সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী |
আগামী ২৫ অক্টোবরের আগে তারতো নয়ই, ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারো ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী।
নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার বিরতিতে প্রসিকিউশনের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন তিনি।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রোববার পঞ্চম দিনের মতো সাফাই সাক্ষ্য দেন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাকা চৌধুরী। সাক্ষ্যগ্রহণ অসমাপ্ত অবস্থায় সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১৭ জুন থেকে নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষী হিসেবে টানা সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছেন সাকা চৌধুরী। রোববারও পুরো দিন ধরে সাফাই সাক্ষ্য দিলেও এখনও মামলা ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি সাকা চৌধুরী।
এ নিয়ে প্রসিকিউশন বার বার আপত্তি জানিয়ে মূল প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় বেঁধে দেওয়ার দাবি জানান।
ট্রাইব্যুনালও তাকে বলেন, “মিস্টার চৌধুরী ফ্যাক্টে আসেন।”
এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “আমার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ১৬ পৃষ্ঠার ভূমিকা পড়া হয়েছে। তা ছাড়া এই আইনে কোথাও সাক্ষ্যের জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার কথা বলা নেই। তাই যদি বলা হতো, তাহলে গোলাম আযমের রায় আড়াই মাস হয়ে গেলেও হচ্ছে না কেন?”
এ সময় তিনি খেলাফত আন্দোলন নেতা মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলীর উদাহরণ দিয়ে বলেন, “দুই মাস ২৪ দিন তার নিজের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তখন আমরা ছিলাম পরাধীন। আর একটি স্বাধীন দেশে সাক্ষ্যে মাত্র ১০ সেশন হয়েছে বলে খোঁটা দেওয়া হচ্ছে।”
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা আপনার বক্তব্য শুনবো, তবে মামলার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত বিষয়ে।”
তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “মামলার বিষয়ে তো বলবোই। একুট ধৈর্য ধরতে হবে। আপনাদেরতো অনেক ধৈর্য। ধৈর্য নিয়েই আপনাদের শুনতে হয়।”
এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে সাকা চৌধুরী বলেন, “সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমাকে যথেষ্ট সময় দিন। তা না হলে আমাকে ফাঁসি দিয়ে দিন। ৪২ বছরের ঘটনা সংক্ষেপ করা যাবে না।”
তিনি আদালতকে প্রশ্ন করে বলেন, “শাহবাগ চত্বরের আওয়াজে ট্রাইব্যুনালের আইন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আপিলে আটকে গেছে। দেখছেন ৭ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আপিলের আর ৩৪ কার্যদিবস বাকি রয়েছে।”
চেয়ারম্যান তার কাছে জানতে চান, শেষ করতে আর কত দিন লাগবে। তখন সাকা চৌধুরী বলেন, “আমি বলতে পারবো না। আমাকে যে তিনটা প্যারামিটার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, সে তিনটা বিষয়ের বাইরে যাবো না। আমার জীবন বিপন্ন। আমি কোথায় ছিলাম সেটা প্রমাণ করতে হবে।”
সাকা চৌধুরী আরো বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় বরাবরই রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। বাংলাদেশে ১/১১ এর সময়ে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মতো নেতাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “১/১১ এর সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মিডিয়া, আইনজ্ঞ, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের একটি অংশ সহায়তা করেছিল। এদের মধ্যে মিডিয়ার অংশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক। আর আইনজ্ঞদের অংশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একজন বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ।”
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “সামরিক, বেসামরিক আমলাতন্ত্রের যে অংশ মঈনুদ্দিন সরকারকে সহায়তা করেছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।”
এছাড়া তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ওপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “১/১১ সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা দিয়েছিল। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল।”
প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ তার এসব বক্তব্যের বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করে বলেন, “মামলার সঙ্গে যুক্ত নয় এমন বক্তব্য দিয়ে সময় নষ্ট করার তো কোনো মানে হয় না।”
তিনি বলেন, “তার (সাকা চৌধুরী) প্রত্যেকটি কথার গুরুত্ব থাকতে পারে তার জীবনে। এসব কথা দিয়ে তিনি তার আত্মজীবনী গ্রন্থ লিখতে পারেন। ট্রাইব্যুনালে এসব বিষয়ে বলার কোনো দরকার নাই। তিনি মামলার সঙ্গে যুক্ত এমন বিষয়ে বলতে পারেন।”
ট্রাইব্যুনালের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় আসামি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আগামী ২৫ অক্টোবরের আগে আমারতো নয়ই, এই ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারো ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হবে না।”
মধ্যাহ্ন বিরতির পর তিনি তার বাবা একেএম ফজলুল কাদের চৌধুরীর রাজনৈতিক পরিচয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সাকা চৌধুরীসহ ৫ জন সাক্ষী সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারবেন বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নূরুল ইসলাম ঘটনা ও জব্দ তালিকার সাক্ষী মিলিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী। আর ৪ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যুষে গ্রেফতার করা হয় গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর মামলায় সাকা চৌধুরীকে। পরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। গত বছরের ৪ এপ্রিল সাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের উল্লেখ করা হয়।