চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)
চট্টগ্রামের রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে টেন্ডারবাজি নিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে দু’জন নিহতের ঘটনার মূল হোতা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর (৪০) ও তার অনুসারী পাঁচজনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশানে একটি বাসায় আত্মগোপনরত অবস্থা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানা পুলিশ, ডিএমপি’র গোয়েন্দা এবং সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের একটি যৌথ টিম এ গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে। নগরীর কোতয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ঢাকায় আত্মগোপন অবস্থা থেকে বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে নিয়ে পুলিশের একটি টিম সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।’
বাবরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন, প্রেমাসিস মুৎসুদ্দি ওরফে ছোটন বড়ুয়া (৩৫), শাহ আলম, পলাশ দাশ, রবি দে এবং মাজহারুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শাহ আলম ঘটনার মূল হোতা বাবরের দেহরক্ষী বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) বনজ কুমার মজুমদার।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিআরবি এলাকায় টেন্ডার কার্যক্রম নিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে আমরা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তাই এ ঘটনায় বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ সন্ধ্যার মধ্যে বাবরকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে বলে জানান নগর পুলিশ কমিশনার।
কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন বাবরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া আরও পাঁচজনের বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের মধ্যে শুধু বাবর, শাহ আলম এবং প্রেমাসিসের নাম মামলার এজাহারে পাওয়া গেছে।
সোমবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় দেড়কোটি টাকার তিনটি কাজের টেন্ডার নিয়ে সিআরবি এলাকায় হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক সাইফুল আলম লিমনের অনুসারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে আট বছরের এক শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছে।
এ ঘটনায় কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মহিবুর রহমান বাদি হয়ে ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় লিমনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। আর বাবরকে ৫৩ নম্বর আসামী করা হয়েছে।
এদিকে এ মামলার উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অনেককেই ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় আট কিশোর গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কারা কিশোর-এটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নই। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি। তারা সবাই সন্ত্রাসী।’
দরপত্র কার্যক্রম থাকা সত্বেও আগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ এ ব্যাপারে আমাদেরকে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। আর পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’
মামলার এজাহারে বাদি উল্লেখ করেছেন, সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে ঘটনার সময় সাইফুল আলম লিমন এবং হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর উপস্থিত ছিলেন। তাদের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের ঘটনার পর লিমনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। আর বাবরের বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। আর সাইফুল আলম লিমন নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘটনার পর পুলিশ নগরীর পলোগ্রাউন্ড এলাকায় রেলওয়ে স্কুলের আশাপাশে এবং নন্দনকানন, সিআরবি, ডিসি হিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় বাবরসহ পাঁচজন গ্রেপ্তারের পর এ সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭ জনে।
সোমবার ৫২ জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম লুৎফুল মজিদ নয়নের আদালতের হাজিরের পর রিমান্ডের আবেদনের উপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালতে ৪৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি ৮ জন বয়সে কিশোর হওয়ায় তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রজীবনে ওমরগনি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে কোতোয়ালী থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩টি মামলা হয়।
১৯৯৯ সালে নগরীর টাইগার পাস মোড়ে সিটি কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস ও ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে। এসমব মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক ছিল।
বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায়। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফিরে এসে আবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং রেলওয়ের সব ধরনের টেন্ডারে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। গ্রেফতার হওয়া যুবলীগের এই শীর্ষ ক্যাডার নগরীর নন্দনকানন এলাকার বুড্ডিষ্ট টেম্পল রোডের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পুত্র।