সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......মায়ের জন্য কখনোই একটি দিন সীমাবদ্ধ নয়

মায়ের জন্য কখনোই একটি দিন সীমাবদ্ধ নয়

‘অনেক দিন ধরে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে আছি। আজ আমার চাকরির প্রথম বেতন পেয়েছি। আসছে বিশ্ব মা দিবস। তাই মার্কেট ঘুরে আম্মুর প্রিয় সবুজ রঙের একটি শাড়ি কিনেছি। ভাবছি, সেদিন সকালেই শাড়িটি দিয়ে আম্মুকে চমকে দেব। আমি জানি, আম্মু অনেক খুশি হবেন- শপিং মলে দেখা হলে এভাবেই বলেন রিফাত জামান। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মৌসুমী বলেন, ‘পড়াশোনার কারণে মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকি। তাই মাকে অনেক মিস করি। ক্লাসের জন্য মা দিবসের এ সময় কখনও মায়ের কাছে থাকতে পারি না। তাই প্রতিবারের মতো এবারও ফোনে মাকে জানাব সব ভুলের জন্য সরি, আর বলব মাকে অনেক ভালোবাসি।’

প্রতি বছর ঘুরেই আসে বিশ্ব মা দিবস। মায়ের জন্য কখনোই একটি দিন সীমাবদ্ধ নয়। মায়ের সম্মান কোনোদিনও একটি দিনে দেওয়া সম্ভব নয়। জীবনের ছোট কিছু ভুল, নিজের অজান্তেই কখনও মাকে কিছুটা কষ্ট দেওয়া, সন্তানের কোনো ছোট ব্যর্থতায় মায়ের চোখে পানি- এসব কিছুর জন্যই হাজারো ব্যস্ততার কারণে মাকে বলা হয়ে ওঠে না- স্যরি। মাকে প্রতিদিন বলাও হয় না মা, তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তাই নগর জীবনের এ যান্ত্রিকতার মধ্যে একটি দিন যেন আমরা খুঁজে নিই শুধু আমাদের মায়ের জন্য। শত ভুলের জন্য মাকে বলি- স্যরি। প্রাণভরে বলি, মাকে কতটা ভালোবাসি এবং মুছে দিই মায়ের চোখের পানি, দূর করে দিই যত কষ্ট-বেদনা-গ্লানি।

ইউনিভার্সিটির ছাত্র তায়েফ মেহেদি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে ফাইনাল ইয়ার শেষ হলেই বাড়িতে যাব। সামনেই আসছে মা দিবস। তাই মায়ের জন্য টিউশনির টাকা জমিয়ে একটি শাড়ি কিনেছি। ভাবতেই খুব ভালো লাগছে, এবার মা দিবসে আমার মাকে আমি এ উপহারটি দেব।’ এইচএসসি পড়ুয়া সুমাইয়া আঁখি বলেন, ‘আমি হোস্টেলে থাকি। মামণিকে ছেড়ে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়। অনেক দিন বাসায় যেতে পারি না বলে মামণি একটু অভিমান করে আছেন। মা দিবস উপলক্ষে মামণির জন্য তার পছন্দের কিছু জিনিস কিনেছি। এবার বাসায় যাওয়ার সময় সব যখন নিয়ে যাব তখন মামণির অভিমান ভেঙে যাবে এবং খুব খুশি হবেন।

মা পৃথিবীতে সবচেয়ে কাছের মানুষ। মায়ের চেয়ে আপন আর কেইবা হতে পারে এ পৃথিবীতে। প্রতিটি সন্তানের কাছে মা যেন পৃথিবী। সেই জন্ম থেকে হামাগুড়ি দেওয়া, আছাড় খাওয়া, হাঁটতে শেখা, একটু করে বুঝতে পারা ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকেন মা। এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে আস’াশীল মানুষটিও মা। অনেক অসুস’তায় যার দিকে তাকালে প্রাণ ফিরে আসে সেই মানুষটি মা। মা যখন গভীর মমতায় মাথায় হাত বোলান তখন মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আর কেউ নেই আমি ছাড়া। জীবনের অনেক কঠিন সময় মায়ের একটু আদরে যেন সব কিছু সহজ হয়ে যায়। ভুলে যাওয়া যায় পুরনো যত গ্লানিময় দুঃখ-কষ্ট।

‘আমার মা অবসরে অনেক বই পড়েন, মাঝে মধ্যে কবিতা আবৃত্তি করেন। তাই আমার কাছে মা গল্প, গান ও কবিতার মতো সুন্দর। মায়ের জন্য আমি তার প্রিয় লেখকের কয়েকটি বই কিনেছি। আমি জানি, উপহার হিসেবে ওই বইগুলো পেয়ে আমার মা খুশিতে কতটা ঝলমল করে উঠবেন’- এমন করেই আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন সিনথিয়া।

সেই ছোটবেলা থেকে বড়বেলা পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের কত হাজার হাজার গল্পই না জমা থাকে। গল্পগুলো যেন গভীর যত্নে স্মৃতিতে লালিত। তাই সন্তানরা অনেক বড় হওয়ার পরও স্মৃতিতে এ পর্যন্ত কত ঝলমলে, উজ্জ্বল ও জীবন্ত! সব মা বলতে পারেন তার সন্তানদের সেই জন্মের পর থেকে হাজারো মুহূর্তের কথা, তাদের ছেলেবেলার কথা। গল্প করতে করতে তার চোখের তারা জ্বলে ওঠে, বলতে থাকেন সন্তানদের আধো আধো কথা বলা, প্রথম মা ডাকা, অনেক দুষ্টুমি ও হাজারো খুনসুটির কথা। এভাবেই এক ছেলে ও এক মেয়ের ছোটবেলায় সেই ঘরময় ছোটাছুটি এবং তাদের পড়াশোনা, সাফল্যের আনন্দময় ক্ষণের কথা বলতে গিয়ে চোখে পানি চলে আসে সফল মা রাবেয়া বেগমের। ছেলেমেয়েরা এখন তার উচ্চতর পড়ালেখার জন্য দেশের বাইরে। তিনি বলেন, প্রতিদিনই ফোনে কথা হয় তাদের সঙ্গে। কথা বলার সময় মায়ের গলায় কান্না আটকে থাকে। তা বুঝতে পারে সন্তানরাও। তারা মাকে বোঝায়- মা, একটু ধৈর্য ধরো। বলে, কাজ শেষ হলেই চলে আসব মা। তিনি জানেন এবারও বিশ্ব মা দিবসে তারা অনেক গিফট পাঠাবে মায়ের জন্য। এসব উপহারে মায়ের প্রাণ কি ভরে? মায়ের দু’চোখ যে তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে শুধু তাদের দেখার জন্য!

কথা হয় আরও এক মমতাময়ী মা সুলতানা হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিনটি সন্তান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, আমার সম্পদ, আমার সব কিছু। আমার ফুল খুব পছন্দ বলে মা দিবসে তারা আমাকে অনেক অনেক ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। আমার ঘর ভরিয়ে দেয় ফুলে ফুলে। আমি সারা জীবন আল্লাহতায়ালার কাছে শুধু তাদের সুখ, সাফল্য কামনা করি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জীবনে আর চাওয়া নেই।’

ইতু, সাবা, মাইম, তানভীর, মুন, ফাহিমরা বন্ধু। সবাই তাদের মাকে অনেক ভালোবাসে। মাইম জানায়, প্রতিদিন ঘুম থেকে চোখ খুলে তার মাকে আগে দেখতে চায়। সে চায় দিনটি শুরু হোক তার সবচেয়ে প্রিয় মুখটি দেখে। ‘আমার মাকে সব সময় খুব খুশি দেখতে চাই, কখনও মায়ের চোখে পানি দেখতে চাই না’- এভাবেই বলে ছোট্ট মেয়ে ইতু। মা ও সন্তান দুটি ভিন্ন দেহে যেন একটি মন-প্রাণ। সন্তানের হাসি, মায়ের মুখে হাসি। সন্তানের চোখের জলে বুক ভেসে যায় মায়ের। মায়ের ঋণ কখনও শোধ হওয়ার নয়। মাকে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা যায়। তাই চিৎকার করে এ পৃথিবীকে জানিয়ে দিই, ‘শোনো মা, তোমাকে খু-উ-ব ভালোবাসি।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ