শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদইসলাম ও জীবনআজ পবিত্র জুমাতুল বিদা ও লাইলাতুল কদর

আজ পবিত্র জুমাতুল বিদা ও লাইলাতুল কদর

আজকের দিনটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব ও ফজিলত পূর্ণ। আজ একই সাথে পালিত হবে পবিত্র জুমাতুল বিদা ও লাইলাতুল কদরের মত পরম সৌভাগ্যের রজনী। দিনে রমজান মাসের শেষ জুমার নামাজ আদায় শেষে ইফতারের পর লাইলাতুল কদর। নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত আর দান সদকার মাধ্যমে পবিত্রতম এ দিন অতিবাহিত করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

আজ শুক্রবার পবিত্র জুমাতুল বিদা। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদা হিসেবে পালিত হয়। রমজান মাস জুড়ে রোজা রাখা আর ইবাদত বন্দেগীর পর জুমাতুল বিদার দিনে দেশের ধর্মপ্রাণ কোটি কোটি মুসল্লি এই পবিত্র মাসকে বিদায় জানাতে জুমার নামাজ আদায় করবেন। সকল মসজিদে নামাজ আদায় শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার শিকার নিরীহ শিশু, নারীসহ সব মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হবে।

রমজানের বিদায়ী শুক্রবার মুসলমানদের জন্য অতি মূল্যবান। এ দিন সিয়াম শেষ হয়ে যাওয়ার সতর্কতামূলক দিবস। যে তিনটি বিষয় জুমাতুল বিদাকে আল্লাহর করুণা, দয়া, ক্ষমা, তথা মাগফিরাত ও নাজাত লাভের দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তা হচ্ছে রমজান, জুমাতুল বিদা এবং শেষ শুক্রবার আলকুদস দিবস। আজ সব জামে মসজিদে জুমার খুতবায় খতিব সাহেবেরা ‘আল বিদা এয়া শাহরু রামাদান’ বলে রমজান মাস যে বিদায় নিচ্ছে সেদিকে সকলকে সতর্ক করবেন।

এদিকে আজ একই দিনে পালিত হবে পবিত্র লাইলাতুল কদর। পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে পবিত্র এ রজনী। পবিত্র কোরান শরীফে এ রাতকে হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পুণ্যময় সম্মানিত এ রাতেই নাজিল হয়েছিল পবিত্র কোরান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে সারারাত অতিবাহিত করবেন। এ উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদে ইবাদতের বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। লাইলাতুল কদর বা শবই কদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে ক’টি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ এই শবই কদর। পবিত্র রমজানের এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরান অবতীর্ণ হয়। কোরান নাজিলের মাস হিসেবে রমজান যেমন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত, তেমনি কোরান নাজিলের কারণেই শবই কদর অতি ফজিলত ও তাৎপর্য বহন করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, কোরান আমি লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। এ রাতের তাৎপর্য বর্ণনা করে কোরানে বলা হয়েছে, ‘তুমি জান লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। (সূরা কদর)

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরানের একাধিক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। লায়লাতুল কদর এমন এক রাত যে রাতে আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করেন। তার সময় নির্দিষ্ট করেন এবং হুকুম নাজিল করেন ও প্রত্যেক বস্তুর ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এ রাতে ফেরেশতাগণ রবের নির্দেশে সকল কার্য সম্পাদনের জন্য নেমে আসেন। লায়লাতুল কদর এমন এক রাত, আল্লাহর নিকট যার বিরাট মহত্ব ও ফজিলত রয়েছে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে রাসূল (.) বলেন, তোমাদের নিকট রমজান উপস্থিত হয়েছে। এর মধ্যে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। তিনি এ রাত সম্পর্কে আরও বলেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারি)

তবে সাধারণভাবে ২৭ রমজানের রাতে শবই কদর পালন করা হয়ে থাকলেও ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে হাদিস শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মহিমান্বিত এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। তাঁদের মতে, লাইলাতুল কদর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদের (.) উম্মতদের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও নেয়ামত। আর কোন নবীর উম্মতকে এ ধরনের ফজিলতপূর্ণ রাত বা দিন দান করা হয়নি। আগের যুগের উম্মতরা অনেক আয়ু পেতেন। সে জন্য তাঁরা অনেকদিন ইবাদত করারও সুযোগ পেতেন। সে তুলনায় শেষ নবীর উম্মতদের আয়ু নিতান্তই কম। এ জন্য আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ দয়ায় মহানবীর (.) উম্মতকে মহিমান্বিত এ রাত দান করেছেন। যারা এ রাতে ইবাদত করে কাটাবেন তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

মহাপুণ্যময় এ রাতে বিশ্বের মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করবেন। তবে এ রাতে কেউ নির্দিষ্ট কোন ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, পবিত্র কোরান তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহতাহলিল, দানসদকা সবই এ রাতে করা যায়। আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যে কোন ইবাদত করলে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব।

পবিত্রতম রজনী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মহিমান্বিত রজনী পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’ পবিত্র লাইলাতুল কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকতময় ও পুণ্যময় রজনি। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আলকোরান লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখশান্তির পাশাপাশি আখিরাতের মুক্তির পথ দেখায়।’ তিনি বলেন, সিয়াম সাধনার মাস রমজানের মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর। এই রাতে মানব জাতির পথ নির্দেশক পবিত্র আলকোরআন পৃথিবীতে নাজিল হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘পবিত্র এই রাতে ইবাদতবন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, বরকত ও মাগফেরাত।’ তিনি এই পবিত্র রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, অব্যাহত শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি পালন করবে। মসজিদ ছাড়াও মাজার, খানকাহ শরীফে পালন করা হবে কেয়ামুল লাইল, খতমে তারাবিহর আখেরি মুনাজাতসহ নানা কর্মসূচি।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ