শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউসৌদি ‘মুসানেদ: অক্টোবর থেকে অনলাইনে ভিসা

সৌদি ‘মুসানেদ: অক্টোবর থেকে অনলাইনে ভিসা

সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ শুনতে প্রবর্তিত অনলাইন ব্যবস্থা ‘মুসানেদ’ (সহায়তা) অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এ নতুন ব্যবস্থার আওতায় গৃহকর্মীরা আগামী অক্টোবর থেকে অনলাইনে ভিসা আবেদন করবেন এবং অনলাইনেই ভিসা পাবেন। তবে গত ৩রা জুন আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে বলেছে, রমজানকে সামনে রেখে সৌদি আরব জুড়ে গৃহপরিচারিকাদের পলায়নের হিড়িক পড়েছে। তারা তাদের স্পন্সরদের অনুমতির তোয়াক্কা না করে যে যেমন পারে কাজ জুটিয়ে নিয়ে সটকে পড়ছে। এর কারণ হিসেবে পত্রিকাটি বলেছে, রমজানে গৃহপরিচারিকাদের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই তারা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কর্মস্থল বদল করছে।

উল্লেখ্য, সৌদি আরবে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মরত বলে অনুমান করা হয়। ২০০৭ সালে সৌদি সরকার ১৫ লাখ ভিসা ইস্যু করেছিল। এর মধ্যে শতকরা সাড়ে ২৩ ভাগই ছিল বাংলাদেশী শ্রমিকদের।

সৌদি সরকার বলেছে, গত মাসে মুসানেদ চালুর পরে দিনের ১২ ঘণ্টাই অনলাইন ব্যবস্থা ব্যস্ত থাকছে অভিযোগ রেকর্ড করতে। গত ১ মাসে সারা দেশের গৃহকর্তাদের কাছ থেকে মিলেছে ১ লাখ ১০ হাজার ফোন কল। বেশির ভাগেরই গৃহকর্মীদের সম্পর্কে নানা অভিযোগ।
রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আরসিসিআই) এবং সৌদি সরকারের শ্রম অধিদপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি জিয়াদ আল সায়েগ সম্প্রতি রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারা অনলাইন ভিসা চালু করতে রিক্রুটমেন্ট সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করবেন।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৬ মাসে ৫১৭৯ জন গৃহকর্মী তাদের স্পন্সরদের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের পাসপোর্ট বিভাগ এ খবর দিয়েছে। সূত্রগুলো বলেছে, রমজানের আগে বেশির ভাগ গৃহপরিচারিকা এ পলায়নে অংশ নিয়েছেন। কারণ রমজানে গৃহস্থালির কাজে তাদের চাহিদা বেশি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাল্লা মার্জুক আল ওতাইবি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের পাসপোর্ট বিভাগের মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, পলায়ন বাড়ছেই। গত বছরের নভেম্বরে ১৫৪৩ জন, ডিসেম্বরে ৭২৯, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ৯২৬, ফেব্রুয়ারি ৮০১, মার্চে ৫২৩, এবং এপ্রিলে ৬৫৭ জন পালিয়েছে। এর আগে গৃহপরিচারিকা কল্যাণ কেন্দ্র (মেইড ওয়েলফেয়ার সেন্টার) এক সমীক্ষায় দেখেছেন, প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১২০ জন গৃহপরিচারিকা তাদের স্পন্সরদের কাছ থেকে পালিয়ে যায়। এ পলায়নের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রিয়াদ শহর। এর পরে মক্কা, মদিনা ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ।

উল্লেখ্য, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদি আরবের গৃহপরিচারিকাদের অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু দেশটির ন্যাশনাল সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের আইন উপদেষ্টা এবং মহাসচিব খালিদ আল ফকিরি বলেছেন, গৃহপরিচারিকাদের কাছ থেকে পাওয়া উল্লেখযোগ্য অভিযোগ খুবই কম। কতিপয় গৃহকর্মী দ্বারা সংঘটিত অপরাধ যাচাই করা যায় না। হত্যা, শিশুদের গায়ে আগুন দেয়া ও বিষ খাওয়ানো কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আল ফকিরি বলেন, সৌদি আরবে আসতে কোন গৃহপরিচারিকাকে বাধ্য করা হয় না। যখন একজন গৃহপরিচারিকা পালিয়ে যায়, তখন একজন নাগরিককে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বলেন, এ সব গৃহপরিচারিকা অবশ্য সৌদি নাগরিকদের দ্বারাই প্রলুব্ধকরণের কবলে পড়েন।

আরব নিউজ ওই প্রতিবেদন আরও বলেছে, গৃহশ্রমিকদের দ্বারা অপরাধ সংঘটন বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা এটা বলতে পারি না, তাদের দ্বারা অপরাধ ব্যাপক মাত্রায় ঘটছে। যেহেতু বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাই কোন একটি দেশের প্রত্যেককে আমরা এ জন্য অভিযুক্ত করতে পারি না।
আল ফকিরি অবশ্য স্পর্শকাতরতার সঙ্গে কিছু ঘটনা প্রকাশের জন্য মিডিয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। যার আওতায় স্পন্সর এবং তাদের শ্রমিকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। এমনকি যে সব দেশ থেকে এসব শ্রমিকদের আনা হয়, সে সব দেশে কি প্রক্রিয়ায় তাদের বাছাই ও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, সেটাও সৌদি আইনের আওতায় যাচাইযোগ্য এবং যথাযথ প্রতিকারও মিলতে পারে। যে কোন ধরনের অভিযোগ শ্রম বিভাগের কাছে জানানো উচিত এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী তা মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি অবশ্য যুক্তি দেন, সৌদি আরবের আইন সম্পর্কে নিয়োগকারী দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত। প্রত্যেক গৃহশ্রমিকের কাছে তাদের নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত এবং এনএসএইচ আর-এর টেলিফোন নম্বর দেয়া উচিত।

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত দুই সপ্তাহে গৃহপরিচারিকাদের দ্বারা কথিত মতে, গৃহকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালানোর হাইপ্রোফাইল ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার দুই গৃহপরিচারিকার দ্বারা ১১ বছর বয়সী এক বালককে হত্যার ঘটনাও রয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, শিশুটির মা তার শিশুকে একটি ময়লার ব্যাগে দেখতে পান। তার নাকে ও বুকে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সকালে ছেলেকে তার বিছানায় না দেখতে পেয়ে তিনি খোঁজ শুরু করছিলেন। ওই দিন ছিল তার বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন। বাড়ির ছাদে দু’টি ছুরিসহ শিশুটির রক্তাক্ত কাপড় পাওয়া গিয়েছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ