বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনসিডিএ’র ১৮ প্রকৌশলীর ভাগ্য চেয়ারম্যানের হাতে

সিডিএ’র ১৮ প্রকৌশলীর ভাগ্য চেয়ারম্যানের হাতে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ১৮ প্রকৌশলীর ভাগ্য সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের হাতে। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় থেকে তাদেরকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য করা হবে বলে আদেশ দেয়া হয়। আর সেই হিসেবে অভিযুক্ত এসব প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। চিঠিটি গতকাল রোববার বিকেলে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এখন বিধি অনুযায়ী চার্জশিটভুক্ত এসব প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা।
এদিকে এসব প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হলে থমকে যাবে সিডিএ’র হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প এবং বন্ধ হয়ে যেতে পারে সকল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ। সিডিএ’র অভিযুক্ত এসব প্রকৌশলীর দাবি, তারা সিডিএ প্রবিধানমালা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে চাকরি করছেন। সরকারের এ আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্নও হতে পারেন।
জানা যায়, সিডিএ থেকে গত ছয়মাস আগে অভিযুক্ত এসব প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি হবে না তা জানতে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। আর সেই নির্দেশনার আলোকে গত বৃহস্পতিবার একটি নির্দেশপত্র সিডিএতে আসে। সেই নির্দেশে কি লেখা রয়েছে তা জানতে সিডিএ’র একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলা হয়। কর্মকর্তারা জানান, মামলায় চার্জশিটভুক্ত এসব প্রকৌশলীকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে গণ্য করার জন্য বলা হয়েছে।
সিডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনোভাবেই সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না জানিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন চৌধুরী সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি ছুটিতে রয়েছি। তবে সিডিএ কর্মকর্তারা সিডিএ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী চাকরি করেন। তারপরও তাদের বিষয়ে নির্দেশনা কি হবে তা জানাতে মন্ত্রণালয়ের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। এখন মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে তাই হবে।’
এদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সিডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি চাকুরে বিবেচিত হওয়ায় এখন আইনগতভাবে চার্জশিটভুক্ত প্রকৌশলীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে হবে বলে সিডিএ‘র সংস্থাপন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। তারপরও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন সিডিএ চেয়ারম্যান। এখন অভিযুক্ত ১৮ প্রকৌশলীর ভাগ্য নির্ধারণ করছে সিডিএ চেয়ারম্যানের হাতে। কিন্তু সিডিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানার জন্য কয়েকদফা মোবাইলে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চেয়ারম্যান এই প্রতিবেদকে জানিয়েছিলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী যা হয় প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়েরর সিদ্ধান্ত জানতে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযুক্ত একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমরা সিডিএ’র প্রবিধান অনুযায়ী চাকরি করি এবং আমাদের বেতনও সিডিএ’র নিজস্ব অর্থায়ন থেকে দেয়া হয়। এছাড়া পেনশন ও শ্রান্তি বিনোদনসহ সরকারের অনেক সুবিধাও আমরা পাইনা, তাই কোনোভাবেই আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি হিসেবে গণ্য হতে পারি না। যদি মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের আদেশ দিয়ে থাকে তাহলে এ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারি।
অভিযুক্ত ১৮ প্রকৌশলীর মধ্যে দুই প্রকৌশলী ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। বাকি ১৬ প্রকৌশলীর মধ্যে একজন বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার গার্ডার ধস মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন।
উল্লেখ্য, কালুরঘাট সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের দায়ের করা মামলায় গত বছরের মে মাসে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্ত প্রকৌশলীরা আদালতের জামিন নিয়ে মামলা পরিচালনা করছেন।
এর আগে চট্টগ্রামের কালুরঘাট রোডের বিএফআইডিসি মোড় থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৫২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় দুদকের দন্ডবিধি ৪০৯/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার পৃথক পৃথকভাবে ২২ মামলা দায়ের করেছিল দুদক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ