রবিবার, মে ১২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনবিভিন্ন বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও স্মৃতিচারণ কর্মসূচি শুরু করলেন মুক্তিযোদ্ধারা

বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও স্মৃতিচারণ কর্মসূচি শুরু করলেন মুক্তিযোদ্ধারা

ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের শেখ বংশ। এ বংশের গোড়াপত্তন করেন শেখ বোরহান উদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ। বিশাল সম্পদের মালিক। ১৯২০ সাল ১৭ মার্চ। এই বংশে জন্ম নেন এক শিশু। বেড়ে উঠেন মধুমতির পাড়ে। বাল্যকালেই ঝুঁকে পড়েন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে। তরুণ বয়সে যুক্ত হন মুসলিম লীগে। তার নেতৃত্বের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়তে লাগলো চারপাশে।

একসময় গ্রামের সে শিশুটি হয়ে উঠলেন সবার ‘মুজিব ভাই’। এরপর স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ছয়দফা, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পথ বেয়ে সেদিনের সে শিশুটি মুজিব ভাই থেকে হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু। পরনে সাদা পাঞ্জাবি, কালো কোট। মঞ্চে দাঁড়ানো। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে এনে দেন লাল সবুজের পতাকা।

এভাবেই এগিয়ে যায় গল্প। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেন শিক্ষার্থীরা। শিহরিত হয়ে উঠেন মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের হিংস্রতার ঘটনা শুনে। পাঠ নেন সোনার বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও স্মৃতিচারণ করে শুনানোর কর্মসূচি নেন মুক্তিযোদ্ধারা।

রোববার বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক  মেজবাহ উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী ও স্মৃতিচারণ করেন চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন, অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জামশেদ আলম চৌধুরী, অধ্যাপক ছাবের আহমদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধ‍া সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সরোয়ার কামাল দুলু, জিয়া উদ্দিন শাহীন ও শরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের বলেন,‘আমার শিক্ষা জীবন শেষ করার পর দু’বছর বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছিলাম। একটা ছোট ঘরে বঙ্গবন্ধু থাকতেন। খাটটিও ছিল ছোট। জাকজমক কোন কিছু ছিল না। কখনো তিনি বঙ্গভবন বা গণভবনে থাকেননি। আমি ভাবতাম একটি রাষ্ট্রের প্রধান কিভাবে এত সাধারণ জীবন যাপন করতেন।’ তিনি বলেন, ‘তিনি অন্য দশজন নেতার মতো ছিলেন না। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাই তারপক্ষে এমন সাধারণ জীবন যাপন সম্ভব ছিল।’

জেলা প্রশাসক বলেন, পাকিস্তানিরা ছিলেন শক্তিশালী। বিশ্বের পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের পক্ষে ছিল। কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কারণ আমাদের বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা ছিলেন। তার কৌশলের কাছে পাকিস্তান হেরে যায়।শিক্ষার্থীদের সঠিক ইতিহাস জানানোর উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে কয়েক হাজার মেজর আছে। কেউ যদি বলে সে স্বাধীনতার ঘোষক। এটা একটা হাস্যকর বিষয়। কারো পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে ঘোষক হয় না। সুতরাং মেজর জিয়াউর রহমান কখনো স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন না। এ ধরণের বানানো ইতিহাস আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো বেশিদিন ঠিকে না। এটাও ঠিকেনি। ইঙ্গ মার্কিন চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির নেতা থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্ব নেতাই পরিণত হচ্ছিলেন।

প্রতিটি নিপীড়িত-নির্যাতিত জাতির পক্ষে বিশ্ব দরবারে কথা বলছিলেন। এটা সাম্রাজ্যবাদী ও স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা মেনে নিতে পারেনি। তাই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তুলে দেন জেলা প্রশাসক।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরী এবং ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী শোনাবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, স্বাধিকার আন্দোলনে আত্মত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে সংগঠিত করাসহ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরবেন মুক্তিযোদ্ধারা।

১১ আগস্ট ডা.খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে, ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, ১৩ আগস্ট নাছিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হবে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন স্ব স্ব উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কর্মসূচির আয়োজন করবে তাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

এরপর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ওইদিন সকাল ১০টায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ১৬ আগস্ট সকালে শিশু একাডেমিতে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ওইদিন বিকেলে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে।

  • বিষয়:
  • UMo
আরও পড়ুন

সর্বশেষ