শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ভারতের সঙ্গেও সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় জয়ী হল বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গেও সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় জয়ী হল বাংলাদেশ

মায়ানমারের পর এবার ভারতের সঙ্গেও সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলায় জয়ী হল বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের হেগ-এ অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের (পিসিএ)রায়ে নতুন ১৯ হাজার চারশ’ ৬৭ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক ভূখণ্ড পেল বাংলাদেশ। মহীসোপানে চিত্রিত হলো নতুন মানচিত্র। সমুদ্রসীমায় নায্যতা প্রতিষ্ঠিত হল বাংলাদেশের। দীর্ঘ চার বছর নয় মাস আইনি লড়াইয়ের পর এ চূড়ান্ত রায় হাতে পেল বাংলাদেশ। এ রায় আপিলযোগ্য নয়।

সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় দু’দেশের প্রতিনিধিদের হাতে এ রায় হস্তান্তর করেন পিসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল হুগো এইচ সিবলেজ। দু’দেশের পক্ষে এ রায়ের কপি গ্রহণ করেন নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল ও ভারতের রাষ্ট্রদূত রাজেশ নন্দন প্রসাদ।

সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধের প্রধান বিষয় হলো দুই দেশের জলসীমা শুরুর স্থান নির্ধারণ। এছাড়া ভূমিরেখার মূলবিন্দু থেকে সমুদ্রে রেখা টানার পদ্ধতি নিয়েও মতবিরোধ দেখা দেয়। ভূমির মূল বিন্দু থেকে সমুদ্রের দিকে ১৮০ ডিগ্রির সোজা রেখা দাবি করে বাংলাদেশ। তবে ভারতের যুক্তি ছিল সমুদ্রতট বিবেচনায় এ রেখা হবে ১৬২ ডিগ্রি। সালিশি আদালতের রায়ে ভূমির মূল বিন্দু থেকে সমুদ্রের দিকে ১৭৭.৩ ডিগ্রি রেখা টানা হয়েছে। যা বাংলাদেশের দাবির খুব কাছাকাছি। দু’দেশের সমুদ্রসীমার বিষয়ে ভারতের যুক্তি ছিল সমদূরত্বের (ইকুইডিসট্যান্স) ভিত্তিতে রেখা টানতে হবে। বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করে ইকুইটি বা ন্যায্যতার ভিত্তিতে রেখা টানার পক্ষে অবস্থান নেয়। এর পাশাপাশি জ্যামিতিক ‘অ্যাঙ্গেল বাই সেক্টর’ পদ্ধতিতে দাবি জানায় বাংলাদেশ।

তবে আদালত দু’দেশের কোন একটি যুক্তিতে না গিয়ে আদালতের নিজস্ব বিবেচনায় সমতার ভিত্তিতে এ রায় দেন। যেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশের সিংহভাগ দাবিই পূরণ হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কারণ, এ ধরনের সাহসী সিদ্ধান্ত আজ পর্যন্ত কোন আদালত দেননি।

পিসিএ’র বিচারক ছিলেন পাঁচজন। এদের মধ্যে আদালতের প্রধান জার্মানির প্রফেসর ড. রুডিগার উলফ্রাম। অন্যরা হলেন, ফ্রান্সের জ্যাঁ-পিয়েরে কট, মায়ানমারের থমাস এ ম্যানসা, ভারতের ড. প্রেমারাজ শ্রীনিবাস রাও, প্রফেসর ইভান সিয়েরার। প্রথা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারত একজন করে বিচারক মনোনীত করে থাকে। এদের মধ্যে ভারতের মনোনীত বিচারক ড. প্রেমারাজ শ্রীনিবাস রাও এ রায়ের সঙ্গে কিছু অংশে দ্বিমত পোষণ করেন।

প্রতিবেশী দু’টি দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির আলোচনা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। এর পর প্রায় আড়াই দশক দু’দেশের মধ্যে এ আলোচনা থেমে থাকে। দীর্ঘ বিরতিতে সমুদ্রসীমা বিরোধের আলোচনা শুরু হয় ২০০৮ সালের শুরুতে। কিন্তু আলোচনার পরেও অগ্রগতি না হওয়ায় সালিশি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। বলা চলে, ভারতের অগোচরেই তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্দেশনায় মামলা করা হয়। ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সালিশি আদালতে আবেদন করে বাংলাদেশ। দীপু মনিই এ মামলার বাদী।

বাংলাদেশের পক্ষে মামলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রবিষয়ক ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম ডেপুটি এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের পক্ষে কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন লন্ডনের ম্যাট্রিক্স চেম্বার্সের প্রফেসর জেমস ক্রোফোর্ড এসসি, প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডস কিউসি, এসেক্স কোর্ট চেম্বার্সের প্রফেসর অ্যালান বয়েল, মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পায়াম আকাভান, ওয়াশিংটন ডিসির ফলি হগ এলএলপির পল এস রিখলার ও লরেন্স মার্টিন।

অন্যদিকে মামলায় ভারতের পক্ষে এজেন্ট ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবও আইনি উপদেষ্টা ড. নিরু চাধা এবং কো-এজেন্ট ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ভারতের কৌঁসুলিদলে ছিলেন আর কে পি শংকরদাশ, প্যারিস ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি নানতেরে-লা ডিফেন্সের প্রফেসর অ্যালিয়ান প্যালেট, লন্ডনের স্যার মাইকেল উড, ইয়েল ল স্কুলের প্রফেসর ডাব্লিউ মিশেল রেইসম্যান।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ