সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিপরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে : খালেদা জিয়া

পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে : খালেদা জিয়া

পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বিএনপির চলমান অবরোধ কর্মসূচি চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছি। কর্মসূচি চলছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। ব্রিফিং পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বেও চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপি প্রধান বলেন, অবরোধ চলছে, অবরোধ চলবে।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশি প্রহরায় নারী, শিশু, ছাত্র-ছাত্রীদের বহনকরী যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হতাহত ও দগ্ধ করা হয়েছে। এসব পৈশাচিক বর্বরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। তাকে ‘’অবরুদ্ধ করে রাখার আগেই ক্ষমতাসীনরা সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, তারা ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল সকল যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে। এরপর আমি গত ৫ তারিখে এই কার্যালয় থেকে বেরুবার চেষ্টা করলে আমাদেরকে তালাবন্দি করে রাখা হয়। ট্রাক, জলকামান, সাঁজোয়া যান দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় আমাদের ওপর নিষিদ্ধ পিপার স্প্রে ছোঁড়া হয়। এর বিষক্রিয়ায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

বিএনপি প্রধান বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় গত এক বছর ধরে আমাদের এবং দেশবাসীর ন্যূনতম অধিকার হরণ করা হয়েছে। জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, হামলা-মামলা চালানো হয়েছে। জঘণ্য ও উস্কানিমূলক ভাষায় আমাদেরকে ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে। তারপরেও আমরা বারবার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেছি। তারা আমাদের আহ্বান ও প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়ে অস্ত্রের ভাষায় সব দমিয়ে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে।

বিএনপি প্রধান বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করেছে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। মিছিলের ওপর গুলী করেছে। টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কোনো সুযোগ না দিতে ক্ষমতাসীনরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশে বিএনপি ও ২০ দলের নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিরাট মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামছেন। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের মদতপুষ্ঠ সন্ত্রাসীরাও হামলা করছে। এর মধ্যে গুলিতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন।

বিএনপি ও ২০ দল নিরীহ নিরপরাধ জনগণকে হত্যা ও তাদের ওপর আক্রমণ করা কিংবা তাদেরকে পুড়িয়ে মারার নৃশংস অপতৎপরতায় বিশ্বাস করেনা দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা রাজনীতি করতে চাইনা, কখনো করিনি। অতীতে যাত্রীবাসে গান পাউডার দিয়ে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা মেরে ও লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং পুলিশ খুনের অপরাজনীতি আওয়ামী লীগই করেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এখনো তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপি ও ২০ দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার ও অত্যাচারের পথ প্রশস্ত করছে।  এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বোমাবাজদের গ্রেফতার না করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ঘর-বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের আটক করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, নারীসহ পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে। এসব হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার জড়িতদের আগামীতে অবশ্যই আইনামলে আনা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতীত নিরপেক্ষ ঐতিহ্য বহাল রেখে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনো তালাবন্ধ। দলের নেতা-কর্মীরা কেউ নিরাপদে বাসায় থাকতে পারেনা। হত্যার উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানের উপর গুলি হয়েছে। তার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি নেতা সাবিহউদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আমাদের দলের অনেক সিনিয়র নেতার বাসা ও অফিসে গুলি ও বোমা হামলা হয়েছে। আমাদের দলের অফিস অনেক জায়গায় পোড়ানো হয়েছে। কাউকে ধরা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অনেক জায়গায় অস্ত্র, বোমা ও গুলীসহ ধরা পড়েছে। তাদের সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশের চলমান সংকট নিছক কোনো আইন-শৃংখলার সমস্যা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি রাজনৈতিক সংকট। এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। সকল প্রতিকূলতার মধ্যে, নির্যাতন সয়ে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য বিএনপিসহ ২০ দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ক্ষমতাসীনরা যদি শুভবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে আমার কার্যালয় থেকে গতকাল গভীর রাতে বিনা ঘোষণায় অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে থাকে তাহলে আমি তা স্বাগত: জানাই। আমি তাদেরকে হিংসা ও নাশকতা, অন্তর্ঘাত ও জুলুমের পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই।

খালেদা জিয়া বলেন, অত্যাচার, দমন অভিযান, গণগ্রেফতার বন্ধ করুন। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা বন্দিদের মুক্তি দিন। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর থেকে সব বাধা তুলে নিন। যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তা স্বাভাবিক করুন। মানুষকে স্বস্তি ও শান্তি দিন। উস্কানি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের অপরাজনীতি বন্ধ করুন। তিনি বলেন, জনগণের ভোট দেওয়ার যে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিন এবং অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঘোষণা দিলেই বুঝবেন অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ