বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনসিসিসি: অনুদান ও কর নির্ভর এক হাজার ১০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার...

সিসিসি: অনুদান ও কর নির্ভর এক হাজার ১০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিশাল বাজেট

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

কর ও অনুদানের উপর নির্ভর করে হাজার কোটি টাকার বাজেট দিলেও চট্টগ্রামের মেয়র এম মনজুর আলমের এ বিশাল বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষমতা নেই বলে মনে করছেন খোদ কাউন্সিলর এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা। গত দু’অর্থবছরে এ ধরনের বড় আকারের বাজেট দিলেও শেষ পর্যন্ত তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে না পারার অভিযোগ ‍আছে। আর এজন্য মূলত মেয়রের অদক্ষতাকেই দায়ী করছেন নাগরিকরা।

বৃহস্পতিবার সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ সাধারণ সভায় উন্নয়ন অনুদান ও কর নির্ভর এক হাজার ১০৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিশাল আকারের বাজেট পেশ করেন মেয়র এম মনজুর আলম।

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এলেও তিন বছরের মাথায় এসে মেয়র বলছেন, কর্পোরেশনের একার পক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব নয়। এজন্য নগরবাসীর সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন মেয়র।

চট্টগ্রামের নগরবাসী মেয়রের এই বক্তব্যকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারা বলছেন, এম মনজুর আলম জলাবদ্ধতা নিরসনের অঙ্গীকার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে নগরবাসীর প্রধান দুর্ভোগ দূর করার মূল দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছেন মেয়র।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগরীর উন্নয়ন নিয়ে মেয়র মহোদয়ের কোনো ভিশন নেই। পাঁচ বছরের মেয়াদ নিয়েই তার যত চিন্তা-ভাবনা।’

তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত তিন বছরে বেশকিছু কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে বলেছেন মেয়র এম মনজুর আলম।

মেয়র বলেছেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে গত বছর নগরীর ১৬টি খালের মোট ১৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খনন করা হয়েছে। ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া খাল থেকে বলিহাটস্থ কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন খাল খনন এবং কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন প্রধান খালের মুখে ১৫ কোটি ব্যয়ে স্লুইট গেইট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এখনো পর্যন্ত এসব কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো সুফল ভোগ করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, সামান্য বৃষ্টিতে এখনো নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। আর ভারী বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার  বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে বাজেট বইয়ের কথাগুলো অনেক সুন্দর। কিন্তু কর্পোরেশন এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক  করছে ‍মাত্র। এভাবে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়।’

এদিকে গত দু’অর্থ বছরে সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল ৯১৫ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার টাকার। তবে বাস্তবায়িত হয়েছিল মূল বাজেটের মাত্র ৪০ শতাংশ। যার পরিমাণ ছিল ৩৬০ কোটি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৯৬০ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মূল বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার টাকার। যা মূল ‍বাজেটের ৪৪ শতাংশ মাত্র।

২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের এক হাজার ১০৬ কোটি ৩০ লাখ ৭ হাজার টাকার মূল বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫৭১ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাজেটে ২১৩ কোটি টাকার বিপরীতে কর্পোরেশন এ খাতে বরাদ্দ পেয়েছিল মাত্র ৬২ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাউন্সিলর বলেন, ‘গত দু’বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিশাল আকারের এ বাজেট বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। উন্নয়ন অনুদানের সম্ভাব্য অর্থ পুরোপুরি পাওয়া না গেলে বাজেট বাস্তবায়ন একেবারেই অসম্ভব।’

বাজেট বক্তব্যে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র এম মনজুর আলম বলেন, ‘কর্পোরেশনের ২৯৭ কোটি ও ২৯৪ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ২৯৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছি। আশা করি, একনেকে অন্য প্রকল্পেরও ‍অনুমোদন পাওয়া যাবে। এতে নগরীর উন্নয়নে অনেক দূর এগিযে যেতে পারব।’ তিনি নগরীর উন্নয়নে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে বাজেট বক্তব্যে মেয়র এম মনজুর আলম নগরবাসীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকান্ড গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্যযোগ্য কর্মকান্ডগুলো হল ১৫০জন ছিন্নমূল ভবঘুরের জন্য নগরীর চারটি বহুতল ভবন, বৃদ্ধনিবাস, সিটি কর্পোরেশনের চাকরিতে হিজড়াদের জন্য কোটা সংরক্ষণ, গার্মেন্ট পল্লী নির্মাণ, নির্মাণ শ্রমিক পল্লী নির্মাণ, বিভিন্ন বাজারে ফরমালিন পরীক্ষার জন্য যন্ত্র স্থাপন ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ