বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে

বেশিরভাগ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে

২০১৩ সালের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ব্যাংক ব্যবসায় কিছুটা গতি ফিরেছে। তবে এখনো তা আশানুরূপ নয় বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। এজন্য শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগে মন্দার পাশাপাশি রাজনীতিতে অস্থিরতা ও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণকে দায়ী করছেন তারা।

ব্যাংকগুলোর জানুয়ারি-জুনভিত্তিক পরিচালন মুনাফার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। তবে পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়, খেলাপি ঋণ বাবদ প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি), সরকারের কর বাদ দিয়ে প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা প্রকাশে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিষেধাজ্ঞা আছে। পরিচালন মুনাফা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হওয়ায় বিএসইসি তা প্রকাশে আপত্তি জানিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সম্মতি রয়েছে। তবে ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী  বলেন, ২০১৩ সালের একই সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। ফলে ব্যাংকগুলোও কিছুটা ভালো ব্যবসা করতে পেরেছে। তবে তা আশানুরূপ নয়। উদ্যোক্তারা ব্যাংকের বদলে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। এছাড়া মন্দা না কাটায় ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। এর পরও ব্যাংকগুলো নতুন কৌশল গ্রহণ করে ব্যবসা ধরে রেখেছে; যাতে বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফা বাড়বে বলেই মনে হয়।

প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বেসরকারি খাতের অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। তবে চূড়ান্ত হিসাবের সময় কমবেশি হতে পারে। কারণ ব্যাংকগুলোর হিসাব আপাতত শেষ হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিসাব করতে আরো কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। এতে মুনাফার অঙ্ক কমবেশি হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালন মুনাফা গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা কম হয়েছে। এ বছর প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি ৮৩০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০১৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৯৭৪ কোটি টাকা। এজন্য আনন্দ শিপইয়ার্ডকে অর্থায়নের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পাশাপাশি আরো কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়া দায়ী বলে জানা গেছে।

একইভাবে পরিচালন মুনাফায় ধস নেমেছে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বেসিক ব্যাংকে। এ বছরের ছয় মাসে ব্যাংকটি ৪৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে; যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩৫ কোটি টাকা। এদিকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপক হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে বিতরণ করা ঋণের ২২ শতাংশ। এ বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হলে এ ব্যাংকের লাভের পরিবর্তে লোকসান হবে।

এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অর্থনীতিতে এখনো মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। কেউ নতুন বিনিয়োগে সাহস করছে না। তবে ব্যাংকগুলো নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা তো ধরে রাখতেই হবে। পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা দেয়ার বিষয়ও রয়েছে। সবাই এসএমইর পাশাপাশি উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগে নজর দিয়েছে। এসব কারণে মুনাফা কিছুটা বাড়ার কথা।’

ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের চিত্র পাওয়া যায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও মুদ্রানীতিতে জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকগুলোর কাছে বর্তমানে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এ কারণে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ হার বাড়িয়ে বাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকিং খাতের অর্ধবার্ষিক পরিচালন মুনাফা (জানুয়ারি-জুন ২০১৪): ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৯৫ কোটি, আল আরাফাহ ২৮০ কোটি, পূবালী ব্যাংক ৩৪০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৩০ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ৮৩০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ২২৪ কোটি, আইএফআইসি ১৯৭ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ২৭৬ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ২৯৫ কোটি, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ৪১৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৪১৪ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৮০ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১৫০ কোটি, এনসিসি ব্যাংক ১৭৫ কোটি, ইউসিবিএল ৪২৩ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ১৯০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ১৩০ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ১৭৫ কোটি, ডাচ্-বাংলা ২৫৫ কোটি, সোনালী ৫১৪ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ২৬ কোটি, মেঘনা ১৯ কোটি, এনআরবি কমার্শিয়াল ১৩.১০ কোটি, ইউনিয়ন ২০ কোটি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ১১.৫৪ কোটি ও মিডল্যান্ড ০৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ