এবার অস্ত্রনির্ভর ছাত্র রাজনীতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দায়ী করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের অট্রিয়াম ব্যাঙ্কুইটিং হলে বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুর প্রতি এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ অভিযোগ আনেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় সংগঠনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমদ অসীম, যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুস সালামসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
দীর্ঘ সোয়া ঘণ্টার বক্তব্যে বিএনপি প্রতিষ্ঠার প্রাসঙ্গিকতা বর্ণনা করতে গিয়ে তারেক মূলত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই বিষোদগার করেন। অধিকাংশ সময়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করতে আগের মতোই তার মতো করে ‘ইতিহাসের পাঠ’ দেন দলের উপস্থিত নেতাকর্মীদের। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে তার মতো করে যেভাবে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনিয়েছেন, সেসবেরই পুনরাবৃত্তিই ছিল সোমবারের অনুষ্ঠানেও।
অস্ত্রনির্ভর ছাত্র রাজনীতি বঙ্গবন্ধুই আমদানি করেছিলেন, এটি প্রমাণ করতে গিয়ে তারেক রহমান নাম প্রকাশ না করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তৎকালীন এক ছাত্রলীগ নেতা, যিনি নাকি বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভার একজন সদস্য ও একটি পত্রিকার সম্পাদক তার এক সাক্ষাৎকারের গল্প শোনান নেতাকর্মীদের। এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের তৎকালীন শীর্ষ নেতা আব্দুর রাজ্জাকও উপস্থিত ছিলেন, এমনটাই জানান তারেক। তিনি জানান, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য ওই ছাত্রলীগনেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে অভিযোগ করেছিলেন, ছাত্রলীগকর্মীরা বিরোধী পক্ষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। উত্তরে বিশ্রামরত লুঙ্গি পরা বঙ্গবন্ধু (তারেকের ভাষায় অবশ্য ‘শেখ মুজিব’) বলেছিলেন, মার খেয়ে অভিযোগ করলে চলবে না, পাল্টা আঘাত করতে হবে।
এ সময় নাকি তিনি লুঙ্গির ভাঁজ থেকে একটি জিনিস ওই ছাত্রলীগ নেতার হাতে দিয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করতে হবে। ওই ছাত্রলীগ নেতা বিদায় নিয়ে যখন গাড়িতে ওঠেন তখন নাকি বঙ্গবন্ধু তাকে তার দেওয়া ওই ধরনের জিনিস গাড়িতে রাখারও পরামর্শ দেন।
তারেক তার বক্তৃতায় নেতাকর্মীদের বলেন, ‘লুঙ্গির ভাঁজ থেকে বের করে দেয়া ওই জিনিসটি কী, তা তো আর আপনাদের বোঝানোর প্রয়োজন নেই।’ দীর্ঘ বক্তৃতায় তারেক জিয়া তার বাবা জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে বারবারই বঙ্গবন্ধুকে ‘ব্যর্থ ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। শেখ হসিনাকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হাসিনার জ্ঞাতসারেই হয়েছে বলে আবারও মন্তব্য করেন তারেক।
তারেক বলেন, মুক্তাঙ্গনে যেখানে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়েই হঠাৎ করে সেই সমাবেশ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানকে হাসিনা বার বার স্টেজে ওঠার জন্য ডাকছিলেন। কারণ, গ্রেনেড ফুটবে, এটি তিনি জানতেন। তারেক রহমানের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিষোদগার এবং বিএনপি প্রতিষ্ঠা ও জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার উচ্চারিত হলেও দলের আগামী আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো কথা ছিল না।
অন্যান্য বক্তারা তাদের বক্তৃতায় আগামী আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে তারেকের কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও তারেক বিষয়টি এড়িয়ে যান তার বক্তৃতায়। এর আগে অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে একটি কেক কেটে তারেক রহমান দলের ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।