মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এখন সুস্থ বলে জানিয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজামীর শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে নিজামী সুস্থ আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী।
গত ২৪ জুন ভোররাতে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হলে নিজামী সেদিন থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই দিন সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে তার মামলার রায়ের দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তাকে কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ না আনায় রায় ঘোষণা করা হয়নি।
নিজামীকে তার রায়কে কেন্দ্র করে গত ২৩ জুন রাতে কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন ভোররাতেই উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হন তিনি। সকালে কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীর অসুস্থতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিতভাবে জানায়।
এরপর আগের মতোই আবারো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয় মামলাটি। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে আদেশ দেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী জানান, নিজামীকে ২৪ জুন ভোররাতে কারাগারের কনডেম সেল থেকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। কারা হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল টিম নিজামীর চিকিৎসার দেখভাল করেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো হলে মেডিকেল টিম কারা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে তার সুস্থতার কথা জানায়। কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে-১ লিখিতভাবে অবহিত করে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ৩৩৬ পৃষ্ঠার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থা। আর আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়।
তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এতে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, খুন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৫টি অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
ওই বছরের ২৮ মে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ এনে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনকালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ১৫টির সঙ্গে ১৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যা যোগ হয়েছে। গত ২৪ মার্চ মামলাটির যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রায় দুই বছরের বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।