শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েখন্দকার মাহবুবকে সতর্ক করলেন ট্রাইব্যুনাল

খন্দকার মাহবুবকে সতর্ক করলেন ট্রাইব্যুনাল

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সতর্ক করে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ভবিষ্যতে আদালত বা বিচার বিভাগের বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয় খন্দকার মাহবুবকে। রোববার এ আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘কথা বলার স্বাধীনতা সবারই রয়েছে। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে কেউ আদালত অবমাননা করতে পারেন না’।

খন্দকার মাহবুবের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। একভাবে বিবেচনা করলে বলা যায়, আপনি আদালত অবমাননা করেছেন। আরেকভাবে বিবেচনা করলে আপনি আদালত অবমাননা করেননি। কিন্তু আপনি আইনজীবীদের নেতা, একটি দায়িত্বশীল পদে আছেন। আপনি কোনো সাধারণ মানুষ নন। আপনার এমন কোনো মন্তব্য করা উচিৎ নয়, যাতে আইনজীবী এবং আদালতের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের মনে আদালত, বিচার বিভাগ সম্পর্কে বিতর্কের সৃষ্টি করে’।ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘প্রত্যেকের উচিৎ, আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা’।

গত ৮ মে আদালত অবমাননার অভিযোগে খন্দকার মাহবুবের বিরুদ্ধে জারি করা কারণ দর্শাও (শো’কজ) নোটিশের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকউটর জেয়াদ আল মালুম।গত বছরের ৬ অক্টোবর খন্দকার মাহবুবের বিরুদ্ধে এ শো’কজ নোটিশ জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। নোটিশে কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না তা জানতে চেয়ে ২১ অক্টোবরের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়। পরে ৪ সপ্তাহের সময় নিয়ে ১৯ নভেম্বর শো’কজ নোটিশের জবাব দাখিল করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।

গত বছরের ৩ অক্টোবর খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে তাকে নোটিশ জারির আবেদনটি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হয়ে তার কোনো বক্তব্য থাকলে তা ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়ে আদেশ প্রদানেরও আবেদন করা হয়।

এ বিষয়ে শুনানিকালে প্রসিকউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, গত ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারকে ‘প্রহসনের বিচার’ উল্লেখ করে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। এতে এ মামলায় সাক্ষী হওয়ায় স্বজন হারানো লোকজন ভয়ে আছেন।

তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম এবং নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করা। এবং এ বিচারের সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখোমুখি করা। খন্দকার মাহবুবের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন, মিথ্যা, একপেশে, পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রসিকউশনের আবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রসিকউশন আবেদনের সঙ্গে চারটি জাতীয় পত্রিকার কপি জমা দেন। নোটিশের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন তার বক্তব্য সঠিক ছিল দাবি করেন। গত বছরের ১ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

রায়ের পরপরই সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ওই সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তি যদি ক্ষমতায় আসে সত্যিকার অর্থে যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার হবে। প্রতিহিংসার জন্য যাদের বিচার করা হয়েছে, কাল্পনিক গল্প দিয়ে মামলা তৈরি করা হয়েছে অবশ্যই সেটা চলে যাবে। আর যারা এই প্রহসনের বিচারে সম্পৃক্ত ছিলেন ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হবে’।

  • বিষয়:
  • UMo
আরও পড়ুন

সর্বশেষ