চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। বহুপ্রচলিত এ প্রবাদটি সবার জানা। তাই বলে চোর নিজের ঘরেই করবে চুরি- এটি হয়ত ছিল অজানা। কিন্তু প্রতারক ইমা এখন সে ঘটনারও খলনায়িকা। আপন ভাই তানভীর খালেদের শ্বশুরবাড়ি থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কৌশল সেই একই। রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিজের বলে চালিয়েছে। নিজ গ্যারেজে জায়গা নেই বলে পুরনো মডেল হিসেবে বিক্রি করেছে। পরে রেন্ট-এ-কারের মালিক থানায় জিডি করে সে গাড়ি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। গতকাল এমন তথ্য জানিয়েছেন তানভীর খালেদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তারা জানান, তানভীর ও তার বোন ইমার প্রতারণার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ
হওয়ার পর তানভীরকে ডিভোর্স দিয়েছে তার স্ত্রী। চুকে ফেলেছে সকল সম্পর্ক। তাদের তথ্যমতে- তাদের মেয়ে যখন এইচএসসিতে পড়তো তখনই কুনজর পড়ে তানভীর খালেদের। নায়িকা ও মডেল বানানোর কথা বলে সম্পর্ক গড়ে। ধীরে ধীরে জমিয়ে তোলে ঘনিষ্ঠতা। বিয়ে করে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে। কিন্তু কিছুদিন পরই তানভীর খালেদ, ইমা ও তার পরিবারের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যায় ওই মেয়ের কাছে। এতে ডিভোর্স দিয়ে ছেড়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনি। তাদের নানা হুমকির মুখে আতঙ্কিত ওই মেয়ে তানভীরকে ছাড়তে চাইলেও এতদিন পারেনি। এদিকে আজ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে প্রতারক রেজওয়ানা খালেদ ইমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ১০ লাখ টাকা প্রতারণার একটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা জানতে চাইবেন, কারা তার সহযোগী ও কিভাবে যোগাড় করতো গাড়ির ভুয়া লাইসেন্স। বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেয়া কোটি কোটি টাকা কোথায় পাচার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ভাড়া করা গাড়ি নিজের বলে অন্যের কাছে বিক্রি করতো প্রতারক ইমা ও তার ভাই তানভীর খালেদ। বিআরটিএ থেকে ভুয়া কাগজপত্রও বের করতো। তার ধারণা, বিআরটিএ-র কার্যালয়ে ইমার প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য রয়েছে- যারা গাড়ির ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহ করে ইমার প্রতারণা সহজ করে দিয়েছে।
ক্যামেরার সন্ধানে গোয়েন্দারা: ইমা ও তার সহযোগীরা অসংখ্য তরুণীর সর্বনাশ ঘটিয়েছে। নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেছে আপত্তিকর ছবি ও দৃশ্য। সমপ্রতি দুই তরুণী ও তিন যুবক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এমন অভিযোগ দিয়েছে। তবে গোপন করেছে তাদের নাম-পরিচয়। বর্ণনা করেছে ব্ল্যাকমেইলের গল্প। তাদের আশঙ্কা- তাদের আপত্তিকর ছবি ও দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেছে ইমা। এর আগে এক তরুণী নায়িকা হওয়ার আশা নিয়ে ইমার ফাঁদে পড়েছিল। নানা কায়দায় নিপীড়নের শিকার হয়ে সব তথ্য যে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ফাঁস করে দিয়েছে। এরপরই গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ইমা ও তার অপরাধ চক্রের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করছে। বিশেষ করে ওই গোপন ক্যামেরা উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, ইমা ভাড়া থাকতো পুরাতন ডিওএইচএসের ৪ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়িতে। বাইরে প্রচার করতো ওই বাড়ির মালিক তার স্বামী। কিন্তু গ্রেপ্তারেরর পর তার ছলাকলার সবই ধরা পড়েছে এলাকাবাসীর কাছে। এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপন করেছে ইমার ভাই তানভীর খালেদ ও পিতা আলমগীর খালেদ। মোবাইলম ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গেও। গত শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে ইমাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। দু’টি মামলায় দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপরই অভিনব নানা প্রতারণার অভিযোগ আসতে থাকে ইমা ও পরিবারের বিরুদ্ধে। কখনও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, কখনও সরকারি কর্মকর্তা। নিজেকে উপস্থাপন করে ফ্যাশন ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী হিসেবে। কখনও পরিচিত হয় মডেল ও নায়িকার ছদ্মবেশে। তার পদবির তালিকায় আরও আছে চিত্রনির্মাতা, ভিওআইপি, গাড়ি ব্যবসায়ী, আদম বেপারী ও মৎস্য খামারি। সুযোগ বুঝে বিনোদন পত্রিকার সম্পাদকও বনে যায় সে। এভাবে গত ৭ বছর ধরে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।