প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদানকালে তাদের জনসংযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে ধনী-গরীব সবই আছে। তাদের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। পাঁচ বছর পর এই জনগণের কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। তাই তোমাদের আচরণে কোন মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে। সকল দর্শনার্থীর সম্মান সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বাংলাদেশে সফরকালে বিদেশী ভিআইপিদের দৈহিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এসএসএফের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য সকল সহযোগী সংস্থার সাথে সুসম্পর্ক, নিবিড় যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখা প্রয়োজন। একই সাথে ভিআইপিদের জনসংযোগের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের প্রতিটি কার্যক্রম জনকল্যাণে প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়। জনবিচ্ছিন্ন থেকে জনসেবা নিশ্চিত করা যায় না।
এ আলোকে প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব ও জনপ্রত্যাশা এ দুয়ের মাঝে সুন্দর সমন্বয় গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জনগণ থেকে দুরত্ব সৃষ্টি করে নয়, বরং জনসম্পৃক্ততা রেখেই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাতেই তোমাদের সার্থকতা।
প্রধানমন্ত্রী সদস্যদের তাদের সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, উন্নত নৈতিক চরিত্র, পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীলতা, নিয়মনিষ্ঠা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও মানবিক গুণাবলির প্রতি তোমাদের অবশ্যই আরো যতœবান হতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ আমান হাসান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং সিনিয়র বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, এই বাহিনীর আনুগত্য, পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা প্রশংসনীয়। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও এসএসএফ সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। তিনি বলেন, আমি আশা করবো এই বাহিনীর সদস্যরা ভবিষ্যতেও নির্ভরতার সাথে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবে।
এসএসএফের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মেয়াদকালে এই বাহিনীর প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নে অত্যাধুনিক নিজস্ব ফায়ারিং রেঞ্জ করা হয়েছে। তাদের আধুনিক অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সরকার আর্থিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও এসএসএফের জন্য বাজেট বাড়িয়েছে। এছাড়া আবাসন ও অন্যান্য সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সুবিধা আরো বাড়ানো হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএসএফ-এর সদস্যদের উচ্চতর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয়েছে। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সদস্যদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ধরন ও কৌশল পাল্টেছে। প্রযুক্তির বিকাশের কারণে সন্ত্রাসীরা বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে অপতৎপরতা চালাতে পারে। তারা নিরাপত্তার জন্য যেকোন চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাই আমরা এসএসএফ-এর দক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্নমুখী উদ্যোগ নিয়েছি। এ বাহিনীর কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়েছি। যাতে তারা যেকোন পরিস্থিতিতে ভিআইপিদেও দৈহিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এ বাহিনীর ১৭৩ জন সদস্য ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে মেয়েদের মধ্য থেকে এবারই প্রথম একজন অফিসারকে উপ-পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গঠনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বর্তমান সরকার সে কাজটিই করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখতেন একদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানলাভের জন্য আসবেন। সে লক্ষে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) সহ উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বিদেশ থেকে অনেক সামরিক প্রশিক্ষার্থী উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধারাবাহিকতায় এসএসএফের প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে ভিভিআইপি নিরাপত্তা সংক্রান্ত পেশাগত কোর্সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক সদস্যবৃন্দ প্রশিক্ষিত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ২০১১ সালে এসএসএফ ফিলিস্তিনের ১৬ জন নিরাপত্তা কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
তিনি আশা করেন, সুযোগ্য নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং এ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের পেশাগত নিষ্ঠা, শ্রম ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এসএসএফের উত্তরোত্তর উন্নতি অব্যাহত থাকবে। শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, আনুগত্য, আন্তরিকতা এবং পেশাগত মান বিচারে এ বাহিনী সকলর জন্য হয়ে উঠবে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।