বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানা কারণে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তবে এবার সংবাদ মাধ্যমে তিনি শিরোনাম না হলেও ভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ করে সংসদের ভেতরে-বাইরে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জাতীয় সংসদে অশালীন, অশ্রাব্য, অসংসদীয় এবং কুরুচিপুর্ণ বক্তব্য দিয়ে যখন এমপিরা প্রতিদিন ুর্নাম কুড়িয়েছেন তখন সরকারি দলের এমপি হয়েও ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানিয়েছেন এম এ লতিফ।
প্রসঙ্গত এম এ লতিফ চিটাগাং চেম্বার ও বন্দর নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিবাদে জড়ান। বন্দর নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন পরিচালক ক্যাপ্টেন জোবায়েরের সঙ্গেও তার দ্বন্দ্ব ঘটে যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়। এছাড়া এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বন্দর জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার গায়ে হাত তুলে এবং পুলিশের সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বর্তমান সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সঙ্গে অশালীন আচরণ করে তীব্র সমালোচিত হন।
গত রোববার বাজেটর ওপর আলোচনা করার সুযোগ পেয়েও বক্তৃতা শেষ করেননি এই ব্যবসায়ী এমপি। এমনকি ভিন্ন ধরনের এক প্রতিবাদও জানিয়েছেন তিনি। নিজের আসন ছেড়ে বসেছেন অন্য আসনে গিয়ে। বিরোধীদল সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওয়াক আউট করে, আর সরকারি দলের সংসদ সদস্য হওয়ায় এম এ লতিফ করেছেন আসন বদল।
গত রোববার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আব্দুল লতিফকে আট মিনিট সময় দিলেও তিনি তার জন্য বরাদ্দ সময়ের পুরোটা বক্তৃতা দেননি প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে। মাত্র দুই মিনিট সময় নিয়ে তিনি বলেছেন, কয়েকজন সাংসদের দেয়া বক্তব্যের কারণে সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে। এর প্রতিবাদে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে ওয়াক আউট করতে চান। তার এই প্রতিবাদকে অভিনব এবং সংসদের ইতিহাসে প্রথম নজির বলে উল্লেখ করেছেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।। ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিককে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী এম এ লতিফের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদকে “অভিনন্দনযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন।
সোমবার টেলিফোনে কথা হয়েছে এম এ লতিফের সঙ্গে। জানতে চেয়েছিলাম তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া। দলীয় এমপিদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়ার কথা জানালেন তিনি। বললেন “অনেকে ওয়েলকাম করেছেন আবার কেউ কেউ বলেছে কাজটা ঠিক হয়নি।” তবে সংসদীয় দলের চিফ হুইপ বা হুইপরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি। প্রশ্ন ছিল কী বিবেচনা থেকে তিনি এমন প্রতিবাদ জানালেন। এম এ লতিফ বলেন “আমার যে সন্তান ক্লাস সেভেনে পড়ে সে আমাকে বলেছে সংসদের এমপিদের কটূক্তি শুনে নাকি তার বন্ধুর বাবা-মারা টিভি বন্ধ করে দেয়। এতে এমপির ছেলে হিসেবে সে লজ্জা পায়, আর তা জেনে বিবেকের তাড়নায় বাজেট বক্তৃতা না দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদল জাতীয় সংসদে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের যে তুবড়ি ছুটিয়েছিলেন এম এ লতিফই প্রথমে তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অভিনব কায়দায়। বলা যায় তাকে অনুসরণ করেই সোমবার আওয়ামী লীগের জুনায়েদ আহমেদ পলক ও বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ শুধু প্রতিবাদই নয়, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন কটূক্তিকারী সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।। দুই তরুণ সাংসদ যাদের বয়স এখনো ৪০ বছর পার হয়নি তারাই আনলেন অশালীন কথা বলার জন্য আর্থিক জরিমানা এবং বহিষ্কারের জন্য কমিটি করার প্রস্তাব। অসংসদীয় বক্তব্য বন্ধে স্পিকারকে কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জুনাইদ পলক বলেন, “এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। তাদের বক্তব্যে আমরা যেন অপমানিত না হই। অসংসদীয় বক্তব্য একপাঞ্জ করুন। শুধু একপাঞ্জ করেই শেষ করা যাবে না; কারণ এর আগেই সরাসরি সম্প্রচারে তা পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতিটি শব্দের জন্য ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করুন।” সরকারি দলের এই সাংসদের কথায় উৎসাহিত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন ১৮ দলীয় জোটের সাংসদ ভোলার এমপি আন্দালিব রহমান পার্থ। তিনি স্পিকারকে একটি কমিটি করার প্রস্তাব রেখেছেন। যে কমিটি সাংসদদের দেওয়া বক্তব্য পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে।
তরুণ এই দুই সাংসদকে সমর্থন জানিয়েছেন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু। আর মঙ্গলবার এক সেমিনারে বিএনপির সাংসদ ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও অশালীন বক্তব্যের জন্য আর্থিক জরিমানা করার আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ জুনায়েদ পলকের প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। বলা যায় সংসদে কুরুচিপূর্ণ বক্তৃতা বন্ধের ব্যাপারে এখন একমত হয়েছেন সাংসদরাই। আমরা এখন দেখতে চাই এ ব্যাপারে নবীন কিন্তু মেধাবী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কী পদক্ষেপ নেন ?