জৌলুস হারাচ্ছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র। পাহাড় ও প্রকৃতির কোল ঘেঁষে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি ১৯৯৬ সালে স্থাপন করা হলেও এখন আর সেই সৌন্দর্য নেই। টেলিভিশন কেন্দ্রের প্রবেশমুখে নান্দনিক লেকটি এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে । কেন্দ্রে প্রবেশ করতেই যে কারও চোখ আটকে যাবে লেকের এই করুণ দৃশ্যে ।
নগরের জাকির হোসেন রোডে ফয়’স লেক এলাকায় ১০ একর জায়গা জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এই টেলিভিশন কেন্দ্রটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম টেলিভিশন কেন্দ্র। যা একটি দর্শনীয় স্থানও বটে। প্রশস্ত গেইট দিয়ে পাহাড়ি পিচ ঢালা রাস্তা, ভবনের সামনে আঁকাবাঁকা লেক। তাতে এত স্বচ্ছ পানি যে লেকের গহীনে শ্যাওলা ও তার মাঝে পাশ কাটিয়ে যাওয়া মাছও স্পষ্ট দেখা যেত। তবে এসব এখন অনেকটা রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। জল টলমলে লেকে এখন মাছ নয়, ময়লা-আর্বজনার স্থায়ী বাস। দৃষ্টিনন্দন এই লেক এখন ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
দুই বছর আগেও যে লেকে প্রাণ ছিল, বর্তমানে সেটা মৃতপ্রায়। একপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, অন্যদিকে ময়লা জমে শ্যাওলাসহ জলজ উদ্ভিদে সয়লাব এই এলাকাটি।
শিল্প-সাহিত্য-প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জন্য নিয়মিত এই কেন্দ্রে যান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি রাশেদ রউফ। তিনি বলেন, ‘এত সুন্দর একটা স্থাপনা চট্টগ্রাম কেন্দ্র, অথচ লেকটা দেখলেই মন খারাপ হয়ে যায়। যতটুকু জানি কর্তৃপক্ষ লেকটি পরিষ্কারের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হোক এটাই আশা করছি।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাশের পাহাড় ও ইউএসটিসি হাসপাতালের মেডিক্যাল-বর্জ্য এসে জমা হয় এই লেকে। ফলে ময়লা-আর্বজনায় লেক হয়ে উঠেছে মৃতপ্রায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আর পরিষ্কারের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাথেও আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি ।
এদিকে লেক পরিষ্কারের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জানায়, গত বছর চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দরখাস্তের ভিত্তিতে নালা, পুকুর পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এবছর তারা কোনো দরখাস্ত পায়নি বলে জানালেন চসিক’র প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মান্নান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘তাদের প্রয়োজন হলে তো তারা দরখাস্ত করে। কিন্তু এখনও আমরা সেরকম কিছু পাইনি। পেলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি এটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশন চালু হয়। তখন চট্টগ্রাম উপ-কেন্দ্র হিসেবে অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতো। এরশাদের আমলে চট্টগ্রামে একটি টেলিভিশন কেন্দ্র নির্মাণের দাবি ওঠে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়তলীতে রেলওয়ের ১০ একর ভূমির ওপর বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকে বিটিভির চ্যানেলেই চট্টগ্রামের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়ে আসছে। ফরাসি সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি নির্মাণে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়।