চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছেন। দেশের চারটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের ভরাডুবি চোখে দেখার মতো।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এ চারটি নগরীর নির্বাচনের ফল খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রতিফলন থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলে। বিকেল ৪টার পর থেকে চলে ভোট গণনা।
রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে লড়াই চলে। তবে শেষ বিকেলের সূর্য দেখে বিএনপি। বিকেল ৪টার পর থেকে চলে ভোট গণনা। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়।
সিলেট : ১২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকটি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ১০৭৩৩০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দীন কামরান পান ৭২১৭৩ ভোট।
রাজশাহী : ১৩৭টি কেন্দ্রের ফলাফলে বিএনপি সমর্থক মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ১৩১৭৬৯ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ৮৩৩৬৯ ভোট পেয়েছেন।
বরিশাল : সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০০টি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আহসান হাবীব কামাল ৮৩৭৫১ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শওকত আলী হিরণ পেয়েছেন ৬৬৭৪১ ভোট।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান মনি জয়ী হয়েছেন।
২৮৮টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে মনি পেয়েছেন ১৮১২৬৫ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১২০০৫৮ ভোট। প্রাপ্ত ফলাফলে।
এর আগে সকাল ৮টায় রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশালে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। চার মহানগরীর সাড়ে ১২ লাখের বেশি ভোটার তাদের পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দেন। ভোট দেয়ার সুবিধার্থে চার সিটিতে শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
অন্যান্য সিটিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেও বরিশালের রূপাতলি প্রাথমিক কেন্দ্রে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির পর এক ঘণ্টা বাদে আবারো ভোটগ্রহণ হয়।
চার শহরের মেয়র হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ১২ জন প্রার্থী।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৫ ও নারী এক লাখ ৪৩ হাজার ৫২২ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এএইচএম খায়রুজ্জামান তালা, বিএনপি-সমর্থিত মো. মোসাদ্দেক হোসেন আনারস ও মো. হাবিবুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে। সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ৬৬ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ১৫৫।
খুলনা সিটির ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ২৪ হাজার ৫০৪ ও নারী দুই লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত তালুকদার আবদুল খালেক তালা, বিএনপি-সমর্থিত মো. মনিরুজ্জামান আনারস ও দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম। ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ৪৫ ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ১৩৭।
বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ সাত হাজার ৬২৫ জন ও নারী এক লাখ তিন হাজার ৬৩২ জন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শওকত হোসেন টেলিভিশন ও বিএনপি-সমর্থিত আহসান হাবিব আনারস প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাহমুদুল হক খান। সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ৪৫ ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ১১৬।
সিলেট সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৯১ হাজার ৪৬। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫৭ হাজার ১৮১ এবং নারী এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৫ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আনারস ও ১৮ দল-সমর্থিত আরিফুল হক চৌধুরী টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তালা প্রতীক নিয়ে লড়েন ছালাহ উদ্দিন। সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৩৫ ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ১৩৯ জন।
ভোটগ্রহণের জন্য চার সিটিতে এবার ১২ হাজার ৮০ জন কর্মকর্তাকে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ৬৫৩ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৩ হাজার ৮০৯ জন সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৭ হাজার ৬১৮ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (পোলিং অফিসার)।
এছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে চার সিটিতে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যা ব, কোস্টগার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসার এবং বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সব মিলিয়ে চার সিটিতে ১১৮টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত ছিল।
একইসঙ্গে ২১ প্লাটুন বিজিবি এবং আলাদাভাবে খুলনা ও বরিশালে পাঁচ প্লাটুন কোস্টগার্ড নিয়োগ করা হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরও আরো দুই দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট সর্বশেষ এই চার সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।