শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়মেঘনায় লঞ্চডুবি : ২৮ লাশ উদ্ধার

মেঘনায় লঞ্চডুবি : ২৮ লাশ উদ্ধার

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমভি মিরাজ-৪ থেকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ২৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৬ জনের লাশ শনাক্ত শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী দু’জনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক। জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে  এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গজারিয়া উপজেলার দৌলতপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এ লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন- শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পাঁচগাও গ্রামের জামাল হোসেন শিকদার (৫০), তার ছেলে আবিদ হোসেন শিকদার (২৮), টুম্পা বেগম (৩০), সেতার বেগম (৫০) ও আরিফ (১১)। নিহত টুম্পার স্বামী লিটনও ওই লঞ্চে ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার ৮ বছরের মেয়ে সুমনা ও ৬ বছরের ছেলে মাহিম এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ডুবন্ত লঞ্চের দুই মাথায় ক্রেনের সাহায্যে রশি বেঁধে বাধা হয়। পরে টেনে তোলার চেষ্টা কর‍ার একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একপাশের রশি ছিড়ে লঞ্চটি আবার সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়।

এর ফলে লঞ্চ উদ্ধার চেষ্টা বন্ধ রয়েছে। পুনরায় লঞ্চের গায়ে ক্রেনের সাহায্যে রশি বাঁধতে দু’তিন ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে আইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা বলেন, ক্রেনের রশি ছিড়ে যাওয়ায় লঞ্চ উদ্ধার কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে দু’তিন ঘণ্টার মধ্যে আবার শুরু করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘটনাস্থলে রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্ধারকাজ শেষ না করে আমরা এখান থেকে একচুলও নড়ব না। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ আমারা এখানে আছি।

তবে একাধিক উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা জানান, ডুবন্ত লঞ্চে আটকা পড়া লাশ ও মালামালের কারণে লঞ্চের জানালা-দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই টেনে তুলতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০টা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন। নদীর দু’পাড়ে শত শত নারী-পুরুষ ও স্বজনরা ভিড় করছে। মেঘনার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনদের আহাজারিতে।

অপরদিকে, লাশ ও লঞ্চ উদ্ধার তৎপরতায় গরিমসির কারণে নদীপাড়ে অপেক্ষারত নিখোঁজদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বেলা ১১টার দিকে উদ্ধার তৎপরতা ব‍ৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।

ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানান, সদরঘাট থেকে দুপুর একটার দিকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হয় লঞ্চটি। পথে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে। এতে মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটিতে ২০০ থেকে ২৫০ যাত্রী ছিল।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, লঞ্চের চালক একটু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলে পাশের একটি শাখা নদীতে যেতে পারতেন। তাতে অন্তত এতো বেশি লোকের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হতো। এ লঞ্চটি এর আগেও ২বার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল বলে জানা গেছে।

তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার এ এস এম সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন-সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল হাসান ও একই অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শফিকুর রহমান। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ