫৭৯টি ঋণখেলাপি মামলা বিচারাধীন।

একই বিষয়ে বেগম আহমেদ নাজমীন সুলতানার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান—গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৪০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে খেলাপি ঋণ আদায় করেছে এক হাজার ৩২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

মো. ইসরাফিল আলমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান—২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৯২ জন ঋণগ্রহীতার চার হাজার ৬৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে।

মো. শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান—বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে আয় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

বেগম আশরাফুন নেছা মোশারফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান—বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ৩১ মে পর্যন্ত কৃষকদের মধ্যে সব তফসিলি ব্যাংক থেকে ৪৯ হাজার ৪২৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।

এ বি এম আবুল কাসেমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান—গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে টিআইএনের সংখ্যা ৩৩ লাখ ২৫ হাজার ১৮৩। এর মধ্যে ৩১ লাখ নয় হাজার ১০৯ জন ব্যক্তি, ৮১ হাজার ৬৪৬টি কোম্পানি এবং অন্যান্য শ্রেণির এক লাখ ৩৪ হাজার ৪২৮।

জয়নাল আবদিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান—১৯৯৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কোনো শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়নি। কারণ, বিচারিক আদালতে মামলার আধিক্য, বিচারকের স্বল্পতা, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কিংবা হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক বেঞ্চ না থাকা এবং বিচারিক আদালতের বিভিন্ন আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ থেকে উচ্চ-আদালতে একাধিকবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ-আদালত থেকে স্থগিতাদেশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ