শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিসংসদ সদস্য পদ হারাতে পারেন এরশাদ!

সংসদ সদস্য পদ হারাতে পারেন এরশাদ!

দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপদেই আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সময়মতো নির্বাচনী হিসাব জমা না দেয়ায় কঠিন শাস্তি পেতে যাচ্ছেন তিনি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী হিসাব না দেয়ার অপরাধে দুই থেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন তিনি। পাশাপাশি আদালত কারাদন্ড দিলে সংসদ সদস্য পদও হারাতে পারেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।সম্প্রতি মামলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকেও রিটার্নিং অফিসারকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমান সে অনুযায়ী মামলাও করেছেন। এখন শুধু অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার অপেক্ষা।

এদিকে বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এরশাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা নিয়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয় ইসি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও যথাযথভাবে হয়নি বলে রংপুর-৩ (সদর) ও লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) আসনের রিটার্নিং অফিসার তা গ্রহণ করেনি। অবশেষে বহাল থাকে এ দুই আসনে এরশাদের প্রার্থিতা। নির্বাচন শেষে রংপুর-৩ আসনের হিসাব জমা দিলেও লালমনিরহাট-১ আসনের হিসাব জমা দেননি এরশাদ। এ কারণে আইনের ফাঁদে ফেঁসে যাচ্ছেন তিনি। বিষয়টিকে এত দিন গুরুত্ব না দিলেও এখন তা বেশ জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরপিও অনুযায়ী মামলা হওয়ায় তা আর প্রত্যাহারেরও কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেন এরশাদ। বৃহস্পতিবার তিনি এক ইফতার পার্টিতে বলেন, জাতীয় পার্টি ছাড়া আওয়ামী লীগ কখনোই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই জাতীয় পার্টির ওপর ভর করে এসেছে। অন্য এক অনুষ্ঠানে তিনি ইসির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের এঙ্রে করেও কোনো মেরুদ- খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না। সাংবিধানিক সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন। সরকারের প্রতি এমন আহ্বানও জানান তিনি।

গণপ্রতিনিধত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪-সি ধারায় বলা আছে, নির্বাচিত ব্যক্তিদের নাম গেজেটে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থী বা তাঁর নির্বাচনী এজেন্টকে নির্ধারিত ফরমে সংশ্লিষ্ট এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। এর পাশাপাশি ব্যয়ের অনুলিপি রেজিস্টার্ড ডাকযোগে নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদেরও ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। আরপিওর ৭৪ ধারা অনুযায়ী, এ বিধান লঙ্ঘনের শাস্তি দুই থেকে সাত বছরের জেল।

এ বিষয়ে ইসির উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ৮ জানুয়ারি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করায় ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যয় রিটার্ন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার কথা। একই সঙ্গে এফিডেভিটের অনুলিপি ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর কথা। যারা এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনী হিসাব জমা দেননি, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে রিটার্নিং অফিসার। এছাড়া যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাদেরও হিসাব দিতে হয়েছে।

মামলার বাদী লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচনী রিটার্ন জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সময়সীমা অতিক্রমের ২ মাস ২০ দিন পরও ব্যয় বিবরণী জমা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তিনি বলেন, যথাসময়ে নির্বাচনী ব্যয় বিবরণী দাখিল না করায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ বলেন, আইন অনুযায়ী যেসব প্রার্থী হিসাব দেননি এবং যারা নির্দিষ্ট সময়ের পর দিয়েছেন, সবার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। এটা আরপিওতেই বলে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গেজেট প্রকাশ হয় ৮ জানুযারি। এর পরবর্তী এক মাসের অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রত্যেক প্রার্থীর ব্যয়ের রিটার্ন জমা দেয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৪৩ জন। তাদের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, বাকি ১৪৭ আসনে ৩৯০ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়

আরও পড়ুন

সর্বশেষ