শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েচট্টগ্রাম বিভাগঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান

নগরীর লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার সকাল ১০টা থেকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।অভিযানের শুরুতে মতিঝর্ণা এলাকার টাংকি পাহাড়ের জাফর ও নাসির নামে দুই ব্যক্তির অবৈধ দখলে থাকা প্রায় ৪০টি ভাড়া ঘরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অবৈধ বাসিন্দারা যাতে পূণরায় ফিরে আসতে না পারে সে লক্ষ্যে ঘর-বাড়িগুলো গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে অভিযানে পাঁচলাইশ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার দীপক জ্যোতি খীসা, সদর সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনার সামিউল মাসুদ, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনার এ কে এম রেজাউর রহমান, আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী ভূমি কমিশনার শাম্মী আখতারসহ সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, কেজিডিসিএল, পিডিবি, পিডব্লিউডির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম আবদুল কাদের বলেন, ‘নগরীর ১১টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে ৬৬৬টি পরিবারের বসতি রয়েছে। পাহাড়গুলোর মধ্যে মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ পাহাড়ে ৩২০টি পরিবার থাকে। অভিযানের শুরুতে তাদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্যদেরও উচ্ছেদ করা হবে।’

নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারি কমিশনার দীপক জ্যোতি খীসা  বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানে কেউ যাতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সদস্যরা সতর্ক রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সবগুলো অবৈধ বসতি এবং স্থাপনা চুড়ান্তভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টায় মতিঝর্ণা এলাকায় গিয়ে হ্যান্ড মাইকে অবৈধ বসতিগুলোকে তাদের পরিবারের আসবাবপত্র ও মালামাল সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে। এসময় এসব ভাড়া ঘরের বাসিন্দারা মালামাল সরাতে শুরু করলে শ্রমিকরা হাতুড়ি, শাবল, খুন্তি দিয়ে ঘরগুলো ভাঙতে শুরু করেন। ঘরগুলো ভাঙ্গা শুরু করলে মালামালগুলো সরিয়ে পাহাড়ের খালি জায়গায় রাখেন বাসিন্দারা। এসময় অনেকে তাদের ঘরের মালামাল বের করার সুযোগও পাননি।

অবৈধ ঘরগুলোর বাসিন্দার অভিযোগ করেন, তাদের না জানিয়ে প্রশাসন তড়িঘড়ি করে ঘরগুলো ভাঙ্গা শুরু করেছে। অনেক বাসিন্দা নিজেদের কর্মস্থলে থাকায় ঘর ভাঙ্গার খবর জানেন না। তাদের আসবাবগুলো বাসার ভেতর রয়ে গেছে। মো. আবুল কাশেম নামে এক বাসিন্দা  জানান, গত বৃহষ্পতিবার থেকে টানা বর্ষণ শুরু হলে প্রশাসন ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করেছিলো, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় কোন ধরণের নোটিশ না দিয়ে তাদের বাসা ভেঙ্গে দিয়েছে। যার কারণে বাসার অনেক মালামাল বের করতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, “আমার ছেলে-মেয়ে সবগুলাই নিজের চাকরিতে। ঘর ভাঙ্গা হইবে জানলে চাকরিতে যাইতো না, মালামালগুলো সরাইতে পারতাম। এহন বেশীরভাগ মাল ভেতরে থাইক্যা গেছে।” জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক গৃহিনী বলেন, ‘আমদের কোন নোটিশ দেয়নি। এখন আমরা এত মালামাল নিয়া কই যামু, কোথায় ভাড়া বাসা পামু?” তিনি জানান, প্রতিটি ঘরে প্রশাসন কর্তৃক তালা লাগিয়ে দেওয়ায় কেউ ইচ্ছে করলেও নিজেদের আসবাব উচ্ছেদের আগে সরিয়ে নিতে পারেনি।

তবে নোটিশ না দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় এক মাস আগেই সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসতিগুলোকে সরে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছি, পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এরপরও অধিকাংশ বাসিন্দা সরেননি।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ১১টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৬৬৬টি পরিবার বসবাস করছে বলে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন।  এর মধ্যে নগরীর একে খান মালিকানাধীন পাহাড়ে ১৮৬ পরিবার, ইস্পাহানি পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে হারুন খানের পাহাড় ও বায়তুন আমান সোসাইটির কাছে পাহাড়ে ৫টি, কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে (পানির ট্যাংক) ২৭টি, লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ১২টি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা পাহাড়ে ২২টি, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১১টি, ফয়েজ লেক আবাসিক এলাকার কাছে পাহাড়ে ৯টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৩টি, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি ও মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ৩২০টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এসব পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবৈধ বসতি ও স্থাপনাগুলো চুড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করে গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে ১২৭ জন মারা যায়। এর পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনেও পাহাড় ধস রোধে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে ৩৬ দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। সাতবছর পার হলেও অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ